Advertisement
E-Paper

আট বছরে তিন গুণ পুরসভার বিদ্যুতের বিল

২০১০ সালে তৃণমূল বোর্ড যখন পুর প্রশাসনের ক্ষমতায় এল, তখন এই বিলের পরিমাণ ছিল ১২-১৩ কোটি টাকা।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০২:২০
বর্তমানে মাসে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল মেটাতে হচ্ছে পুরসভার। ছবি: সংগৃহীত।

বর্তমানে মাসে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল মেটাতে হচ্ছে পুরসভার। ছবি: সংগৃহীত।

কলকাতা পুরসভার বিদ্যুতের বিল মাসে ৩৫ কোটি টাকা!

২০১০ সালে তৃণমূল বোর্ড যখন পুর প্রশাসনের ক্ষমতায় এল, তখন এই বিলের পরিমাণ ছিল ১২-১৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ, গত আট বছরে তা প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। কিন্তু এতটা বৃদ্ধির কারণ কী? পুর প্রশাসনের যুক্তি, পানীয় জল সরবরাহ, নিকাশি পাম্পের ব্যবহার থেকে রাস্তা আলোকিত করার কাজ আগের থেকে অনেক বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে বিদ্যুতের মাসুলও। তাই বিল বাড়ার কারণ একটি নয়, একাধিক— এমনটাই দাবি একাধিক পুরকর্তার। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, আর কি কোনও কারণ নেই? পুরসভার একাধিক পদস্থ অফিসার জানাচ্ছেন, আছে। তাঁদের অভিযোগ, কলকাতার ফুটপাত জুড়ে যে অসংখ্য দোকান, গুমটি, স্টল, ক্লাব প্রভৃতি রয়েছে, তাদের অনেকেই পুরসভার বিদ্যুৎ চুরি করে আলো জ্বালাচ্ছে। সেই সংখ্যাটা কত, তা অবশ্য পুরসভার নথিতে নেই। কারণ, পুর কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে কোনও নজরদারি চালান না। সেই কারণে এ বিষয়ে কোনও রেকর্ডও নেই বলে জানালেন পুরসভার আলো দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ার।

সম্প্রতি নাকতলায় টালিনালার পাড়ে সরকারি জমিতে একটি ক্লাব গজিয়ে ওঠা নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছিল। তার সত্যতা স্বীকার করেছে পুর প্রশাসন। দেখা গিয়েছে, ওই ক্লাবও বিদ্যুতের সংযোগ চুরি করেছিল পুরসভার জল সরবরাহ দফতরের একটি পাম্পিং ইউনিট থেকে। অভিযোগ, ক্লাবের কর্তারা শাসকদলের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় সব জেনেও তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে সাহস পাননি পুর অফিসারেরা।

পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ার জানান, বর্তমানে মাসে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল মেটাতে হচ্ছে। এর মধ্যে পানীয় জল সরবরাহ এবং নিকাশি পাম্প চালানোর খরচ প্রায় ২২ কোটি টাকা। বাকিটা, অর্থাৎ প্রায় ১৩ কোটি টাকা খরচ হয় আলো জ্বালতে। এর মধ্যে ত্রিফলা, সোডিয়াম ভেপার, হাইমাস্ট-সহ রাস্তার যাবতীয় আলো এবং পুরসভার বিভিন্ন অফিসের বিদ্যুতের বিল রয়েছে। তবে ওই বিলের পরিমাণ এত বেশি কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন করতেই পুরসভার এক অফিসার জানান, পুরসভার বিদ্যুৎ থেকে সংযোগ চুরির পরিমাণও কম নয়। সেটা বন্ধ করতে পারলে কিছুটা খরচ কমতে পারে। ওই অফিসারের কথায়, ‘‘আসলে পুরসভার বিদ্যুতের বিল মেটায় রাজ্য সরকার। তাই বিলের অঙ্ক নিয়ে ততটা হেলদোল নেই পুরকর্তাদের।’’

বেআইনি বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে কী ভাবছে পুর প্রশাসন?

পুরসভার বিদ্যুৎ স্তম্ভ থেকে বেআইনি ভাবে সংযোগ নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন আলো দফতরের মেয়র পারিষদ মনজর ইকবালও। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা ওই ভাবে সংযোগ নেন, তাঁদের চিহ্নিত করা যায় না বলেই মুশকিল হয়।’’ তা হলে কি এ ভাবেই চলবে? মনজর বলেন, ‘‘আমরা দুটো পদ্ধতি নিয়েছি। একটা হল, টাইমার। তাতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আলো জ্বলবে। তার পরে বন্ধ হয়ে যাবে। আর একটা হল, এনসিপি যন্ত্র। তাতে একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক বাতি জ্বলবে। তার বেশি হলেই ফিউজ কেটে যাবে। পুরসভার যে সংখ্যক আলো কোনও এলাকায় জ্বলবে, তার ভিত্তিতেই ওই যন্ত্র বসানো হবে। বেআইনি ভাবে বাড়তি কোনও আলো জ্বালানোর চেষ্টা হলেই ফিউজ কেটে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তিনি জানান, এনসিপি পদ্ধতি চালু হয়েছে। তা পুরো শহরে করতে সময় লাগবে।

এ ছাড়াও বিদ্যুতের বিল কমাতে আরও কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। মনজর বলেন, ‘‘গ্রিন সিটি প্রকল্পে সারা শহরে এলইডি আলো লাগানো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই শহরের ৭২টি ওয়ার্ডে ওই আলো লাগানো হয়েছে। তাতে বিদ্যুতের বিল কমেছে।’’ আগামী দিনে সারা শহরে এলইডি লাগানোর কাজ শেষ হলে বিলের পরিমাণ অনেকটাই কম হবে বলে তাঁর দাবি।

Electricity KMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy