ফাইল চিত্র।
গত কুড়ি দিনে শহরে পুরনো বাড়ির অংশ ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছে ১৮টির মতো। সোমবারের ভারী বর্ষণেও ওই ধারা অব্যাহত ছিল বলে পুলিশ সূত্রের খবর। শুধুমাত্র ওই ২৪ ঘণ্টাতেই বাড়ি ভাঙার ঘটনা ঘটেছে চারটি। কোথাও সিঁড়ি বা বারান্দা ভেঙে রাস্তায় গিয়ে পড়ছেন বাড়ির বাসিন্দারা। কোথাও আবার ভাঙা বাড়ির নীচে চাপা পড়ে কেটে গিয়েছে কয়েক ঘণ্টা! প্রশ্ন উঠছে, বৃষ্টি তো হবেই, কিন্তু বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনা থামবে কবে? এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের ভূমিকাই বা কী?
কলকাতা পুর এলাকার ক্ষেত্রে বাসিন্দাদের একাংশের অসচেতনতাকেই দায়ী করেছেন পুর প্রশাসনের কর্তারা। তাঁদের দাবি, একাধিক বার পুর আইন সংশোধন করেও পুরনো বাড়ি সংস্কারে উৎসাহিত করা যায়নি এখনও। বছর পাঁচেক আগেই পাশ হয় পুর আইনের ৪১২(এ) ধারা। যাতে পুরনো বাড়ির সংস্কারে উৎসাহ দিতে একাধিক ছাড় ঘোষণা করা হয়েছিল। বলা হয়, বিপজ্জনক বাড়ি ঘোষণা করে পাঠানো নোটিসকে ‘কনডেমড’ নোটিস বলে ধরা হবে। তবে কমডেমড হলেও এতে মালিককে বাড়ি ভেঙে নতুন করে নির্মাণের সুযোগ দেওয়া হবে। সে জন্য ‘ফ্লোর এরিয়া রেশিয়ো’র (এফএআরএ) ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে বলেও ঘোষণা করা হয়। অভিযোগ, তবুও পুরনো বাড়ি সংস্কারে উৎসাহ দেখা যায়নি। ওই আইনে আরও যুক্ত করা হয় যে, মালিক ওই সংস্কার করতে না পারলে, সংস্থা নিয়োগ করে সেই কাজ করে দেবে পুরসভা। তবে কাজের খরচ মেটাতে হবে বাড়ির মালিককে। এর পরেও কোথাও শরিকি বিবাদে, কোথাও আবার স্রেফ টাকা খরচ করতে না চাওয়ায় পুরনো বাড়ি আঁকড়ে থেকে গিয়েছেন অনেকে। এমনকি, বৃষ্টির পূর্বাভাস পেয়ে পুলিশের তরফে বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হলেও তাঁরা যেতে রাজি হন না বলে অভিযোগ।
যেমন, বড়তলা থানা এলাকার একটি বাড়ির বাসিন্দাদের আগেভাগে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল পুলিশ। কিন্তু আট ঘর ভাড়াটের কেউই সরতে রাজি হননি। এর পরেই বৃষ্টির রাতে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে বাড়িটির এক দিকের বারান্দা। একই ভুল করেছিলেন আমহার্স্ট স্ট্রিটের প্রায় ২০০ বছরের পুরনো বাড়ির বাসিন্দারা। স্থানীয় পুর প্রশাসক তাঁদের সরিয়ে নিতে চাইলেও বাড়ি ফাঁকা হয়নি। বৃষ্টি শুরু হতেই বাড়ির পাঁচিলের একাংশ ভেঙে পড়ে আটকে যান ছ’জন। তাঁদের মধ্যে দুই বৃদ্ধকে উদ্ধারের পরে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। এক পুরকর্তার কথায়, “সতর্ক করেও সরানো যায়নি পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিট বা মহাত্মা গাঁধী রোডের বহু বছরের পুরনো বিপজ্জনক বাড়ির বাসিন্দাদের।”
নারকেলডাঙা থানা এলাকার গৌরীশঙ্কর ঘোষাল লেনের ৯ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা পূজা সিংহ দাবি করছেন, “পুরসভা থেকে আমাদের বাড়িতে বিপজ্জনক বোর্ড লাগিয়ে দিয়েছে। এর পর থেকে বাড়ি সংস্কার করাব বলে ছুটে বেড়াচ্ছি। পুরসভা পুলিশের কাছে পাঠাচ্ছে, আর পুলিশ পুরসভার কাছে।” ওই বাড়িরই আর এক বাসিন্দার দাবি, “পুরসভা ৪১২ (এ) ধারার কথা বললেও এতে সমস্যা হল, বললেই কনডেমড হয়ে যায় না। সে ক্ষেত্রে বাড়ির মালিককে সুযোগ দিতে হয়। এ জন্য শুনানি (হিয়ারিং) হয়। করোনার জেরে গত প্রায় দু’বছর ধরে তো সে সব হচ্ছে না। পুরনো বাড়ির বাসিন্দারা ঘুরতে ঘুরতেই মরে যাচ্ছেন।”
কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের শীর্ষ কর্তা শুনানির সমস্যা মেনে নিয়েই বললেন, “পুরনো বাড়ি সংস্কারের ক্ষেত্রে পুর আইনের ১৪২ নম্বর ধারা আরও বেশি কার্যকর। ওই ধারা অনুযায়ী, ভাড়াটেরা যে জায়গা ভোগ করছেন, সমপরিমাণ জায়গা ছাড় হিসাবে পেতে পারেন বাড়ির মালিক। এ ক্ষেত্রেও সমস্যা হল, বাড়ির মালিককে সুবিধা দিতে গিয়ে চার পাশের ছাড়ের জায়গা কমে যাচ্ছে। দমকল আপত্তি করছে। সব মিলিয়ে জট কাটছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy