পথচারীকে পিষে মেরে পালাচ্ছে ঘাতক গাড়ির। পিছনে ক্ষিপ্ত জনতা। তারও পিছনে লালবাতির একটি গাড়ি। শেষমেষ প্রায় ফিল্মি কায়দায় ঘাতক গাড়িটিকে ধরেই ফেললেন লালবাতির গাড়িতে থাকা দাপুটে আইপিএস অফিসার। কিন্তু আট মাস পরে দেখা গেল সেই ‘হিরো’ আইপিএস আদতে ভুয়ো।
তদন্তে নেমে কসবা থানার পুলিশ গ্রেফতার করেছে সৌমেনকুমার সূর্যবংশী নামের বছর উনত্রিশের ওই ‘ভুয়ো’ আইপিএসকে। ঘটনার সূত্রপাত এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। গড়িয়াহাটের কাছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক কণিষ্ক মজুমদারের গাড়ি এক পথচারীকে পিষে দিয়ে পালিয়েছিল। বিজন সেতু থেকে নেমে গড়িয়াহাটের দিকে এসে কণিষ্কের কালো স্করপিওটি পর পর ধাক্কা মারে একটি লাক্সারি ট্যাক্সি, হলুদ ট্যাক্সিকে এবং শেষমেষ পিষে দেয় এক ভবঘুরেকে। এর পরেই উন্মত্ত জনতা ধাওয়া করে গাড়িটিকে। কিয়স্কের পুলিশ তাড়া করেও ধরতে পারেনি ঘাতক গাড়িটিকে।
তার পরেই সাধারণ মানুষ দেখে একটি লালবাতি লাগানো গাড়ি ধাওয়া করে ওই কালো স্করপিওকে। ধরেও ফেলে অভিযুক্ত কণিষ্ককে। গাড়ির যুবক জানান, তিনি বোকারোর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৌমেনকুমার সূর্যবংশী। তিনি জানিয়েছিলেন, কণিষ্ককে ধরে তিনি লালবাজারে ফোন করে বিষয়টি জানান। তার পর পুলিশ এসে অভিযুক্তকে ধরে নিয়ে যায়। এই ঘটনার পর কেটে গিয়েছে আট মাসেরও বেশি। বৃহস্পতিবার মাঝরাতে ওই ‘ভুয়ো’ আইপিএসকেই বাগুইআটির চিনার পার্কের ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার করেছে কসবা থানার পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, সূর্যবংশী ভুয়ো আইপিএস পরিচয় ব্যবহার করত। ফ্ল্যাট থেকে বহু ভুয়ো পরিচয়পত্রও উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, কণিষ্কের ঘটনার তদন্ত চলার সময়েই পুলিশের সন্দেহ হয়। পুলিশ জানতে পারে, বাগুইআটিতে সূর্য়বংশীর প্রতিবেশীদের তরফে নানা অভিযোগ উঠে আসছিল। প্রতিবেশীদের অনেকেই জানান, পুলিশ পরিচয় দিয়ে সূর্যবংশী তাঁদের হুমকি দিত, চলত চোটপাট। এর পরেই পুলিশ নিজে থেকেই একটি অভিযোগ দায়ের করে সূর্যবংশীর বিরুদ্ধে। যদিও কণিষ্ক মজুমদারের দাবি, ফেব্রুয়ারির দুর্ঘটনার রাতে তাঁকে ধাওয়া করে ধরে ফেলার পর টাকা দাবি করে সূর্যবংশী। সেই সময়েই তিনি পুলিশকে এই বিষয়ে অভিযোগ জানান।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত সৌমেনের বাড়ি জামশেদপুর। দ্বাদশ শ্রেণি উত্তীর্ণ সৌমেন ২০১০ সাল থেকে কলকাতায় যাতায়াত শুরু করে। প্রথমে সে কসবার ভাড়া বাড়িতে থাকত। পরে বাগুইআটির চিনার পার্কে উঠে আসে।