ফাইল চিত্র।
আগে গত বছরের ধার শোধ হবে, তার পরে এ বারের বাজেট!
দুর্গাপুজোর বাকি আর এক মাস। এখনও ধারের হিসাব কষেই সময় কাটছে বহু পুজো কমিটির। ধার মেটাতে কেউ গত বারের চেয়েও বাজেট কিছুটা কমিয়েছেন। কেউ আবার গত বারের মতোই জলসা, ভোগের আয়োজন বাতিল করেছেন। শহরের একাধিক ‘বড় পুজো’র জন্য বিখ্যাত উদ্যোক্তারাও এ বার স্রেফ নিয়মরক্ষা করতে চাইছেন!
দক্ষিণ কলকাতার সমাজসেবী সঙ্ঘের পুজোকর্তা অরিজিৎ মৈত্র বললেন, “গত বার মণ্ডপ দর্শকশূন্য রাখার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। তাই বহু বিজ্ঞাপনদাতা সরে যান। আমাদেরই ১০টা স্টল বাতিল হয়ে যায়। বাজেটের অনেকটা অংশই ওঠেনি। নিজেদেরই কোনও মতে সামাল দিতে হয়েছে। এ বার তাই বাজেট আগেই কমানো হয়েছে।” অরিজিৎবাবুর দাবি, পুজো ছোট করে সেই টাকা সমাজসেবায় খরচের পক্ষে তাঁরা।
টালা বারোয়ারির কর্মকর্তা অভিষেক ভট্টাচার্যের কথায়, “গত বছর ওই ডামাডোলেও ১০০তম বছর পালন করেছি। ফলে বাজেট ছাঁটতে পারিনি। এ বার তার প্রভাব তো পড়বেই। তাই কম বাজেটে পুজোর পরিকল্পনা করেছি।” জগৎ মুখার্জি পার্কের যুগ্ম সম্পাদক দ্বৈপায়ন রায়ও বললেন, “গত বছর যা হোক করে সামলেছি। এ বছর সেই ঘাটতি মেটাতে একেবারে ছোট করে পুজো করছি। বাজেট ১০ লক্ষও পেরোবে কি না সন্দেহ।”
বাগবাজার সর্বজনীন দুর্গোৎসব ও প্রদর্শনীর সাধারণ সম্পাদক গৌতম নিয়োগী আবার বললেন, “বাজেট কী হবে, তার থেকেও বড় প্রশ্ন, পুজোটা কী ভাবে হবে? লোকে ঠাকুর দেখতে পারবেন কি না, মণ্ডপে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে কি না, এই সংশয়গুলোই তো কাটছে না। আদালতে আবার জনস্বার্থ মামলা হবে না তো! স্পনসরেরাও মনে হয়, নিশ্চিত হয়ে এগোতে চাইছেন। তাই রেট নিয়েও সব চুপচাপ বসে রয়েছেন।” হিন্দুস্থান পার্ক সর্বজনীনের সাধারণ সম্পাদক তথা কোষাধ্যক্ষ সুতপা দাস আবার বললেন, “পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে স্পনসরেরা এমন টাকার কথা বলছেন, যাতে কাজ করানো যায় না। বহু পুজো অনেকটা কম বাজেট ঘোষণা করায় আরও সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন স্পনসরেরা। তাঁদের ধারণা, এত কমেই যখন পুজো হয়, বেশি টাকা দেব কেন!”
ত্রিধারা সম্মিলনীর উদ্যোক্তা দেবাশিস কুমার যদিও বললেন, “এ বার আর মানুষের কাছে পৌঁছনো নিয়ে ভাবছিই না। মানুষ আসুন চাই-ই না। গত বারের মতোই নমো নমো করে সবটা করব।” ‘বড় দুর্গা’ খ্যাত দেশপ্রিয় পার্কের উদ্যোক্তা সুদীপ্ত কুমারেরও দাবি, “করোনার মধ্যে এত আড়ম্বরেরই বা কী আছে! আমাদের ভাষা শহিদ মঞ্চেই একটা ঠাকুর বসিয়ে পুজো সারব।”
প্রতি বছর ভিড়ে টেক্কা দেওয়ার দৌড়ে থাকা শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের সম্পাদক দিব্যেন্দু গোস্বামী অবশ্য এ বারও আড়ম্বরেরই ইঙ্গিত দিলেন। থিম ‘বুর্জ খলিফা’। বললেন, “ভাল কাজে ঠিক লোক জুটে যায়। স্পনসরও পাওয়া যায়।” এ বার বাজেট নিয়ে জোর চর্চায় বড়িশা সর্বজনীনও। শহর জুড়ে তাদের প্রচার, ‘এ বার ৩০০ কোটির পুজো’। এই মন্দার পরিস্থিতিতে? উদ্যোক্তা তন্ময় চট্টোপাধ্যায় হাসতে হাসতে বললেন, “না না, আমাদের পুজোর বাজেট অনেক কম। এ আসলে থিমের চমক। যে সময়ের দুর্গাপুজো নিয়ে থিম, সেটা করতে তখন জমিদারের ন’লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল। এখন সেই ন’লক্ষ মানে তিনশো কোটি টাকা! তাই তিনশো কোটির পুজো!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy