অ্যাপোলো গ্লেনেগলস হাসপাতাল।
দু’সপ্তাহ কোমায় ছিলেন রোগী। চিকিৎসকেরা পরিবারকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা মাত্র এক শতাংশ। আরও তিন সপ্তাহ ভেন্টিলেশনে রেখে ৯০ দিনের মাথায় সঙ্কটাপন্ন পঞ্চাশোর্ধ্ব ওই ব্যক্তিকে সম্প্রতি সুস্থ করে ফিরিয়েছিলেন শহরের চিকিৎসকেরা। বর্তমানে হাঁটাচলা করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন সেই রোগী।
চিকিৎসকেরা এই ঘটনাকে বিরল আখ্যা না দিলেও ঠিক সময়ে ক্ষতির কারণ পরিমাণ বুঝে চিকিৎসা করায় যে সঙ্কটাপন্ন অবস্থা কাটিয়ে ওঠা গেছে তা মানছেন তাঁরা। ট্রমা কেয়ারের ক্ষেত্রে যা প্রাথমিক শর্ত বলে মত চিকিৎসকেদের।
চলতি বছরের জুনে বীরভূমের শেষ প্রান্ত নবগ্রামে ডাম্পারের সঙ্গে একটি গাড়ির দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন বিভাসচন্দ্র অধিকারী নামে এক ব্যক্তি। প্রথমে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হতে দেখে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতার বাইপাসের ধারের অ্যাপোলো গ্লেনেগলস হাসপাতালে।
স্নায়ু শল্য চিকিৎসক বিশ্বজিৎ সেনগুপ্তের অধীনে সেখানেই চিকিৎসা শুরু হয় তাঁর। হাসপাতাল সূত্রের খবর, মাথায় এবং পেটে গুরুতর আঘাত নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন বিভাসবাবু। ডান পাঁজরের একাধিক হাড়ও ভেঙে গিয়েছিল তাঁর। মাথার আঘাতের কারণে ধীরে ধীরে কোমায় চলে গিয়েছিলেন রোগী। দু’সপ্তাহ কোমায় ছিলেন। এর পরে আরও তিন সপ্তাহ তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখতে হয়। দু’হাতে ঘষা লেগে ছাল-চামড়া উঠে গিয়েছিল বিভাসবাবুর। রোগী খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠতে সেই ক্ষত নিরাময়ে প্লাস্টিক সার্জারি হয়।
বিভাসবাবুর চিকিৎসক দলের সদস্য শল্য চিকিৎসক নীপাঞ্জন ঘোষ জানান, রক্তচাপ কমে যাওয়ায় এবং মাথার আঘাতের জন্য রোগী শকে চলে যান। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচার করতে হয়। দেখা যায়, স্প্লিন ফেটে প্রায় আড়াই লিটার রক্ত জমে রয়েছে পেটের ভিতরে। স্প্লিন শরীর থেকে বার করে নেওয়া হয়। প্রচুর রক্তক্ষরণ তো হয়েছিলই সেই সঙ্গে রোগীর রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। ৪০-৪৫ ইউনিট রক্ত, প্লাজমা এবং হোল ব্লাড দিতে হয়েছিল রোগীকে। মাথার আঘাতের জন্য ধীরে ধীরে কোমায় চলে যান রোগী। প্রস্রাব পুরো বন্ধ হয়ে যায়। তিন সপ্তাহ ধরে ডায়ালিসিস চলে তাঁর।
প্রায় ১৫ দিন পরে কোমা থেকে ফিরে আসেন তিনি। একটানা তিন মাস হাসপাতালে থেকে চিকিৎসার পরে ছুটি হয় তাঁর। তবে দীর্ঘ শারীরিক ধকলের কারণে হাঁটার ক্ষমতা সম্পূর্ণ হারিয়ে ছিলেন বিভাসবাবু। ফিজ়িয়োথেরাপি করে সেই রোগী এখন আগের মতোই হাঁটাচলা করতে পারছেন। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বিভাসবাবু এখন সুস্থ। তবে তাঁর শরীর থেকে স্প্লিন বাদ দেওয়ায় দ্রুত সংক্রমণ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবেই তাঁর। প্রতিষেধক দিয়ে সেই প্রবণতা প্রতিরোধ করতে হবে।
এর থেকেও বেশি দিন কোমায় থাকার পরে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে বলে জানাচ্ছেন শল্য চিকিৎসক মাখনলাল সাহা। তাঁর কথায়, “এ ক্ষেত্রে ঠিক সময়ে পেটের বড় আঘাত চিহ্নিত করে অস্ত্রোপচার করাটাই উল্লেখযোগ্য। কারণ, বেশির ভাগ সময়ে কোমা রোগীর মাথার আঘাত নিয়েই মনোযোগ দেওয়া হয়। তখন ক্ষতি বাড়িয়ে দেয় এ ধরনের আঘাতগুলি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy