জিনঘটিত বিরল রোগ স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফি (এসএমএ) নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে অনবরত প্রচারের ফলে সমাজের সব স্তরে সচেতনতা বাড়ছে। এমনটাই মনে করা হয়েছিল। অথচ, বাবা-মা সমস্যা আঁচ করা সত্ত্বেও রোগ নির্ণয়ে দেরির কারণে বিপর্যস্ত একটি পরিবার। সেই খবর সামনে আসতেই প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি চিকিৎসকদের মধ্যেই এখনও সচেতনতার প্রসার ঘটেনি?
রাজারহাটের বাসিন্দা, তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী দম্পতির প্রথম সন্তান কাশভি এক বছর বয়সে হামাগুড়ি দিতে বা টলমল পায়ে দাঁড়াতে শিখছিল। কিন্তু কেশব কুণ্ডু ও তাঁর স্ত্রী রেখা কুণ্ডু লক্ষ করেন, দাঁড়াতে গেলে গোড়ালি বেঁকে যাচ্ছে মেয়ের। দেরি না করে শিশুটিকে অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান তাঁরা। চিকিৎসক ফ্ল্যাট ফুটের চিকিৎসা শুরু করে দিনে ২০ ঘণ্টা বিশেষ জুতো পরার পরামর্শ দেন। সেই সঙ্গে তিনি জানান, চিন্তার কিছু নেই।
চিকিৎসায় শিশুটি সাড়া না দেওয়ায় ডাক্তার বদলান কেশবেরা। তাতেও লাভ না হওয়ায় ফের ডাক্তার বদলান। এক চিকিৎসকের কথায় কাশভির অকুপেশনাল থেরাপি শুরু হয়। তার ফলে দেওয়াল ধরে চলতে শিখলেও কেশব বুঝতে পারছিলেন, মেয়ে বসা অবস্থা থেকে দাঁড়াতে জোর পাচ্ছে না। ফলে, গভীর সমস্যা রয়েছে বলে সন্দেহ হয় দম্পতির। তৃতীয় ডাক্তারের চিকিৎসাতেও কাজ না হওয়ায় তিনি স্নায়ুরোগ চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
তত দিনে দম্পতির কোলে দ্বিতীয় সন্তান আসার খবর এসেছে। তাঁরা কাশভির চিকিৎসা শুরু করারও দেড় বছর পরে জানতে পারেন, দু’বছর আট মাসের শিশুটির রোগের নাম। ফোনে কেশব জানালেন নিজেদের অসহায়তার কথা। চলতি বছরের জুনে মেয়ের বিশেষ রক্তপরীক্ষা হয়। তার দিন ২০ পরে রিপোর্ট পেলে জানা যায়, স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফি (এসএমএ) টাইপ টু-তে আক্রান্ত কাশভি। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে দম্পতির। রোগ নিয়ে পড়াশোনা করে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে জানেন তাঁরা।
শুরু হয় কাশভিকে নিয়ে দৌড়ঝাঁপ। কখনও বেঙ্গালুরুর ব্যাপটিস্ট হাসপাতাল, কখনও দিল্লির এমসে ছুটছেন দম্পতি। তাঁরা জেনেছেন, এই রোগের আধুনিক চিকিৎসা জিন থেরাপির জন্য ইনজেকশন নিলে রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তবে, ইনজেকশন পেতে রোগীর বয়স ও ওজন সংক্রান্ত কিছু শর্ত আছে। সে সব ছাড়াও বিপুল ব্যয়ের এই চিকিৎসা তাঁদের নাগালের বাইরে। এর জন্য অন্তত ন’কোটি টাকা তাঁদের দরকার।
এ সবের মধ্যে এমস-এর চিকিৎসকের পরামর্শে ছোট মেয়ে, দু’মাসের আরোভীরও রক্তের বিশেষ পরীক্ষা হয়। সপ্তাহ তিনেক পরে জানা যায়, সে-ও এসএমএ-তে আক্রান্ত। তার রোগের প্রভাব আরও ভয়াবহ। এসএমএ টাইপ ওয়ানে আক্রান্ত সে। বিনা চিকিৎসায় সাধারণত টাইপ ওয়ান রোগীর আয়ু দু’বছরের কম।
এমস প্রেসক্রিপশনে জানিয়েছে, কাশভি ও আরোভী— দুই বোনের শরীরে জিন থেরাপির প্রয়োগ সম্ভব। একই মত ব্যাপটিস্ট হাসপাতালেরও। এ দিকে, শ্বাসকষ্ট থাবা গাড়ছে ছোট্ট কাশভির দেহে। আর দু’মাসের আরোভির রোগের লক্ষণ বলতে ঘুমের মধ্যে নিয়মিত বমি করা।
কেশব ও রেখা দুই মেয়ের চিকিৎসার জন্য ১৮ কোটি টাকার বিপুল খরচ তুলতে সকলের সাহায্য চাইছেন। দু’টি অনলাইন ক্রাউড ফান্ডিং সংস্থার মাধ্যমে আবেদন করা হচ্ছে কাশভি ও আরোভী কুণ্ডুর চিকিৎসার জন্য। সেখানেই দেওয়া রয়েছে চিকিৎসার যাবতীয় নথিপত্র। সকলের কাছে দম্পতির আবেদন, প্রত্যেকে যদি সাধ্যমতো এগিয়ে আসেন, তাঁদের দুই সন্তান স্বাভাবিক জীবন পেতে পারে। তাঁদের পাশে থাকার জন্য যোগাযোগের নম্বর ৭৫০১৪৯৬৫৪৫ (কেশব কুণ্ডু)।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)