E-Paper

হারিয়ে যাওয়া আড্ডা ফিরিয়ে আনছে বেহালা

চায়ের দোকান, নন্দন, ক্লাব, কফি হাউস পেরিয়ে পৌঁছতে হবে প্রতিমার কাছে। রয়েছে গঙ্গার ঘাটও।

মিলন হালদার

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:৩৭
বেহালা ক্লাবের পুজো মণ্ডপে ফুটে উঠছে নন্দন।

বেহালা ক্লাবের পুজো মণ্ডপে ফুটে উঠছে নন্দন। নিজস্ব চিত্র।

কফি হাউসের সেই আড্ডা ভেঙে গিয়েছে কবেই!

শুধু কি কফি হাউসের আড্ডা? বর্তমানে সমাজমাধ্যমের যুগে হারিয়ে যেতে বসেছে বাঙালির আড্ডা। কলকাতার আড্ডা। আড্ডা-সংস্কৃতির সেই নস্টালজিয়াকেই এ বার পুজোয় তুলে ধরছে বেহালা ক্লাব।

পটলডাঙার টেনিদা, প্যালা, হাবুল, ক্যাবলাদের মতো বাঙালি এখন আর রকে বসে আড্ডা দেয় না। চোখে পড়ে না পুজো মণ্ডপে আড্ডাও। বাঙালি এখন ফেসবুকে ‘চ্যাট’ করে। ইনস্টাগ্রামে ‘পোস্ট’ করে। করে ভিডিয়ো কল। কিন্তু এক সময়ে কলকাতার আড্ডার ‘ঠেক’ ছিল নন্দন, চায়ের দোকান, পাড়ার রক, কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউস, গঙ্গার ঘাটের মতো জায়গা। বিখ্যাত ব্যক্তিই হোন বা সাধারণ মানুষ— আড্ডাবাজ বাঙালি সেই সব জায়গায় বিভিন্ন বিষয়ে তর্কের তুফান তুলত। বাঙালির আড্ডা সংস্কৃতির এই সবপীঠস্থানকে ফুটিয়ে তুলছে বেহালা ক্লাবের পুজো।

চায়ের দোকান, নন্দন, ক্লাব, কফি হাউস পেরিয়ে পৌঁছতে হবে প্রতিমার কাছে। রয়েছে গঙ্গার ঘাটও। পুরো মণ্ডপটি করা হচ্ছে মাটি দিয়ে। ‘‘বাঙালির এই সব আড্ডায় থাকত স্বতঃস্ফূর্ততা। মিশে থাকত মাটির গন্ধ। দর্শকদের সেই স্বাদ দিতেই পুরো মণ্ডপটি মাটি দিয়ে করা হচ্ছে,’’— বলছেন শিল্পী কৃশানু পাল। তাঁর কথায়, ‘‘কলকাতার আড্ডার যে সংস্কৃতি ছিল, মোবাইল, সমাজমাধ্যমের দাপটে তা ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। আড্ডার সেই নস্টালজিয়াই তুলে ধরতে চাইছি।’’

বেহালা ক্লাবের এই পুজোর এ বার ৮১তম বর্ষ। থিম ‘মনচাষ’। পুজো কমিটির অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি সায়ন্তন ভট্টাচার্য জানান, আড্ডায় মনের উৎকর্ষ বাড়ে। তাই থিমের এমন নাম। তিনি বলেন, ‘‘বয়স্ক মানুষেরা, যাঁরা আড্ডা মারতেন, তাঁরা পুজো মণ্ডপে এলে সেই পুরনো দিনে ফিরে যাবেন। আর তরুণ প্রজন্ম ফেসবুক, ওয়টস্যাপের বাইরে প্রাণখোলা আড্ডা কেমন ছিল, তার স্বাদ পাবে।’’

বেহালা ২৯ পল্লির পুজো তুলে ধরছে জীবনের ওঠাপড়াকে। তা ফুটিয়ে তুলতে মণ্ডপের দেওয়াল জুড়ে বানানো হচ্ছে সাপলুডো খেলার বোর্ড। সিঁড়িতে পড়লে উঠে যাবে উপরে। সাপের মুখে পড়লে নামতে হবে নীচে। ২৩তম বর্ষে বেহালা ২৯ পল্লির পুজোর থিম ‘মোক্ষপট’।

শিল্পী অমিত বিশ্বাসের ভাবনায় সেজে উঠছে এই পুজো। অমিত বলেন, ‘‘বর্তমানে যেটি সাপলুডো খেলা, প্রাচীন ভারতে তারই নাম ছিল মোক্ষপট। মনীষীরা এই খেলা তৈরি করেছিলেন জীবনশিক্ষা দিতে। সেই শিক্ষা বলে, জীবনে ওঠা-পড়া থাকবেই, তাই পতন হলেও ভেঙে পড়লে চলবে না।’’ জ্ঞানার্জনই মোক্ষলাভের পথ, এই বার্তাও দিতে চলেছে বেহালা ২৯ পল্লির পুজো। তাই মণ্ডপেপ্লাই দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বইয়ের সিঁড়ি।

এই পুজো কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৌরভ ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা সব সময়ে নতুন শিল্পীদের কাজের সুযোগ করে দিই। যাতে নতুন নতুন শিল্পকর্ম নিয়ে তাঁরা আসতে পারেন।’’

বেহালার আর এক পুজো, বেহালা নূতন দল জোর দিচ্ছে গল্প বলায়। তারা গড়ছে শিবানী ধাম নামে এক কাল্পনিক মন্দির। তার মধ্যেই ফুটে উঠবে এক রাজার বুন্দেলখণ্ড থেকে এসে বাংলার উত্তরাঞ্চলে স্বাধীন রাজ্য গড়ে তোলার গল্প। লোহার পাইপ, বাঁশ, গ্লাস ফাইবার দিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে এই মন্দির। বেহালা নূতন দলের ৬০তম বর্ষের এই পুজোয় রণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অমর সরকার এবং সঞ্জয় ভট্টাচার্য, এই তিন শিল্পীর কাঁধে মন্দির বানানোর দায়িত্ব। রণ জানান, দুর্গার আর এক নাম শিবানী। তাই মন্দিরের নাম দেওয়া হয়েছে শিবানী ধাম। শিল্পী বলেন, ‘‘মণ্ডপ এবং দুর্গার মূর্তিতে থাকবে বিভিন্ন ধর্মের সমন্বয়ের বার্তা। বুন্দেলখণ্ডে এই রকম স্থাপত্যের নিদর্শন দেখা যায়।’’ মণ্ডপে থাকবে একটি শিবের মূর্তি। পুজোর দিনগুলিতে উত্তরবঙ্গের লোকশিল্পীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠান করবেন।

বেহালা নূতন দলের পুজো কমিটির আহ্বায়ক সন্দীপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ বছর পুজোর হীরক জয়ন্তী। তাই বেহালারই তিন শিল্পীকে নিয়েই কাজ করব বলে ঠিক করেছিলাম। আশা করি, তাঁদের তৈরি মণ্ডপ দর্শনার্থীরা দীর্ঘদিন মনে রাখবেন।’’

সব মিলিয়ে মানুষকে থিমের পুজো উপহার দিতে কোমর কষে প্রস্তুতি নিচ্ছে বেহালা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durga Puja Behala

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy