Advertisement
E-Paper

বাজারই বলছে, দরজায় পুজো

জনসমুদ্রের ঢেউ ঠেলে এগিয়ে আসছেন এক যুবক। তাঁর দু’টি হাতই মাথার উপরে। দু’হাতে ধরা দু’টি রোল! কিছুটা দূরেই অপেক্ষাকৃত ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে এক তরুণী। তাঁর দু’হাতে আবার বড় বড় কয়েকটি ব্যাগ। আকুল নয়নে তিনি তাকিয়ে আছেন রোল দু’টির দিকে।

সৌভিক চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৫ ০১:৩২
জনস্রোত। রবিবার, ধর্মতলা চত্বরে। ছবি: সুমন বল্লভ।

জনস্রোত। রবিবার, ধর্মতলা চত্বরে। ছবি: সুমন বল্লভ।

জনসমুদ্রের ঢেউ ঠেলে এগিয়ে আসছেন এক যুবক। তাঁর দু’টি হাতই মাথার উপরে। দু’হাতে ধরা দু’টি রোল! কিছুটা দূরেই অপেক্ষাকৃত ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে এক তরুণী। তাঁর দু’হাতে আবার বড় বড় কয়েকটি ব্যাগ। আকুল নয়নে তিনি তাকিয়ে আছেন রোল দু’টির দিকে। বেশ কিছুটা কসরতের পরে সেখানে পৌঁছতে পারলেন যুবক। মুখে তখন যুদ্ধজয়ের হাসি। নতুন রুমাল শুষে নিল কপালের ঘাম। তৃপ্তির কামড় পড়ল রোলে।

পাশাপাশি হাত ধরে হাঁটছিলেন অন্য এক যুগল। হঠাৎই যুবকের হাত ছাড়িয়ে লোকজনকে রীতিমতো ডজ করে দৌড়তে শুরু করলেন যুবতী। আকস্মিক ধাক্কাটা সামলে যুবক যতক্ষণে তাঁর পিছু নিয়েছেন, ততক্ষণে যুবতী পৌঁছে গিয়েছেন ফুটপাথের ধারে এক গয়নার স্টলের সামনে। হাত বাড়িয়ে তুলে নিয়েছেন এক জোড়া কানের দুল। পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা আর এক তরুণীর তখন মুখ চুন। আবার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে যুবতী বললেন, ‘‘ঠিক দেখেছিলাম ওই মেয়েটা তক্কে তক্কে আছে। কেমন দিলাম বল?’’

পুজোর দু’সপ্তাহ আগের রবিবার পড়ন্তবেলায় এমনই নানা দৃশ্য চোখে পড়ল নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাটের মতো ব্যস্ত বাজার চত্বরে। প্রবল ভিড় ঠেলেও আপনজনের জন্য পুজোর বাজার করতে বিরক্তির চিহ্নমাত্র দেখা গেল না সাত থেকে সত্তর কারওর মুখে। বরং খুশির আমেজ বুঝিয়ে দিল, ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই।

এ দিন সকাল থেকেই ধর্মতলা, নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাট, হাতিবাগান চত্বরে ভিড় জমিয়েছিলেন কাতারে কাতারে মানুষ। তাঁদের চোখেমুখে যেন পুণ্যার্থীর আকাঙ্খা। যেন পণ করেছেন, খালি হাতে ফিরবেন না কিছুতেই। তাই জামা থেকে জুতো, ব্যাগ থেকে গয়না— সবই ছিল বিকিকিনির তালিকায়। কেউ কেউ তো আবার ছুটির দিনে ভিক্টোরিয়া, জাদুঘর ঘুরে ফেরার পথে ভিড় জমিয়েছেন নিউ মার্কেটে।

হাওড়া থেকে গড়িয়াহাটে এসেছেন সৌরভ মজুমদার এবং শতাব্দী ঘোষাল। বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে তাঁদের। সৌরভ জানালেন, বিয়ের বাজার শেষ। এ বার পুজোর বাজার। প্রত্যেক বারই পুজোর বাজার করতে তাঁরা চলে আসেন গড়িয়াহাটে। হাসতে হাসতে শতাব্দীর দিকে তাকিয়ে সৌরভ বলেন, ‘‘এ বারের পুজোটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মাস কয়েক বাদেই তো ও বৌ হয়ে যাবে। প্রেমিকাকে এটাই শেষ পুজোর উপহার।’’

বারাসাত থেকে নিউ মার্কেটে এসেছেন শুভময় এবং সুমনা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের হাত ভর্তি ব্যাগ। রীতিমতো খুঁড়িয়ে হাঁটছেন সুমনা। জানালেন, লিন্ডসে স্ট্রিটের এক দোকান থেকে বেশ কয়েক জোড়া জুতো কিনেছেন পুজোর উপলক্ষে। তারই একটি গলিয়েছেন পায়ে। সেই সকাল থেকে ঘুরছেন। অগত্যা ফোসকা। কিন্তু তার পরোয়া করে কোন সে ভীরু? বললেন, ‘‘পুজোর বাজারটা নিউ মার্কেট থেকে না হলে জমে না। এই ভিড়টা দেখলেই মনে হয়, পুজো এসে গিয়েছে।’’

রবিবার সকাল থেকে পসরা সাজিয়ে বসলেও বিক্রিবাটায় কিন্তু তেমন খুশি নন দোকানিরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, ভিড় যত বেশি, বিক্রি যেন ততটা নেই। গত কয়েক বছর ধরেই এমনটা দেখা যাচ্ছে। এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘অল্পবয়সি ছেলেমেয়েরা যত না জামাকাপড় কেনে, ‘সেলফি’ তোলে তার পাঁচ গুণ। এঁদের ভিড়টাই বেশি।’’ অন্য এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘ইদানীং ‘অনলাইন শপিং’ চলে আসায় যথেষ্ট প্রভাব পড়েছে বাজারে।’’ গড়িয়াহাটের এক শাড়ি ব্যবসায়ী অনুপ সাহা জানান, আগে পুজোর সময়ে প্রচুর শাড়ি বিক্রি হত। যত দিন যাচ্ছে, সে চাহিদাও কমছে। তিনি বলেন, ‘‘বাঙালি মেয়েরা আজকাল আর শাড়ি পড়তে চায় না। বিদেশিনিরা আমার দোকান থেকে এসে শাড়ি কিনে নিয়ে যান আর বাঙালি মেয়েরা ছুটছে ‘ওয়েস্টার্ন আউটফিটের’ দিকে। পুজোর ক’টা দিন তো শাড়ি পরলে পারে!’’

তবে নিউ মার্কেট, হাতিবাগান, গড়িয়াহাটের সব ব্যবসায়ী এক বাক্যে জানাচ্ছেন, দোকানের তুলনায় ফুটপাথে ভিড় অনেকটাই বেশি। সাধারণত পুজোর সময়ে এই সব অঞ্চলে একটু বেশিই সক্রিয় থাকে ট্রাফিক পুলিশ। পুলিশ জানায়, এ দিনও ভিড় সামলাতে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বারবার করে মাইক বাজিয়ে পথচারীদের বলা হয়, ‘পকেটমার হইতে সাবধান, অসাধু ব্যবসায়ী হইতে সাবধান’।

তবু এত সাবধানতা সত্ত্বেও বরাবরের মতো বিকিকিনির সময়ে কেউ কেউ ঠকে গিয়েছেন বেমালুম। নেতাজিনগর থেকে হাতিবাগানে বাজার করতে এসেছিলেন বিপুল শীল। দুটো জামার বদলে একটা জামা দিয়ে ঠকিয়ে দিয়েছেন দোকানদার। হতাশ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। বান্ধবী হাতে ধরিয়ে দিলেন একটা আইসক্রিম। পুজোর সময়ে মন খারাপ করলে চলে!

sauvik chakraborty enthusiast customers busiest market puja market puja coming
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy