Advertisement
১৭ মে ২০২৪

বাধার পাঁচিল তিন সৌধ, ফের জটে ইস্ট-ওয়েস্ট

ফের জট ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পে। এ বার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সংরক্ষিত তিনটি প্রাচীন সৌধ।

অত্রি মিত্র
শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:১৫
Share: Save:

ফের জট ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পে। এ বার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সংরক্ষিত তিনটি প্রাচীন সৌধ।

মেট্রো রেলের কর্তারা জানাচ্ছেন, মহাকরণ থেকে হাওড়ার দিকে যে পথে পাতাল রেলের যাওয়ার কথা, সেখানেই রয়েছে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (এএসআই)-এর সংরক্ষিত শতাব্দী-প্রাচীন তিন সৌধ— কারেন্সি বিল্ডিং এবং ইহুদিদের দু’টি উপাসনাগৃহ (ম্যাগেন ডেভিড সিনাগগ এবং বেথ-এল-সিনাগগ)। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো-পথের ওই তিন সৌধ এএসআই-এর সংরক্ষণের আওতায় রয়েছে। ফলে তার ১০০ থেকে ২০০ মিটারের মধ্যে কোনও নির্মাণ করতে হলে ‘ন্যাশনাল মনুমেন্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া’ থেকে অনুমতি নিতে হবে। এই তিন সৌধের একশো মিটারের মধ্যে খননকাজ চালানোর জন্য ২০১৫ সালে এএসআই-এর কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের হতাশ করে এএসআই মাস চারেক আগে জানিয়েছে, ওই অনুমতি দেওয়া যাবে না। কারণ, ‘এনশিয়েন্ট মনুমেন্ট অ্যান্ড আর্কিয়োলজিক্যাল সাইট অ্যান্ড রিমেন্স অ্যাক্ট ১৯৫৮’ শেষ বার সংশোধিত হয়েছে ২০১০ সালে। তাতে বলা হয়েছে, দেশ জুড়ে এএসআই-এর দ্বারা ‘মনুমেন্ট’ হিসেবে সংরক্ষিত সৌধগুলির একশো মিটারের মধ্যে কোনও খনন বা নির্মাণ করা যাবে না। এমনকী, এ ব্যাপারে কেউ অনুমতিও দিতে পারবে না।

তবু হাল ছাড়তে রাজি নয় নবান্ন। এএসআই-এর বক্তব্য জানার পরে সংশ্লিষ্ট সেই আইন সংশোধনের আর্জি জানিয়ে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রককে চিঠি লিখেছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্ত্রক সেই চিঠি পাঠিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে। দিল্লির খবর, এই নিয়ে যা সিদ্ধান্ত সেখানেই নেওয়া হবে।

২০০৮ সালে জন্ম নেওয়া এই মেট্রো প্রকল্প প্রায় গোড়া থেকেই নানা জটে আটকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। শুরুতে সল্টলেকের সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদহ, বৌবাজার, লালদিঘি হয়ে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর পথ ঠিক হয়। কিন্তু বর্তমান মেট্রোর সেন্ট্রাল স্টেশনের কাছে নতুন স্টেশন করা নিয়ে তৈরি হয় জমি-জট। লালদিঘির কাছেও স্টেশন তৈরি নিয়ে সমস্যা হয়। পরে ঠিক হয়, সেন্ট্রাল স্টেশনের আগে বৌবাজারে হিন্দ সিনেমা হলের কাছে একটি স্টেশন হবে। সেখান থেকে পাতালপথে এস এন ব্যানার্জি রোড, ধর্মতলা ট্রাম ডিপো, বি বা দী বাগ হয়ে মেট্রো ঢুকে যাবে গঙ্গার তলায়। সেখান থেকে মাথা তুলে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো শেষ হবে হাওড়া ময়দানে। আর বি বা দী বাগে লালদিঘির পরিবর্তে স্টেশন হবে মিনিবাস স্ট্যান্ডের কাছে। পরবর্তী পর্যায়ে মেট্রোকে হাওড়া ময়দান থেকে সাঁতরাগাছি পর্যন্ত সম্প্রসারণের প্রস্তাব দিয়েছে রাজ্য সরকার।

সমস্যা সমাধানের পথ প্রশস্ত হওয়ায় ২০১৫ সালের শেষের দিকে বন্ধ থাকা নির্মাণকাজ ফের শুরু হয়। তার পরে বছর না কাটতেই ফের প্রাচীরের মতো বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ওই তিন সৌধ। যার হাত ধরে প্রকল্পের ভবিষ্যৎই এখন বড় প্রশ্নচিহ্নের মুখে।

নবান্নের কর্তাদের একাংশ বলছেন, সমস্যাটা শুধু এ রাজ্যের নয়। সংরক্ষিত কোনও সৌধের একশো মিটারের মধ্যে সরকার-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে অনেক পরিষেবামূলক প্রকল্পের নকশা তৈরি হয়েছে। জনস্বার্থের কথা ভাবলে ওই প্রকল্পগুলি জরুরি। সব ক্ষেত্রে সংরক্ষণের কথা ভাবলে প্রকল্পগুলিই বাতিল করতে হবে। এই কারণেই মহারাষ্ট্র-সহ আরও কয়েকটি রাজ্য আইন সংশোধনের আর্জি জানিয়ে কেন্দ্রের দারস্থ হয়েছে। প্রশাসনের এক কর্তার মতে, ‘‘অনেক ইতিহাস আর সংরক্ষণের তকমা থাকলেও তাজমহল এবং কারেন্সি বিল্ডিংকে এক বন্ধনীতে রাখা যুক্তিযুক্ত নয়। তা হলে বহু উন্নয়নমূলক কাজ আটকে যাবে।’’ তাই আশা ছাড়তে নারাজ নবান্ন।

মেট্রোকর্তারা অবশ্য অতটা আশাবাদী নন। তাঁদের বক্তব্য, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো চালু হওয়ার কথা ছিল ২০১৪ সালে। এখন মনে হচ্ছে, পুরো প্রকল্প কখনওই দিনের আলো দেখবে না। হয়তো সল্টলেক থেকে শিয়ালদহ এবং ব্রেবোর্ন রোড থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত দু’টো রুটে ভেঙে মেট্রো চালাতে হবে। এক কর্তার মতে, ‘‘ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের কাজ যে অথৈ জলে, তা সম্ভবত কেন্দ্রও বুঝে গিয়েছে। তাই হয়তো এ বারের বাজেট প্রস্তাবে অন্য মেট্রো প্রকল্পগুলির বরাদ্দ বাড়লেও ইস্ট-ওয়েস্ট নামমাত্র অর্থের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে।’’ কেন্দ্র আইন সংশোধনে সম্মত হলেও এই প্রকল্প কবে শেষ হবে, তা ভেবে উঠতে পারছেন না মেট্রোকর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

East-West Metro kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE