Advertisement
E-Paper

ছাড়া পেয়েও মালিক ফেরেননি, ঘরবন্দি সেই পোষা কুকুরেরা

জামিন পেয়ে গিয়েছেন বুধবার বিকেলে। তবে থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত অবশ্য বাড়ি ফেরেননি ঠাকুরপুকুরের ঘটনায় ঘাতক কুকুরের মালিক সুমিত ভট্টাচার্য।

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:০০

জামিন পেয়ে গিয়েছেন বুধবার বিকেলে। তবে থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত অবশ্য বাড়ি ফেরেননি ঠাকুরপুকুরের ঘটনায় ঘাতক কুকুরের মালিক সুমিত ভট্টাচার্য।

অনেক কষ্টে এ দিন সন্ধেবেলায় এক বারের জন্য ফোনে পাওয়া গিয়েছিল তাঁকে। বারবার বলা সত্ত্বেও কুকুর দু’টিকে কেন ছেড়ে দিলেন? একটি ছেলে ভয় পেতে পেতে পাঁচিলের দিকে পিছিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও কুকুরটিকে ডেকে নিলেন না কেন? প্রশ্নের উত্তরে সুমিত ফোনে বললেন, ‘‘ইচ্ছে করে কিছুই করিনি। যা বলার, আমার উকিল বলবে।’’

তাঁরই কুকুরের তাড়া খেয়ে ঠাকুরপুকুরের ‘দীপ্তিকণা’ আবাসনের ছাদ থেকে পড়ে আঠেরো বছরের গৌরব পুরকাইতের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে বছর চল্লিশের সুমিতের বিরুদ্ধে। সুমিত শিক্ষকতা করেন। স্ত্রী চাকরি করেন কলকাতার বাইরে। ঠাকুরপুকুরের ওই ফ্ল্যাটে দুই অ্যালসেশিয়ানকে নিয়ে একাই থাকেন সুমিত।

হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত সুমিতের গত নভেম্বরে বাইপাস সার্জারি হয়েছে বলে নিজেই এ দিন জানান। সে কারণে এ দিন ফোনে বেশিক্ষণ কথা বলতেও চাননি। শুধু বলেন, ‘‘চোখের সামনেই পড়ে গেল ছেলেটা, এখনও ট্রমায় আছি। ওকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছি আমিই।’’

মঙ্গলবার রাতে তাঁর দুই পোষ্য কুট্টুস ও মিঠিকে নিয়ে ছাদে উঠে তাদের ছেড়ে দেন সুমিত। অভিযোগ, সেখানে উপস্থিত দুই এসি-মিস্ত্রি গৌরব ও তাঁর কাকা তরুণ পুরকাইত বারণ করা সত্ত্বেও তিনি শোনেননি। অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে।

বৃহস্পতিবার আরও এক অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার রাতের দুর্ঘটনার পর থেকে একা একা ফ্ল্যাটবন্দি হয়ে রয়েছে কুট্টুস ও মিঠি। বাইরের গেটে তালা, ভেতরের কাঠের দরজা ভেজানো। দরজা ঠেলতেই ছুটে আসছে দু’টি কুকুর। বুধবারের সেই তেজ উধাও। যে প্রতিবেশীরা দীর্ঘদিন সুমিতের কাছে অভিযোগ জানিয়ে এসেছিলেন এই কুকুর দু’টির বিরুদ্ধে, তাঁরাই দুই পোষ্যের দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছেন। আবাসনের প্রেসিডেন্ট শ্যামলকুমার বসু বলেন, ‘‘আমরাই লোহার গেটের বাইরে থেকে ওদের খাবার আর জলের ব্যবস্থা করেছি। ওদের তো কোনও দোষ নেই।’’

প্রশ্ন উঠেছে, বুধবার সন্ধ্যায় জামিন পেয়েও কেন বাড়ি ফিরলেন না সুমিত? তিনি তো জানতেন, তিনি ছাড়া পোষ্যেদর দেখার কেউ নেই। এ দিন এই প্রশ্নের সদুত্তর তাঁর কাছে মেলেনি।

মঙ্গলবারের ওই দুর্ঘটনার জন্য কুকুরদের সরাসরি দায়ী করা যায় না বলে প্রতিবেশীদের মত। একই মত পশুপ্রেমী বা প্রশিক্ষক মহলের। সকলেই একবাক্যে জানিয়েছেন মালিক সচেতন ছিলেন না বলেই এমনটা হয়েছে। অভিযোগ, গৌরব ভয় পাওয়া সত্ত্বেও কুকুরটিকে বাধা দেননি সুমিত। তাঁর দায়িত্বহীনতার শাস্তি কুকুর দু’টির ওপর চাপানো ঠিক নয় বলেই মনে করেন প্রতিবেশীরা। ‘‘ওরা তো আক্রমণের উদ্দেশে নয়, স্বভাবগত কারণেই অচেনা মানুষ দেখে ঝাঁপিয়েছে। ওদের কী দোষ?’’— বললেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী।

ঘটনায় ভেঙে পড়েছে দীপ্তিকণা আবাসনের চারতলার বাসিন্দা তাপস ঘোষালের গোটা পরিবার। তাঁদের বাড়িতে এসি বসাতে গিয়েই ঘটে গিয়েছে এই দুর্ঘটনা। কাজ শেষ করতে রাত হয়ে গিয়েছিল এবং কাজ শেষ করার জন্য তাঁদের উপরে চাপ দেওয়া হয়েছিল বলে বুধবার তাপসবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন গৌরবের কাকা তরুণ। সে প্রসঙ্গে তাপসের স্ত্রী পুতুলদেবী বলেন, ‘‘কাজটা রাতেই হয়ে যাক, চেয়েছিলাম আমরা। কোনও জবরদস্তির ব্যাপার ছিল না।’’

মঙ্গলবার রাতে সুমিতের সঙ্গে তাপসকেও পুলিশ গ্রেফতার করে পরে জামিনে মুক্তি দেয়। প্রাথমিক ভাবে অভিযোগ উঠেছিল, জোর করে কাজ করানোর হুমকি দিয়ে সুমিতের কুকুর দু’টিকে ছাদে পাঠিয়েছিলেন তাপসই। এ দিন ফোনে তাপস বলেন, ‘‘এই অভিযোগ ঠিক নয়। ঘটনার সময়ে আমি ছিলামই না। ছোট মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারখানায় গিয়েছিলাম।’’

উল্টে তাঁর আফশোস, তিনি ছাদে থাকলে হয়তো দুর্ঘটনাটি ঘটতো না। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘কাজ তো হয়েই গিয়েছিল। আমি থাকলে হয়তো আগেই টাকা মিটিয়ে দিতে পারতাম। হয়তো ছাদে থাকলে কুকুরটাকেও আটকাতে পারতাম।’’ তাঁর বাড়ির নতুন এসি লাগানোকে উপলক্ষ করে আঠেরো বছরের একটি ছেলের প্রাণ চলে গেল, মেনে নিতে পারছেন না তিন সন্তানের বাবা তাপস। তিনি বলেন, ‘‘মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিল গৌরব। ওর পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করব।’’

সুমিত জামিন পেয়ে যাওয়ায় গৌরবের পরিবারের তরফে ক্ষোভ রয়েছে। ‘‘উনি তো ইচ্ছে করে করলেন এমনটা। কোনও শাস্তি হবে না?’’— প্রশ্ন গৌরবের কাকা তরুণবাবুর। তাঁরই চোখের সামনে কুকুরের আক্রমণের মুখে ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছিলেন গৌরব। বিচার পেতে প্রয়োজনে আদালতে যাবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

Dog Bail police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy