প্রতীকী ছবি।
নির্বাচন কমিশন ভোটের দিন ঘোষণা করা মাত্রই শুক্রবার বাংলায় ভোট-যুদ্ধের দামামা বেজে গেল। তার সঙ্গেই যে প্রশ্নটি ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে তা হল, চলতি নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলি কিছুটা হলেও কি পরিবেশ-বিধি মেনে চলবে? করোনা সংক্রমণের জেরে সারা বিশ্বই যে হেতু অদৃষ্টপূর্ব পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তাই প্রশ্নটি আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। পরিবেশ নিয়ে বিভিন্ন মহলে তুমুল চর্চাও শুরু হয়েছে।
পরিবেশবিদেরা অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অবশ্য জানাচ্ছেন, পরিবেশ-বিধি মানার কথা বললেও বাস্তবে সব কিছু উড়িয়েই প্রচার চালায় রাজনৈতিক দলগুলি। তার মধ্যে প্লাস্টিকের তৈরি ব্যানারের আতিশয্য যেমন থাকে, তেমনই থাকে শব্দের প্রাবল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য সাউন্ড লিমিটরহীন মাইকের মাধ্যমে প্রচার। এমন আচরণ থেকে বাদ যান না কেন্দ্র বা রাজ্যের ক্ষমতাসীন শাসকদলের নেতা-নেত্রীরাও। এক পরিবেশবিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘অন্য নির্বাচনের মতো এ বারের নির্বাচনেও যদি পরিবেশ-বিধি মানা না হয়, তা হলে পরিবেশ নিয়ে আর কথা বলার কোনও অর্থই হয় না।’’
পরিবেশবিদদের মতে, সমস্যা রয়েছে গোড়াতেই। কোনও রাজনৈতিক দলের ইস্তাহারেই পরিবেশের উপরে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া বা পরিকল্পনার কথা বলা হয় না। অর্থাৎ, ইস্তাহারের মাধ্যমেই বুঝিয়ে দেওয়া হয় যে রাজনীতির মার্কশিটে পরিবেশের কোনও নম্বর নেই, তা কলকাতা-সহ রাজ্যের বায়ুর মানের যত অবনমনই হোক না কেন! দেশের বক্ষরোগ চিকিৎসকদের অন্যতম সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান চেস্ট সোসাইটি’ পরিবেশ দূষণের উপরে জোর দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলির কাছে আবেদন জানাতে চলেছে। সোসাইটির অ্যাকাডেমিক সেক্রেটারি, পালমোনোলজিস্ট রাজা ধর বলছেন, ‘‘আমরা নির্বাচনের দিন ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সেটা যখন হয়ে গিয়েছে, তখন মার্চের প্রথম সপ্তাহেই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলির কাছে বায়ুদূষণ-সহ পরিবেশের স্বার্থ রক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য আবেদন করব।’’
ঘটনাচক্রে এ দিনই একটি সাংবাদিক বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। সেখানে রাজনৈতিক দলগুলির তরফে নির্বাচনে পরিবেশ-বিধি লঙ্ঘন করা-সহ একাধিক বিষয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেন তিনি। সুভাষবাবু জানাচ্ছেন, নির্বাচনী বিধিতে পরিবেশকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য একাধিক বার নির্বাচন কমিশনের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন তিনি। রাজ্যের ১৩টি রাজনৈতিক দলের কাছেও পরিবেশ-বিধি মেনে প্রচারের অনুরোধ করেছেন। কিন্তু কিছুতেই কোনও ফল হয়নি। সুভাষবাবুর বক্তব্য, ‘‘ইস্তাহারে শুধুমাত্র রাজনৈতিক কচকচানি থাকে। কিন্তু পরিবেশ নিয়ে একটি কথাও থাকে না। অথচ পরিবেশ হল এমন একটি বিষয় যা সব স্তরের মানুষের জীবন স্পর্শ করে।’’
এ দিন এ ছাড়াও পুরনো গাড়ি বাতিলের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা, নির্মাণ-শিল্পের দূষণ, রাস্তার ধুলো, অপরিশোধিত তরল বর্জ্য গঙ্গায় মেশা, শব্দদূষণ, পূর্ব কলকাতা জলাভূমিতে বেআইনি নির্মাণ-সহ একাধিক বিষয়ের উল্লেখ করেন তিনি। একই কথা জানাচ্ছেন পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সাধারণ সম্পাদক নব দত্তও। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতিবারই আমরা নির্বাচনী প্রচারের সময়ে রাজনৈতিক দলগুলির কাছে পরিবেশ-বিধি মানার জন্য আবেদন করি। কিন্তু কেউই তাতে কর্ণপাত করে না। তবে এ বারও আমরা আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy