Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ডুবন্তকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন ত্রাতা দুই ভাই

গঙ্গায় তখন জেগে রয়েছে এক কিশোরীর চুলের ঝুঁটিটুকু। সময় নষ্ট না করে ঝাঁপ দেন তিনি। ওই ঝুঁটি ধরে তুলতে গিয়ে দেখেন, মেয়েটির হাত ধরে রয়েছেন এক যুবক। চুল ধরে টানতেই পেয়ে যান ছেলেটিরও হাত। দু’হাতে দু’জনের চুল ধরে টেনে তুলতেই ছুটে আসেন দাদা মনোজ এবং আরও লোকজন। সকলে মিলে দু’জনকে উপরে তুলে একটু সুস্থ করার পরে পাঠিয়ে দেন তাঁদের বাড়ি।

ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছেন মনোজ (বাঁ দিকে) ও সরোজ। নিজস্ব চিত্র

ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছেন মনোজ (বাঁ দিকে) ও সরোজ। নিজস্ব চিত্র

দীক্ষা ভুঁইয়া
শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৮ ০০:২৮
Share: Save:

ব্যস্ত ছিলেন চায়ের দোকানে। হঠাৎ মাসির চিৎকার—‘‘সরোজ, ডুবে গেল রে, তাড়াতাড়ি আয়।’’

এক মুহূর্ত দেরি না করে চক্ররেলের লাইন পার করেই বছর বিয়াল্লিশের সরোজ চৌধুরী দেখেন, গঙ্গায় তখন জেগে রয়েছে এক কিশোরীর চুলের ঝুঁটিটুকু। সময় নষ্ট না করে ঝাঁপ দেন তিনি। ওই ঝুঁটি ধরে তুলতে গিয়ে দেখেন, মেয়েটির হাত ধরে রয়েছেন এক যুবক। চুল ধরে টানতেই পেয়ে যান ছেলেটিরও হাত। দু’হাতে দু’জনের চুল ধরে টেনে তুলতেই ছুটে আসেন দাদা মনোজ এবং আরও লোকজন। সকলে মিলে দু’জনকে উপরে তুলে একটু সুস্থ করার পরে পাঠিয়ে দেন তাঁদের বাড়ি।

যদিও তত ক্ষণে খবর পৌঁছে গিয়েছিল উত্তর বন্দর থানায়। পুলিশ এসে পৌঁছনোর আগেই যুগল ঘটনাস্থল ছেড়েছেন। ফলে পুলিশও ফেরত আসে থানায়। বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর বন্দর থানা এলাকার কাশী মিত্র শ্মশানঘাট সংলগ্ন গোলাবাড়ি ঘাটে।

এর এক ঘণ্টা পরেই একই জায়গায় স্নান করতে নেমে তলিয়ে যাচ্ছিলেন বছর পঞ্চাশের এক প্রৌঢ়। এ বার ঘাটের কাছেই ছিলেন মনোজ। তিনি দেখেন, হাবুডুবু খাচ্ছেন এক প্রৌঢ়। ফের গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে টেনে তুলে আনেন ওই প্রৌঢ়কে।

কী করে ডুবে যাচ্ছিলেন ওই যুগল? দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা মিলল সরোজ এবং মনোজের। গঙ্গার পাড়েই তাঁদের বাড়ি। বাবা এক সময়ে গঙ্গায় নৌকা নিয়ে ইলিশ মাছ ধরতেন। কেউ আর সে কাজ করেন না। চার ভাইয়ের মধ্যে মনোজ বড় এবং সরোজ মেজ। মনোজ জানালেন, ছেলেটির বয়স ছিল বড়জোড় ২০ আর মেয়েটি ১৭-১৮। দু’জনেই ঘাটের ঢালে একটি গাছের তলায় বসেছিলেন। পরে তাঁরা দু’জনেই গঙ্গার দিকে পিছন ঘুরে সেলফি তুলছিলেন। আর তখনই কোনও ভাবে মোবাইলটি পড়ে যায় হাত থেকে। সেটি কুড়োতে গিয়ে নিচু হয়েছিল কিশোরী। তার এক হাত ধরেছিলেন ছেলেটি। দু’জনেই টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যান গঙ্গায়।

তখন ঘাটের ধারেই ছিলেন অনিতা মণ্ডল নামে এক মহিলা। জলে কিছু পড়ার আওয়াজ শুনে তিনি দেখেন, গঙ্গায় দু’জন হাবুডুবু খাচ্ছেন। তা দেখেই ডাক দেন সরোজকে।

স্থানীয়দের বক্তব্য, শুধু এ দিন নয়। রোজই ওখানে এক-দু’জন করে এমন জলে পড়ে যান কিংবা স্নান করতে নেমে তলিয়ে যান। সরোজ কিংবা মনোজ দেখতে পেলেই ওঁদের বাঁচান।

সরোজ অবশ্য এ জন্য কোনও কৃতিত্ব নিতেই রাজি নন। তাঁর কথায়, ‘‘দোকান খোলা ছিল। তাই দু’জনকে জল থেকে তুলেই চলে এসেছি। বাকিরা ওঁদের বাড়ি পাঠিয়েছেন।’’ যদিও গঙ্গার ধারে ঘুরতে এসে কেন যে বেশির ভাগই ঢালে গিয়ে বসেন, তার কারণটা অজানা সরোজের কাছে। দুই ভাইয়ের কথায়, ‘‘সাঁতার জানতেন না ওঁরা। গঙ্গায় তখন টান ছিল। একটু দেরি হলে বাঁচানো সম্ভব হত না। ভাগ্য ভাল ছিল, তাই বাঁচানো গিয়েছে।’’

এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, পরপর দু’টি দুর্ঘটনার পরেও হুঁশ ফেরেনি। একাধিক যুগল ওই বাঁধানো পাড়ের ঢালে বসে রয়েছেন। কেউ আবার মোবাইল, ক্যামেরা নিয়ে ওই ঢালে দাঁড়িয়ে ছবিও তুলছেন।

মনোজ জানালেন, পুলিশ টহল দেয় ঠিকই। তবে যাঁরা আসেন, তাঁদেরও তো সচেতন থাকা উচিত। এ দিনের ঘটনার কথা স্বীকার করেছে উত্তর বন্দর থানার পুলিশও। তারাই জানান, মনোজ-সরোজের একাধিক লোকের জীবন বাঁচানোর এই কাহিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Drown River Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE