Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

টালায় রেলের ইস্পাত-কাঠামো চান বিশেষজ্ঞ

সেতু-বিশেষজ্ঞ রায়না মনে করেন, রেললাইনের উপরে সেতুর মূল অংশে ইস্পাতের কাঠামো ব্যবহার করে সংলগ্ন বাকি অংশে কংক্রিট ব্যবহার করতে বাধা নেই।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য ও ফিরোজ ইসলাম
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:৩২
Share: Save:

আগাগোড়া কংক্রিট নয়, আবার পুরোপুরি ইস্পাতও নয়। টালায় নতুন সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে ইস্পাত ও কংক্রিটের ‘কম্পোজ়িট স্ট্রাকচার’ বা যৌথ কাঠামো কার্যকর হতে পারে বলে মনে করছেন সেতু-বিশেষজ্ঞ ভি কে রায়না। এ ব্যাপারে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে রায়নার পরামর্শ, রেল তাদের বিভিন্ন সেতু তৈরির ক্ষেত্রে নিজেদের নকশা অনুযায়ী ইস্পাতের যে-‘সুপার স্ট্রাকচার’ ব্যবহার করে, টালাতেও সেই পদ্ধতি অনুসরণ করা হোক। অর্থাৎ রেলের নকশা মেনে বসানো হোক ইস্পাতের কাঠামো।

সেতু-বিশেষজ্ঞ রায়না মনে করেন, রেললাইনের উপরে সেতুর মূল অংশে ইস্পাতের কাঠামো ব্যবহার করে সংলগ্ন বাকি অংশে কংক্রিট ব্যবহার করতে বাধা নেই। তাতে সময়ের সাশ্রয় হবে, প্রয়োজনীয় গুণমানও ধরে রাখা যাবে। ওই ধরনের সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় নকশা এবং কারিগরি দক্ষতা রেলের কাছে মজুত থাকায় নকশা পরীক্ষানিরীক্ষা এবং অনুমোদন সংক্রান্ত প্রশাসনিক জটিলতাও এড়ানো সম্ভব হবে।

রাজ্য সরকার আর রেলের সমন্বয়েই টালায় নতুন সেতু নির্মাণ করার কথা। রায়না রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহকে জানিয়েছিলেন, এখন টালা সেতু যেখানে রয়েছে, সেখানে পুরনো সেতু ভেঙে নতুন নির্মাণকাজ চালানো যথেষ্ট ঝক্কির। সঙ্কীর্ণ এলাকায় সেতু নির্মাণের ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে যাওয়ার সমস্যা ছাড়াও সেতুর উপরে-নীচে জলের পাইপ এবং বিদ্যুতের তার-সহ বিভিন্ন সংযোগ থাকায় তা সরানোটা সময়সাপেক্ষ। সেতু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী বলে মনে করছেন পূর্ত দফতরের কর্তারাও।

আরও পড়ুন: জঞ্জালের টানে কাকের ভিড় রবীন্দ্র সরোবরে

সেতু-বিশেষজ্ঞের প্রস্তাবিত পদ্ধতি ঠিক কেমন? রায়না বলছেন, ‘‘এই পদ্ধতিতে শুধু মাটি পরীক্ষার দরকার হয়। সেই কাজে বেশি সময় লাগার কথা নয়। চাইলে পূর্ত দফতর রেলের নকশা যাচাই করতে পারে। তাতে সময় নষ্টের আশঙ্কা থাকে না।’’

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক পার্থপ্রতিম বিশ্বাসের মতে, সেতুর ভারবহনের ক্ষমতা অনুযায়ী নির্দিষ্ট গুণমানের কংক্রিট তৈরির কাজটি সময়সাপেক্ষ। তার নানা ধাপ রয়েছে। সব ক্ষেত্রেই ইন্ডিয়ান রোড কংগ্রেসের নির্ধারিত মাপকাঠি বজায় রেখে চলা বাধ্যতামূলক। পূর্তকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, কংক্রিট সেতুর ক্ষেত্রে স্তম্ভ, ডেক-সহ সামগ্রিক কাঠামোর শক্তি নির্ধারিত মানের হতে হয়। সেতুর প্রতিটি অংশের নির্দিষ্ট নির্মাণগত চরিত্র থাকে। তাই সময় দিয়ে নির্মাণ না-করলে ভবিষ্যতে সেতুর স্বাস্থ্যে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এক কর্তার কথায়, ‘‘এখন সেতু গড়তে হয় ন্যূনতম ১০০ বছরের জন্য। তাই নির্মাণ নিয়ে তাড়াহুড়ো করা চলে না। সব ধরনের রাস্তাই খোলা রাখা হচ্ছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে, কোন পথে নির্মাণকাজ চালালে তা দ্রুত এবং কাঙ্ক্ষিত মানের হবে।’’

রেলের সেতু নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত এক আধিকারিক জানান, ভারবহনের ক্ষমতা ও রোড কংগ্রেসের নির্দেশিকা অনুযায়ী রেলের কাছে নানা ধরনের সেতুর নকশা মজুত আছে। তার সবই রেলের গবেষণা এবং গুণমান নির্ধারক সংস্থা আরডিএসও (রিসার্চ ডিজ়াইন অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অর্গানাইজশন) দ্বারা পরীক্ষিত। ইস্পাতের ওই সব কাঠামো যথেষ্ট পোক্ত। তাতে প্রয়োজনে মরচে নিরোধক স্টিলও ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ঠিক কোন প্রযুক্তিতে সেতুটি তৈরি করা হবে, সেই বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tallah Bridge
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE