Advertisement
E-Paper

দাদারা আড়ালে, সুতোয় নাচছে তোলাবাজেরা

অভিযোগ গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। তবু কেউ ধরা পড়েনি। তাদের মূল পৃষ্ঠপোষক এলাকার দুই তৃণমূল নেতাও আড়ালে থেকে গিয়েছেন। সুগতবাবুর বাড়ির ক্ষেত্রে ছ’জন ধরা পড়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৭ ০২:৫২
পাকড়াও: আদালতের পথে পুলিশ ভ্যানে মুখ ঢেকেছে তোলাবাজির অভিযোগে ধৃতেরা। মঙ্গলবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

পাকড়াও: আদালতের পথে পুলিশ ভ্যানে মুখ ঢেকেছে তোলাবাজির অভিযোগে ধৃতেরা। মঙ্গলবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

তৃণমূল সাংসদ সুগত বসুকে বাড়ি বয়ে এসে হুমকি দিয়ে গিয়েছিল ছয় যুবক। কলকাতা শহরে তোলাবাজদের এমন বেপরোয়া আচরণ নতুন নয়। বেশির ভাগ ঘটনায় তোলাবাজেরা ধরা পড়লেও তাদের পিছনে যে রাজনৈতিক মাথারা থাকেন, তাঁদের ছুঁতে পারে না পুলিশ। তাই সিন্ডিকেটের রমরমার সঙ্গে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তোলাবা়জি।

গত সপ্তাহে দক্ষিণ কলকাতার পাম অ্যাভিনিউয়ে দুই প্রোমোটারের মধ্যে লড়াইয়ে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। পুলিশের তদন্ত বলছে, মাল সরবরাহ নিয়ে পুরনো বিবাদই ঘটনার মূলে। সিন্ডিকেটের লড়াইয়ে সেখানে নাম জড়িয়েছে শাসক দলের কাউন্সিলরের। যদিও পুলিশ ওই কাউন্সিলরকে বাইরে রেখেই মামলা সাজিয়েছে।

বছর কয়েক আগে সুগতবাবুর মতোই অবাক হয়েছিলেন তৃণমূলের তৎকালীন এক রাজ্যসভার সদস্য। দক্ষিণ কলকাতায় নিজের বাড়ির সংস্কার করাচ্ছিলেন। ওই কাজের ঠিকাদারের কাছ থেকে লাখ দুয়েক টাকা চায় স্থানীয় কয়েক জন যুবক। ঠিকাদার জানান, ওটা শাসক দলের এক সাংসদের বাড়ি। যুবকদের উত্তর, সেই জন্যই তিন লাখ ডিসকাউন্ট! না হলে পাঁচ লাখ চাওয়া হত!

অভিযোগ গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। তবু কেউ ধরা পড়েনি। তাদের মূল পৃষ্ঠপোষক এলাকার দুই তৃণমূল নেতাও আড়ালে থেকে গিয়েছেন। সুগতবাবুর বাড়ির ক্ষেত্রে ছ’জন ধরা পড়েছে। কিন্তু ধৃতেরা যাঁদের বলে বলীয়ান, তাঁদের এ বারেও তদন্তের ধারেকাছে রাখা হচ্ছে না বলেই লালবাজার সূত্রের খবর।

বছরখানেক আগের কথা। নিউ আলিপুরের মহাবীরতলার কাছে একটি আবাসনের সংস্কারে সিন্ডিকেটের দাপট শুধু শ্রমিক ও ইমারতি দ্রব্য সরবরাহেই সীমিত থাকেনি। তা বাড়তে বাড়তে এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, ফ্ল্যাটে নতুন এসি বসলেও সিন্ডিকেট টাকা চাইত গৃহস্থের কাছে। পুলিশ অভিযোগ পেয়েও কিছু করেনি।

কলকাতা পুলিশের এক সহকারী কমিশনার কসবায় জমি কিনে বাড়ি তৈরি করছিলেন। কিন্তু তোলাবাজির দাপটে বাড়ি শেষ করতে পারেননি। কয়েক জন নেতা-মন্ত্রীকে ধরেও কাজ হয়নি।

পুলিশকর্তাদের একাংশ মনে করছেন, এখন সিন্ডিকেটের থাবা কেবল শ্রমিক ও ইমারতি দ্রব্য সরবরাহে আটকে নেই। শাসক দলের মদতপুষ্ট সিন্ডিকেট থেকে কর্মী না নিলে বাংলা ছবির শ্যুটিং-ও আটকে যাবে। এ ক্ষেত্রেও সুতোটা শাসক দলের এক বড় নেতার হাতে। পুলিশের এক প্রাক্তন কর্তার মন্তব্য, ‘‘আগে শাসক দল তোলাবাজদের নিয়ন্ত্রণ করত। এখন যেন তোলাবাজরাই নিয়ন্ত্রণ করছে দলকে।’’

বছর কয়েক আগে রাজ্যসভার সাংসদের বাড়িতে যারা তোলা চাইতে গিয়েছিল, তারা জানত বাড়িটি কার। কিন্তু কার বাড়িতে তারা যাচ্ছে, না জেনেই তোলাবাজেরা ঢুকে পড়েছিল সুগতবাবুর বাড়িতে।

দলীয় সাংসদ না হয়ে ছাপোষা সাধারণ মানুষের বাড়িতে যদি তোলাবাজেরা হুমকি দিয়ে যেত, তা হলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসত কি না, সে প্রশ্নও কিন্তু উঠেছে। সুগতবাবু এ দিন বলেন, ‘‘আমি এবং মা দু’জনেই মনে করি, এই ধরনের ঘটনা যার সঙ্গেই ঘটুক, অত্যন্ত খারাপ।’’

Miscreants Political Leaders তোলাবাজ সিন্ডিকেট Extortion Extortionists
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy