E-Paper

আয়ুষের চিকিৎসায় এখনও ব্রাত্য স্বাস্থ্যসাথী কার্ড

২০১৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু করেন। এতে পরিবারপিছু ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বিমা করা হয়। এই ‘ক্যাশলেস’ বিমা পরিষেবা প্রকল্পে রাজ্যের ২ কোটির বেশি পরিবার অন্তর্ভুক্ত।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:৫০
Representative Image

—প্রতীকী ছবি।

আয়ুষ চিকিৎসা সম্পূর্ণ ভাবে সরকার-স্বীকৃত হলেও রাজ্যের কোনও আয়ুষ হাসপাতালকে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অথচ কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্প ‘সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট হেল্থ‌ স্কিমে’ (সিজিএইচএস) আয়ুষ চিকিৎসার সুবিধা পাওয়া যায়। দেশের প্রায় সব রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি বিমা সংস্থা আয়ুষ চিকিৎসা প্যাকেজে ‘ক্যাশলেস’ পরিষেবা দেয়। ব্যতিক্রম স্বাস্থ্যসাথী।

২০১৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু করেন। এতে পরিবারপিছু ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বিমা করা হয়। এই ‘ক্যাশলেস’ বিমা পরিষেবা প্রকল্পে রাজ্যের ২ কোটির বেশি পরিবার অন্তর্ভুক্ত।

আয়ুষ চিকিৎসা পদ্ধতিতে আয়ুর্বেদ, হোমিয়োপ্যাথি, ইউনানি, যোগ, নেচারোপ্যাথি— সবই রয়েছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে পঞ্চায়েত স্তরের ডিসপেন্সারি থেকে শুরু করে মেডিক্যাল কলেজ স্তর পর্যন্ত অনেক আয়ুষ চিকিৎসক রয়েছেন। এ ছাড়া, রাজ্যে দু’টি বেসরকারি আয়ুর্বেদ হাসপাতাল, একটি বেসরকারি ইউনানি হাসপাতাল, প্রায় ছ’টি বেসরকারি হোমিয়োপ্যাথি হাসপাতাল রয়েছে। এদের অনেকেই একাধিক বার স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে তালিকাভুক্ত হতে চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেও ব্যর্থ হয়েছে।

রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ‘দ্বিচারিতার’ অভিযোগ তুলে ২০২১ থেকে লাগাতার স্বাস্থ্য দফতর এবং মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে চিঠি দিয়েছে এ দেশে আয়ুর্বেদ পড়ুয়া ও চিকিৎসকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ‘ন্যাশনাল আয়ুর্বেদ স্টুডেন্টস অ্যান্ড ইউথ অ্যাসোসিয়েশন’। তারাও কোনও জবাব পায়নি বলে অভিযোগ।

কেন আয়ুষ হাসপাতালগুলিকে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের বাইরে রাখা হয়েছে? রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘‘এটা নীতিগত সিদ্ধান্ত। এর কারণ আমরা বলতে পারব না। অর্থ দফতরকে জিজ্ঞাসা করতে হবে।’’ স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ সচিব (আয়ুষ) শ্যামল মণ্ডলের কথায়, ‘‘আমি এই পদে যোগ দেওয়ার আগে থেকেই তো এই নীতি রয়েছে। কেন রয়েছে জানি না। প্রচুর মানুষ আয়ুষ হাসপাতালে পরিষেবা নেন। সেখানে স্বাস্থ্যসাথী চালু হলে উপকারই হত।’’

প্রসঙ্গত, রাজ্যে সরকারি যে কোনও অ্যালোপ্যাথি হাসপাতালে ভর্তির সময়ে এখন বাধ্যতামূলক ভাবে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেখাতে বলা হয়। কারণ, সরকারি হাসপাতালের খরচের জন্য বরাদ্দ স্বাস্থ্যের সাধারণ তহবিলের পাশাপাশি শুধু স্বাস্থ্যসাথীর প্রকল্পে অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত চিকিৎসা সামগ্রী (মূলত হাড়ের এবং হৃদ্‌যন্ত্রের অস্ত্রোপচার) কিনতে ২০২২ সালের জুনের পর থেকে সরকার আলাদা অর্থখাত তৈরি করেছে। এতে অর্থের টানাটানি ও জিনিসপত্রের আকাল কমেছে বলেই দাবি করা হয়।

জুলাই ২০২২ থেকে ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত এ খাতে সরকার প্রায় ১০ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা দিয়েছে। কিন্তু সরকারি আয়ুষ হাসপাতালগুলি স্বাস্থ্যসাথীতে ব্রাত্য থাকায় এই অর্থসাহায্য পাচ্ছে না। রাজ্যে সরকারি আয়ুর্বেদ হাসপাতাল রয়েছে তিনটি, হোমিয়োপ্যাথি হাসপাতাল চারটি, ইন্টিগ্রেটেড আয়ুষ হাসপাতাল দু’টি এবং যোগ হাসপাতাল একটি। আয়ুর্বেদ হাসপাতালে পঞ্চকর্ম, ক্ষারসূত্র, অগ্নিকর্মের মতো পদ্ধতির চিকিৎসা সামগ্রীর টানাটানি রয়েছে। স্বর্ণ ও রৌপ্যভস্ম দিয়ে তৈরি অনেক উপকারী অথচ মূল্যবান ওষুধও কেনা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ।

২০১২-’১৩ সালে ‘ইনশিয়োরেন্স রেগুলেটরি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া’ (আইআরডিএ) আয়ুষের মতো বিকল্প (অল্টারনেটিভ) চিকিৎসাকে বিমার আওতায় আনার ব্যাপারে দেশের বিমা সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দেয়। ২০১৫ সালেই আয়ুষ চিকিৎসা কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হয়।

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আয়ুষ মন্ত্রক বিমা সংস্থাগুলির জন্য একটি নির্দেশিকা জারি করে। সেখানে চিকিৎসা প্যাকেজ জানানো হয়। এ ব্যাপারে আইআরডিএ একটি পরিমার্জিত নির্দেশিকা জারি করে ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর। কিন্তু স্বাস্থ্যসাথীর ক্ষেত্রে আয়ুষ চিকিৎসা এখনও ব্রাত্য।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Swasthyasathi Scheme Ayush Hospital

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy