প্রতীকী ছবি।
স্মার্ট ফোন বা নেট মারফত হাতে হাতে ছড়াচ্ছে একটি বার্তা— জনজীবন অশান্ত করতে পারে, এমন গুজব কেউ হোয়াট্সঅ্যাপ বা মেসেঞ্জারে পাঠালে বা ফেসবুকে আমাকে ট্যাগ করলে নিজ দায়িত্বে করবেন। আপনি কে, কোন ধর্মের কিচ্ছু না দেখে স্রেফ সাইবার ক্রাইমকে সব জানিয়ে দেব।
সোশ্যাল মিডিয়ায় আর একটি ভিডিও-ও ঘনঘন শেয়ার হচ্ছে। তাতে পরপর লেখা আসছে, নতুন কিছু পোস্ট করার আগে ভাবুন। প্ররোচনায় পা দেবেন না। তাতে হাজারো নিরীহ মানুষ বিপদে পড়তে পারেন।
যে ফেসবুকের একটি পোস্টের সাম্প্রদায়িক উস্কানি থেকে বাদুড়িয়া-বসিরহাটে গোলমালের সূত্রপাত বলে অভিযোগ, সেই সোশ্যাল মিডিয়াই যেন পাপস্খালনের ময়দান। শান্তিকামী আমনাগরিককে ভরসা দিতে টুইটারকে হাতিয়ার করেছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনারও। গুজব রুখতে ১০০ নম্বরে ফোন করতে বলছেন তিনি। তার আগেই অবশ্য প্রতিরোধের বর্ম পরতে শুরু করেছে নাগরিক সমাজ। মুষ্টিমেয় গুজবপ্রেমীর হাবভাবে রীতিমতো ফুঁসছেন কলেজশিক্ষক ইমানুল হক। বললেন, ‘‘একটা হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপে দু’টি ছেলে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে পরপর হিংসার ভিডিও পোস্ট করছিল। ওদের গ্রুপ থেকেই ‘ব্যান’ করে দিয়েছি।’’ বৃহস্পতিবার দুপুরে দেখা যায়, কোনও ভোজপুরি সিনেমার নারী-লাঞ্ছনার দৃশ্য তুলে ধরে মিথ্যা কথা লিখে কারা ইন্টারনেটে ভুয়ো মিমের প্রচার করছে। তাতে দলে দলে প্রতিবাদ করেন নেটিজেনরা। ইনবক্সে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে অনেককে ব্লক করে দেন শান্তিকামীরা। গুজব ছড়ানোর অভিযোগে অনেকের প্রোফাইল বন্ধ করতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে গণ-রিপোর্টও করা হয়।
পুলিশ কমিশনার (কলকাতা)
শান্তির কাছে হার মানুক ঘেন্না। কলকাতা ও লাগোয়া এলাকা শান্তিপূর্ণ। কারা গুজব ছড়াচ্ছে, ১০০ ডায়াল করে জানান। হেল্প আস টু হেল্প ইউ!
‘গুজবে কান দেবেন না’র চিরকেলে আপ্তবাক্যই তুলে ধরছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অনিন্দ্য সেনগুপ্ত। তিনি লিখছেন, ‘যাঁরা উপদ্রুত অঞ্চলের কাছাকাছি আছি, তাঁদের কাজ প্ররোচিত না হওয়া, শান্তি বজায় রাখা।’ সেই সঙ্গে অনিন্দ্যের দুশ্চিন্তা, ‘‘কিছু ভুয়ো প্রোফাইল এবং পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা নন, এমন কারও প্রোফাইল থেকে উস্কানির চেষ্টা দেখছি। সবাইকেই সজাগ থাকতে হবে।’’ উপদ্রুত এলাকায় অ-বাংলাভাষী কিছু বহিরাগত তাণ্ডব শুরু করে বলে টিভি চ্যানেলের কিছু খবরও ফেসবুকেই অনেকে তুলে ধরছেন।
আবার ফেসবুকের ‘নোংরা রসিকতা’র জেরে গোলমাল-ভাঙচুর যারা করল, তাদের উদ্দেশে কড়া বার্তাও আসছে, সাইবার দেওয়াল থেকেই। বহুল পরিচিত ‘নট ইন মাই নেম’ স্লোগানটি উস্কে দিয়ে বেলুড় বিদ্যামন্দির কলেজের দর্শনের শিক্ষক শামিম আহমেদ দৃঢ় স্বরে বলছেন, ‘ধর্মের নামে গত কয়েক দিনের অসহিষ্ণু, বর্বর, মধ্যযুগীয় আচরণকে যাঁরা সমর্থন করেন, তাঁরা আমার ফেসবুক-বন্ধুর তালিকায় থাকবেন না।’ কাদের চক্রান্তে এমন ঘটনা ঘটল, তার তদন্তেরও দাবি করেছেন শামিম। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের গবেষক শাহনওয়াজ আলি রায়হানের টিপ্পনি, ‘‘যে ধর্মপ্রাণরা গোলমাল বাধালেন, তাঁদের আহত অনুভূতি অনেকটা বিজয় মাল্যের দেশপ্রেমের মতো। ব্যাঙ্কের ঋণ চোকানোর মুরোদ নেই, কিন্তু ফেরার হয়েও টিমকে সাপোর্ট করতে স্টেডিয়ামে হাজির!’’
আরও পড়ুন:কেন এত হিংসা, মন খারাপ আলতাপের
শুক্রবার রাত থেকে বন্ধ ব্রেবোর্ন রোড
হাওড়ামুখী বাস ধর্মতলা থেকে বিদ্যাসাগর সেতু হয়ে যাবে।
হাওড়া স্টেশন থেকে ধর্মতলামুখী বাসও বিদ্যাসাগর সেতু দিয়ে চলাচল করবে।
উত্তরমুখী সব গাড়ি স্ট্র্যান্ড রোড দিয়ে চলবে।
স্ট্র্যান্ড রোড দিয়ে দক্ষিণ দিকে যেতে পারবে কেবল হাওড়া স্টেশনমুখী বাস।
মহাত্মা গাঁধী রোড দিয়ে হাওড়ার দিকে সব গাড়ি চলবে।
মহাত্মা গাঁধী রোড দিয়ে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের দিকে শুধু বাস চলাচল করবে।
ফেসবুকের দেওয়াল থেকেই রত্নাবলী রায়, মিতালি বিশ্বাসদের মতো অনেকে দাঙ্গার বিরুদ্ধে বারাসত স্টেশনে পদযাত্রার কথা লিখেছিলেন। সেই মিছিলে অনেকেই যোগ দিয়েছেন। কাকদ্বীপের সদ্য কলেজ পাশ করা যুবক শেখ সাহেবুল হকের আবার আশঙ্কা, ফেসবুকে ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরিতে বাংলার অল্পবয়সি ছেলেদের ব্যবহার করা হচ্ছে। নিজের ভাইয়ের মতো তাঁদের আগলে রাখার কথা বলেছেন সাহেবুল।
ভাল-মন্দের দ্বন্দ্বে সোশ্যাল মিডিয়াকেও কিন্তু ভিলেন ঠাউরাতে চান না মনোরোগের চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম। তাঁর কথায়, ‘‘এখনও বলব, ফেসবুকটুকের ভাল দিকই বেশি। ভুলভাল পোস্টকে ব্যবহার করে অশান্তি বাধানোর পিছনে সব সময়ে আরও সংগঠিত অশুভ শক্তির হাত থাকে। স্রেফ একটা পোস্ট থেকেই এত কিছু কখনও ঘটে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy