Advertisement
E-Paper

হামলা হলে রোখার প্রশিক্ষণ এবার ডাক্তারদের

ব্রুস লি-র ভক্ত হাসপাতালের ডেপুটি সুপার। হাতে ‘কিক প্যাড’ ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে বয়স্ক ডাক্তার থেকে শুরু করে তরুণী ডাক্তারি পড়ুয়া। কেউ প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস করে, কেউ আবার অস্ত্রোপচার সেরেই চলে এসেছেন।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৭ ০২:২৭

ব্রুস লি-র ভক্ত হাসপাতালের ডেপুটি সুপার। হাতে ‘কিক প্যাড’ ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে বয়স্ক ডাক্তার থেকে শুরু করে তরুণী ডাক্তারি পড়ুয়া। কেউ প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস করে, কেউ আবার অস্ত্রোপচার সেরেই চলে এসেছেন। চোয়াল শক্ত, চোখ লক্ষ্যে। গরম-ঘামের পরোয়া না-করে তাঁরা সপাটে ‘কিক’ মারছেন সেই প্যাডে। ভুল হলে ডেপুটি সুপারই দেখিয়ে দিচ্ছেন লাথি মারার কায়দা। তার পরে ‘পাঞ্চ’। মুঠিবদ্ধ হাত সজোরে ছুড়ে দিচ্ছেন তাঁরা।

১ মার্চ এনআরএসে শুরু হয়েছে কোরীয় মার্শাল আর্ট তাইকোন্ডো-র প্রশিক্ষণ! মাস্টারমশাই বছর পঁয়তাল্লিশের ডেপুটি সুপার দ্বৈপায়ন বিশ্বাস। চিকিৎসক, আবার তাইকোন্ডো-র গোল্ড মেডেলধারী। বুধবার আর শুক্রবার অ্যাকাডেমিক ভবনের একতলায় ক্লাসে তিল ধারণের জায়গা থাকে না। এক মাসেই শিক্ষার্থী ১০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। শরীর তৈরির পাশাপাশি শিখছেন আক্রমণকারীকে রুখে দেওয়ার কৌশল।

চিকিৎসকদের উপরে হামলা নিয়ে প্রায় রোজই ডাক্তারদের মিছিল, প্রতিবাদ সভা চলছে। তাঁরা ক্ষুব্ধ, শঙ্কিত। খোদ মুখ্যমন্ত্রীও আইন হাতে তুলে নেওয়া থেকে মানুষকে বিরত থাকতে বলেছেন। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের শুভ বুদ্ধির উপরে আর আস্থা রাখতে না পেরেই কি চিকিৎসকেরা পাল্টা মারের পদ্ধতি শিখছেন?

আরও পড়ুন:ফেসবুকেও বিদ্বেষ-বিষ

শিক্ষক দ্বৈপায়নবাবু ও তাঁর ছাত্রছাত্রীরা জানান, তাঁরা চিকিৎসক। তাই মারামারিতে তাঁদের আগ্রহ নেই। বরং মারামারির পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হতে পারে বা হলেও প্রথম অবস্থাতেই তা থামিয়ে দেওয়া যায়, তার জন্যই এই তাইকোন্ডো প্রশিক্ষণ।

কেউ হয়তো এসে জামার কলার চেপে ধরে হুমকি দিতে লাগলেন। ধস্তাধস্তি বা মারামারি না করে তাইকোন্ডোতে শুধু হাতের সামান্য কায়দায় কলার ছাড়িয়ে নেওয়া যায়। কেউ কব্জি শক্ত করে ধরলে তাঁকে আঘাত না করেই হাতের প্যাঁচে কব্জি ছাড়ানো যায়। দ্বৈপায়নবাবুর ব্যাখ্যায়, ‘‘তাইকোন্ডো ‘মাইন্ডগেম’। চিন্তাশক্তি এবং আত্মশক্তিকে বাড়ায়। জটিল পরিস্থিতি কী ভাবে এড়ানো যায় এবং কী ভাবে মাথা ঠান্ডা রেখে, ধৈর্য ধরে কথা বলে প্রতিপক্ষকে বোঝানো যায়, সেটাই এর প্রধান কথা।’’

এমবিবিএস-এর ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি ফরেন্সিকের সুপর্ণা দত্ত, অ্যানাটমির সুষুণ্মা বিশ্বাস, পারমিতা মুখোপাধ্যায়, মাইক্রোবায়োলজির রণদীপ ঘোষ, শিবশেখর চট্টোপাধ্যায়ের মতো চিকিৎসকদের অনেকেই ব্যস্ততার মধ্যেও ক্লাস মিস করেন না। সুপর্ণাদেবীর কথায়, ‘‘তাইকোন্ডো করে শরীর চাঙ্গা থাকছে, মানসিক চাপ কমছে, ধৈর্য, আত্মনিয়ন্ত্রণ বাড়ছে। আপনা থেকে রোগী ও রোগীর বাড়ির লোকের সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে। সংঘাতের পরিস্থিতিই আসছে না।’’ স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, সমস্ত মেডিক্যাল কলেজে মার্শাল আর্ট ও ধ্যানের আলাদা ক্লাস যোগ করতে কাজ শুরু হয়েছে। কিক আর পাঞ্চে চিকিৎসক-রোগীর মধ্যে অবিশ্বাস উড়িয়ে দিতে তাঁরা বদ্ধপরিকর।

Physical Training Hospital attack
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy