Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Footpath Girl

ফুটপাত-কন্যের কণ্ঠে পুজোর থিম সং

বিক্রি করেন। দ্বিতীয় শ্রেণির পরে আর পড়া হয়নি পায়েলের। মিঠু দাসের কথায়, ‘‘ছোট থেকেই তো শুধু গান।

পায়েল দাস। নিজস্ব চিত্র

পায়েল দাস। নিজস্ব চিত্র

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২০ ০২:১৩
Share: Save:

সিগন্যালে থমকালেই একগোছা গোলাপ নিয়ে গাড়ির কাচে টোকা মারে সে। কখনও কোনও আরোহী কাচ নামিয়ে গোলাপ কিনলে, শুনতে পান গুনগুন করছে মেয়ে।লম্বা, শীর্ণকায় বছর পনেরোর সেই মেয়েটির ঠিকানা শিশির মঞ্চের সামনের ফুটপাত। নাম পায়েল দাস।

১১ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পরে পায়েল-সহ পাঁচ ছেলেমেয়েকে নিয়ে মেদিনীপুরের খেজুরি ছেড়ে ওই ফুটপাতেই আশ্রয় নিয়েছিলেন মা মিঠু দাস। টলমল পায়ে হাঁটতে শেখা পায়েল তখন থেকেই ঘুরঘুর করত নন্দন চত্বরে। গানমেলার গান টানত তাকে। মঞ্চের শিল্পীদের গান শুনে গুনগুন করত।

এখন সেই মেয়ের খোলা গলায় বাউলের সুর খেলে। একবার শুনলেই শক্ত মুখরা স্বচ্ছন্দে গেয়ে ফেলে। গ্রামের বাচ্চাদের তৈরি প্রতিমা নিয়ে এ বার চেতলার ফুটপাতে যে ছোট্ট পুজোর আয়োজন হয়েছে, তার থিম সং গেয়েছে পায়েল। তারও আগে মোহরকুঞ্জের জঙ্গলমহল উৎসবে, ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহিদ দিবসের মঞ্চে পায়েলের গান শুনে তার অনুরণন নিয়ে ফিরেছেন শ্রোতারা।

এখনও ফুটপাতে থাকে সে। সঙ্গে মা ও ছোটদাদা। বাকি দুই দাদা ও এক দিদি বিয়ে করে আলাদা থাকেন। ছোড়দা একটি দোকানে কাজ করেন। মা ফুল বিক্রি করেন আর কয়েকটি বাড়িতে কাজ করেন। ফুটপাতেই রান্না, শোয়া, ঘুম। ভোরে উঠে মা চলে যান হাওড়ায় ফুল আনতে। মা-মেয়ে মিলে সেই ফুল বিক্রি করেন। দ্বিতীয় শ্রেণির পরে আর পড়া হয়নি পায়েলের। মিঠু দাসের কথায়, ‘‘ছোট থেকেই তো শুধু গান। ফুলের ঝুড়ি নিয়ে বেরিয়ে চুপ করে বসে থাকত গানমেলার মঞ্চের সামনে। কখনও বসে পড়ত পথচলতি বাউলের গান শুনতে। তাড়া মেরে পাঠাতাম ফুল বিক্রি করতে।’’

আরও পড়ুন: আজ মহাসপ্তমী, রাজ্যে পুজো শুরু, তবে ভিড় নয়

গায়িকা হতে চাও? লজ্জা আর জড়তা নিয়ে পায়েল বলে, ‘‘অভিনেত্রী হতে চাই। গানও করব। নন্দনে সিনেমা দেখি। গেটের কাকুরাই সিনেমা দেখার সুযোগ করে দেন। সিনেমা দেখে সেই গান পরে গাই।’’

ফুটপাতের গান (স্ট্রিট মিউজ়িক) নিয়ে কাজ করেন তীর্থ বিশ্বাস। নিজেও গান করেন। পায়েলকে সুযোগ দিতে চান তিনি। কিন্তু ফুটপাতে বেড়ে ওঠা মেয়ে, জীবিকাই যার মূল লক্ষ্য তাকে আলাদা করে তালিম দেওয়ার পথ যে মসৃণ নয়, সেটা তীর্থ জানেন। তিনি বলেন, ‘‘ও তখন ছোট, মঞ্চে গান করতে গিয়ে দেখেছিলাম চমৎকার ওর তাল জ্ঞান। গান শুনেই তুলে নেয়। কিন্তু ওই পরিবারের একটা ঠাঁই, দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের আশ্বাস দিতে না পারলে ওকে গানের তালিম দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।’’

এ দিকে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখতে আগ্রহী পায়েলের আক্ষেপ, “একটাই রবীন্দ্রসঙ্গীত পুরো গাইতে পারি — জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে, বন্ধু হে আমার, রয়েছ দাঁড়ায়ে...।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE