Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Firecrackers

শব্দবাজির শাসনে ‘অসহায়’ প্রশাসন!

স্থান কলকাতা পুলিশ হাসপাতালের মধ্যে হলেও দীপাবলির সৌজন্যে মনে হচ্ছে যেন সীমান্তে যুদ্ধ চলছে, দুই শিবির পরস্পরের দিকে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণ করছে। সময় তখন রাত সাড়ে ১০টা।

An image of Firecrackers

প্রকাশ্যে: কালীপুজোর বিসর্জনের শোভাযাত্রায় রাস্তাতেই ফাটানো হচ্ছে বাজি। সোমবার, উত্তর কলকাতার কৈলাস বসু স্ট্রিটে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৩০
Share: Save:

তীব্র শব্দ ও আলোর প্রাবল্যে ফালাফালা হয়ে যাচ্ছে রাতের আকাশ। স্থান কলকাতা পুলিশ
হাসপাতালের মধ্যে হলেও দীপাবলির সৌজন্যে মনে হচ্ছে যেন সীমান্তে যুদ্ধ চলছে, দুই শিবির পরস্পরের দিকে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণ করছে। সময় তখন রাত সাড়ে ১০টা। অথচ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, ওই সময়ে সবুজ শব্দবাজি-সহ কোনও বাজিই ফাটার কথা নয়। তার উপরে জায়গাটি একটি সাইলেন্স জ়োনও বটে।

তবে ওই চিত্র কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং তা বিন্দুতে সিন্ধুদর্শন মাত্র। কালীপুজো-দীপাবলির রাতে কোথাও কোথাও পরিস্থিতি এর থেকেও খারাপ ছিল বলে অভিযোগ। যে চিত্র পাল্টায়নি সোমবারও। অথচ গত শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ-স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে এক কর্মশালায় রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের শীর্ষ কর্তারা দাবি করেছিলেন, সবুজ বাজির কারণে এ বারের দীপাবলি আলাদা হতে চলেছে। তবে আক্ষরিক অর্থেই চলতি বছরের কালীপুজো-দীপাবলির রাত আলাদা ছিল। যেখানে শব্দবাজির শাসনের কাছে রীতিমতো অসহায় লেগেছে পুলিশ-প্রশাসনকে।

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তাদের একাংশ স্বীকার না করলেও সবুজ শব্দবাজির সর্বোচ্চ সীমা ৯০ ডেসিবেল থেকে বাড়িয়ে ১২৫ ডেসিবেল করার নির্দেশিকা কী পরিমাণ শব্দ-আতঙ্ক তৈরি করতে পারে, তা কালীপুজোর রাত ও সোমবারের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শহরবাসী বুঝতে পেরেছেন বলে অভিযোগ। চলতি বছরেই একের পর এক বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ ও মৃত্যুর ঘটনার পরেও যে নিষিদ্ধ শব্দবাজি উৎপাদন, বিক্রি ও সরবরাহ রুখতে পুলিশ-প্রশাসন কিছুমাত্র করতে পারেনি, তা রবিবারের রাতই প্রমাণ করে দিয়েছে বলে মত অনেকের।

এক পরিবেশবিজ্ঞানী জানাচ্ছেন, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের শীর্ষ কর্তারা আলোযুক্ত সবুজ বাজি (লাইট এমিটিং) ও শব্দযুক্ত সবুজ বাজির (সাউন্ড এমিটিং) সর্বোচ্চ মাত্রা কত করা হয়েছে, কেন করা হয়েছে, সে সম্পর্কে তাত্ত্বিক আলোচনায় ব্যস্ত। কিন্তু সাধারণ মানুষ কি এত বোঝেন? তাঁর কথায়, ‘‘সাধারণ মানুষ যেটা বুঝেছেন তা হল, আগে যত জোরে বাজি ফাটাতে পারতাম, এ বার তার থেকেও বেশি জোরে ফাটাতে পারব। এবং এই সত্যি, বাস্তব অভিজ্ঞতাকে কোনও তত্ত্ব, কোনও থিয়োরি পেপার, কোনও সমীক্ষা দিয়ে ভুল প্রমাণ করা যাবে না। কারণ, সচেতন নাগরিকেরা জানেন, কালীপুজোর রাতে শহরের পরিস্থিতি কী ছিল!’’

কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হল, এ প্রশ্নের উত্তরে প্রশাসনের এক কর্তা বরাবরের মতোই উত্তর দিয়েছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানাটা বাধ্যতামূলক ছিল। তাই তা করা হয়েছে।’’ কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ তো এটাও বলেছিল, সবুজ শব্দবাজি ছাড়া সমস্ত ধরনের বাজি নিষিদ্ধ এবং কতক্ষণ সেই বাজি ফাটানো যাবে। তা মানা হল কই? ওই কর্তার উত্তর, ‘‘বহুতল আবাসনগুলিতে আলাদা করে পুলিশ পোস্টিং করা হয়েছিল। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে চালানো ড্রোনের মাধ্যমে নিয়মভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়েছে। এ বার নাগরিকদের একাংশের সচেতনতা, সহযোগিতা প্রয়োজন।’’ কিন্তু নাগরিকদের একাংশ যাবতীয় সচেতন-বার্তা অস্বীকার করলে কী করা হবে, সে ব্যাপারে বাঁধাধরা বুলি পুলিশ-প্রশাসনের। পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘যথাযথ আইনি পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’

কিন্তু তা যে পর্যাপ্ত নয়, তা ‘শব্দ পরিমাপক যন্ত্র’-এর ডেসিবেলের মাত্রা বলেছে। হাসপাতালের মতো ‘সাইলেন্স জ়োন’ ও সংলগ্ন এলাকার শব্দের মাত্রা ৯৫-১২০ ডেসিবেলের মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর অর্গানাইজ়িং সেক্রেটারি দেবাশীষ রায় বলেন, ‘‘এ বছর শব্দ-তাণ্ডব চলবে, তার আগাম আশঙ্কা ছিলই। কিন্তু সেটা যে এই পর্যায়ে পৌঁছতে পারে, তা বোঝা যায়নি। পুলিশ-প্রশাসন চুপ থাকুক আর শব্দতাণ্ডব এ ভাবেই বাড়তে থাকুক বছরের পর বছর।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE