E-Paper

কেন্দ্রীয় বাহিনী বিদায় নেয়নি এখনও, বেশ কিছু স্কুল-কলেজে বন্ধ ক্লাস

যাদবপুরের নবকৃষ্ণ পাল আদর্শ শিক্ষায়তনের প্রধান শিক্ষক জনার্দন রায় জানালেন, ৪ জুনের পরেই তাঁদের স্কুল থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনও তারা রয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২৪ ০৭:১৯
বেহাত: ভোট মিটলেও রয়ে গিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। শুরু করা যায়নি পঠনপাঠন। সোমবার নিউ আলিপুর কলেজে।

বেহাত: ভোট মিটলেও রয়ে গিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। শুরু করা যায়নি পঠনপাঠন। সোমবার নিউ আলিপুর কলেজে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

গরমের ছুটি শেষ হওয়ার পরে গত ৩ জুন থেকে খুলে গিয়েছে রাজ্য সরকারি ও সরকার-নিয়ন্ত্রণাধীন সমস্ত স্কুল। গত সপ্তাহে স্কুলে এসেছিলেন শুধুই শিক্ষকেরা। তার কারণ, ভোটের গণনা ছিল ৪ তারিখ। তা ছাড়া, বহু স্কুলেই রাখা হয়েছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। সোমবার, ১০ জুন থেকে স্কুলে আসতে শুরু করেছে পড়ুয়ারাও। কিন্তু কেন্দ্রীয় বাহিনী এখনও সমস্ত স্কুল থেকে বিদায় নেয়নি। বেশ কয়েকটি স্কুলে এখনও থেকে গিয়েছে তারা, ভোট-পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য। তাই সেই সমস্ত স্কুলে এখনও ক্লাস শুরু করা যায়নি। ক্লাস শুরু হয়নি শহরের কয়েকটি কলেজেও। শিক্ষকদের বক্তব্য, ভোটের ফল বেরিয়ে গিয়েছে প্রায় এক সপ্তাহ আগে। মন্ত্রীদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানও হয়ে গেল। কিন্তু এখনও কেন্দ্রীয় বাহিনী বিদায় না নেওয়ায় স্কুলে স্কুলে পঠনপাঠন আটকে রয়েছে। অবিলম্বে পড়াশোনা শুরু করা না গেলে পাঠ্যক্রম কোনও ভাবেই শেষ করা যাবে না।

যাদবপুরের নবকৃষ্ণ পাল আদর্শ শিক্ষায়তনের প্রধান শিক্ষক জনার্দন রায় জানালেন, ৪ জুনের পরেই তাঁদের স্কুল থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনও তারা রয়েছে। জনার্দন বলেন, ‘‘স্কুলের প্রায় সমস্ত ক্লাসঘরই দখল করে রেখেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। আমার অফিসঘরের সামনেই রান্না হচ্ছে। ক্লাসের বেঞ্চগুলি সরিয়ে ওঁরা শোয়ার জায়গা করেছেন। এখন অনলাইন ক্লাস হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সেটা কোনও ভাবেই অফলাইনের বিকল্প হতে পারে না।’’ জনার্দন জানান, তাঁরা গরফা থানাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। জানিয়েছেন স্কুলশিক্ষা দফতরকেও।

যোধপুর পার্ক বয়েজ় স্কুলেও রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। প্রধান শিক্ষক অমিত পাল মজুমদার বলেন, ‘‘স্কুলের তছনছ অবস্থা। শুধু ক্লাসরুম নয়, আমাদের অফিসঘরও নিয়ে নিয়েছে বাহিনী। তাই শিক্ষকেরা পুরো সময় স্কুলে থাকতে পার‌ছেন না। দিনেও জওয়ানেরা আলো জ্বালিয়ে রাখছেন। দিন-রাত পাখা চলছে। বিদ্যুতের এত বিল কে মেটাবে? সারা দিন চলায় দুটো পাম্পের কয়েল পুড়ে গিয়েছে। সোমবার থেকে স্কুল শুরু হলেও পড়ুয়ারা আসতে পারছে না। পড়াশোনার খুবই ক্ষতি হচ্ছে।’’ অমিতের মতে, একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের এখন স্কুলে আসা খুব জরুরি। অনলাইন ক্লাসে ওদের পক্ষে প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব নয়।

তাঁদের প্রায় পুরো স্কুলই কেন্দ্রীয় বাহিনীর দখলে, জানালেন নিউ আলিপুর মাল্টিপারপাস স্কুলের প্রধান শিক্ষক নীলাঞ্জন মজুমদার। তিনি বলেন, ‘‘পঠনপাঠনের যে বিপুল ক্ষতি হচ্ছে, তা আমরা স্কুলশিক্ষা দফতর, কলকাতা জেলা স্কুল পরিদর্শকের দফতরে জানিয়েছি। স্থানীয় থানাকেও জানিয়েছি। কিন্তু বাহিনী কবে যাবে, কেউ জানে না।’’

নিউ আলিপুর কলেজের ভিতরে করিডরের এক দিকে চেয়ার ও বেঞ্চ রাখা। করিডরে ও ক্লাসরুমে তার টাঙিয়ে ভেজা জামাকাপড় মেলা হয়েছে। ক্লাসরুমের সব বেঞ্চ বাইরে বার করে সেখানে বিছানা পেতে বিশ্রাম নিচ্ছেন জওয়ানেরা। কলেজের অধ্যক্ষ জয়দীপ ষড়ঙ্গী বললেন, ‘‘অফিস, ল্যাবরেটরি, অধ্যক্ষের ঘর বাদে পুরোটাই দখল করে রেখেছে বাহিনী। পঠনপাঠন পুরো বন্ধ। এ দিকে, ষষ্ঠ সিমেস্টারের ফর্ম পূরণ চলছে। সেই কাজ করতে পড়ুয়ারা কলেজে এলে ওদের খুব অসুবিধা হচ্ছে।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘এই অবস্থায় মেয়েদের কলেজে ডেকে ক্লাস করানো সম্ভব নয়। অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে। কিন্তু বিজ্ঞানের বেশির ভাগ বিষয়ই অনলাইনে হওয়া সম্ভব নয়। শনিবার রাতে ভেবেছিলাম, ওঁরা চলে যাবেন।’’ কবে তাঁরা ফিরে যাবেন, তা জানেন না খোদ কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরাও। তাঁদের কয়েক জন জানালেন, তাঁদের অনেকের এখনও ডিউটি পড়ছে সন্দেশখালি বা ভাঙড়ে।

কলকাতা জেলা স্কুল পরিদর্শকের দফতরের এক কর্তা বললেন, ‘‘ভোট-পরবর্তী হিংসা হলে তার মোকাবিলা করার জন্য শহরের কয়েকটি স্কুলে কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে। ওরা কবে যাবে, তা ঠিক করবে নির্বাচন কমিশন। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছুই বলার নেই। তবে, যত দিন বাহিনী থাকছে, স্কুলগুলিকে অনলাইন ক্লাস করাতে বলা হয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

central forces Election Schools

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy