কারও সঙ্গে মেলামেশা না করে নিজের মনে থাকা, সহকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার— পার্থ দে-র চাকরিজীবনের গোড়া থেকেই তাঁর এই স্বভাবের প্রমাণ পেয়েছিলেন সহকর্মীরা। এই দুর্ব্যবহারের কারণেই প্রথম চাকরিতে পাকা জায়গা করে উঠতে পারেননি পার্থ।
১৯৯৬-৯৭ সালে কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থার আইটি বিভাগে অস্থায়ী প্রোগ্রামার হিসাবে কাজ করতেন পার্থবাবু। সেই সংস্থার কয়েক জন সহকর্মী জানিয়েছেন, কাজে দক্ষ হওয়া সত্ত্বেও এক বছর পর পার্থকে স্থায়ী কর্মী করা হয়নি। কারণ তাঁর উদ্ভট স্বভাব। বিভাগে এক বছরের জুনিয়র একটি মেয়ের সঙ্গেই যা একটু কথা বলতেন পার্থবাবু। কাকতালীয় ভাবে ওই মেয়েটির নাম ছিল দেবযানী (পার্থ দে-র দিদির নামও ছিল দেবযানী)। এই দেবযানী ১৯৯৭ সালে ওই চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি চাকরি ছাড়েন ২০০০ সালে। এর মধ্যে কয়েক মাস তিনি পার্থর সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করেছিলেন।
টেলিভিশনে কঙ্কাল-কাণ্ডের খবরে পার্থকে দেখে প্রথমে চমকে উঠেছিলেন দেবযানী। মনটাও একটু খারাপ হয়ে গিয়েছিল। দেবযানীদেবী সোমবার ফোনে জানিয়েছেন, পার্থবাবু খুব লম্বা আর ফর্সা ছিলেন। সামান্য কুঁজো হয়ে হনহন করে হাঁটতেন। সাতাশ-আঠাশ বছর বয়সেই মাথার চুল কমতে শুরু করেছিল। অফিসে আসতেন একটা বড় ব্যাগ নিয়ে। তাতে বড় টিফিনবাক্স থাকত। টিফিনের সময় একা-একাই খেতেন। মাঝেমধ্যে হেসে গল্প করতেন দেবযানীর সঙ্গে। কয়েক বার তাঁকে মজার-মজার চুটকিও শুনিয়েছেন পার্থ। তবে দেবযানীর স্মৃতি বলছে, বেশির ভাগ সময়েই কেমন একটা ঘোরের মধ্যে থাকতেন পার্থ। কেউ কিছু বললে তার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকাতেন। তার পর আবার কাজ শুরু করতেন। সব সময় ইংরেজিতে কথা বলতেন। দেবযানীর কথায়, ‘‘মনে হতো ভিতরে অনেক রাগ জমে আছে। কিছু পছন্দ না হলে ভয়ঙ্কর চিৎকার করতেন। একটু রূঢ়ও হয়ে যেতেন। তবে এত দিন পরে তাঁকে এ ভাবে দেখব, ভাবতে পারিনি।’’
তাঁর স্বভাবের অস্বাভাবিকতা নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়াতে চিকিৎসক এবং পুলিশকর্তাদের নানা বিশ্লেষণের কিছু কিছু কানে এসেছে পার্থরও। এ দিন পাভলভ হাসপাতালে বসে এই সব আলোচনাকে কার্যত ‘জঞ্জাল’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। এক চিকিৎসককে এ দিন তিনি বলেন, আসল সত্য কেবল তিনিই জানেন। বাইরে যা চর্চা হচ্ছে, পুরোটাই ‘গারবেজ’। তা হলে ‘আসল সত্য’ প্রকাশ করছেন না কেন? পার্থবাবু বলেন, ‘‘সেটা আমি আমার আইনজীবীর মাধ্যমে বলব। সেই আইনজীবীর ব্যবস্থা করবে মাদার হাউস। অন্য কারও ঠিক করে দেওয়া আইনজীবীকে আমি বিশ্বাস করি না।’’ মাদার সুপিরিয়রকে তিনি শীঘ্র একটি চিঠি লিখবেন বলেও জানিয়েছেন।
পার্থর কথায়, ‘‘আমি সেবামূলক কাজ করতে চাই। সেই কারণেই মাদার হাউসে কথা বলব। সম্পত্তি নিয়ে এত গন্ডগোল! এর মধ্যে থাকতে চাই না।’’ হাসপাতালের বাইরে বেরোতেও চেয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘আমাকে ভদ্রস্থ পোশাক দিন। আমি বাইরে যেতে চাই।’’
এ দিন সকাল থেকে এমনিতে স্বাভাবিকই ছিলেন পার্থবাবু। তাঁকে একটি কাগজ ও পেন্সিল দেওয়া হয়েছিল। তাতে একটি আঁচড়ও কাটেননি। তবু তাঁর কাছে সব সময়েই কাগজ-পেন্সিল রেখে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy