Advertisement
E-Paper

বিবাদের জের, কুকুরকে ‘নির্যাতন’ শখেরবাজারে!

মারের চোটে ডান পা ভেঙে গিয়েছে। বাঁ চোখ খুবলে নেওয়া হয়েছে। মাথা ফেটে রক্ত ঝ়রছে। গোটা গাড়ি বারান্দা জুড়ে চাপচাপ রক্ত। সেখানেই এক কোণে জড়োসড়ো হয়ে বসে রয়েছে বছর ছয়েকের ভুতো। তাকে উদ্ধার করতে আসা আবাসনের বাসিন্দাদের দেখেও ভয়ে কেঁপে কেঁপে উঠছে সে!

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৮ ০০:২৫
নির্মম: এ ভাবেই মারধর করা হয়েছে কুকুরটিকে। নিজস্ব চিত্র

নির্মম: এ ভাবেই মারধর করা হয়েছে কুকুরটিকে। নিজস্ব চিত্র

মারের চোটে ডান পা ভেঙে গিয়েছে। বাঁ চোখ খুবলে নেওয়া হয়েছে। মাথা ফেটে রক্ত ঝ়রছে। গোটা গাড়ি বারান্দা জুড়ে চাপচাপ রক্ত। সেখানেই এক কোণে জড়োসড়ো হয়ে বসে রয়েছে বছর ছয়েকের ভুতো। তাকে উদ্ধার করতে আসা আবাসনের বাসিন্দাদের দেখেও ভয়ে কেঁপে কেঁপে উঠছে সে!

পুজো শেষের বিষাদের মধ্যে একটি ভিডিয়োয় একাদশীর রাতে একটি কুকুরকে মার খেতে দেখে ঝড় উঠেছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে। বেহালা শখেরবাজারের এই ঘটনায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা পশু অধিকার রক্ষা আন্দোলনে যুক্ত মেনকা গাঁধীকে। তৎপর হয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক তথা পশু অধিকার রক্ষা কর্মী দেবশ্রী রায়ও। ২২ অক্টোবর এ নিয়ে ঠাকুরপুকুর থানায় দু’জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। পুলিশ অবশ্য কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি। অভিযুক্তদের এক জন থানায় হাজিরা দিয়ে জামিন পেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। ওই থানার এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন,

‘‘তদন্ত চলছে। কারও দোষ থাকলে শাস্তি হবে।’’

জানা গিয়েছে, শখেরবাজারের একটি আবাসনে থাকেন প্রান্তিক চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর মা মুন্নাদেবী। প্রান্তিক একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। সেই সঙ্গে তিনি পশু অধিকার আন্দোলনেও যুক্ত। ভুতো-সহ এলাকার বেশ কয়েকটি পথকুকুরকে খাওয়াতেন তিনি। ওই একই আবাসনের বাসিন্দা, এক আত্মীয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের বিবাদ চলছিল। সেই বিবাদের জেরেই নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নামে ওই আত্মীয় ভুতোকে ধরে বেধড়ক মেরেছেন বলে অভিযোগ প্রান্তিকের। তাঁর কথায়, ‘‘ভুতোকে মেরে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। এর আগে মেরে ওর পিছনের দু’টো পা ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। এ বার তুলে এনে দরজা বন্ধ করে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে, চোখও খুবলে নেওয়া হয়েছে।’’

প্রান্তিকের অভিযোগ, গত শনিবার রাত দেড়টা নাগাদ আবাসনের বারান্দা থেকে একটি কুকুরের প্রবল চিৎকার শুনতে পান তিনি। তাঁর অভিযোগ, গিয়ে দেখা যায়, নীলাদ্রি একটি বাঁশ দিয়ে কুকুরটিকে বেধড়ক মারছেন। কুকুরটির মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে দেখেও তিনি থামছেন না। প্রান্তিকের অভিযোগ, ‘‘মারের চোটে এক সময় আর নড়তেও পারছিল না ভুতো। রক্তে ভেসে যাচ্ছিল চারপাশ। তার পরেও উনি মুখে বাঁশ দিয়ে মারেন। তাতে ভুতোর বাঁ চোখটা খুলে বেরিয়ে এল।’’ এর পরে প্রান্তিকেরা কুকুরটিকে নিয়ে স্থানীয় একটি পশু হাসপাতালে যান। সেখানে চিকিৎসার পরে এখন দক্ষিণ কলকাতার একটি পশু হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ভুতো। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মারের চোটে কুকুরটির সামনের একটি পা ভেঙে গিয়েছে। চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। চোট রয়েছে মাথার ভিতরেও।

ওই আবাসনের বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রান্তিক এবং নীলাদ্রির বিবাদের জেরে আগেও রাস্তার কয়েকটি কুকুরকে মার খেতে হয়েছে। পুলিশে জানিয়ে কোনও লাভ হয়নি। আবাসনের এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘পুলিশ কিছুই করতে চায়নি। এ বারেও প্রথমে অভিযোগ নিচ্ছিল না।’’ এ ব্যাপারে লালবাজারের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে স্পষ্ট আইন রয়েছে। ঠাকুরপুকুরের ঘটনাতেও নির্দিষ্ট ধারায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে আরও সচেতনতা প্রয়োজন।’’

বিধায়ক দেবশ্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ভাবলে অবাক লাগে, মানুষ কোন পথে চলেছে? এ ভাবে কেউ অবলা জীবকে মারতে পারে?’’

Dog Torture Sakher Bazar Investigation Arrest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy