মেয়ের মৃত্যুর খবরে বিপর্যস্ত কুহেলির মা-বাবা।—ফাইল চিত্র।
টানা কয়েক ঘণ্টা না খেয়ে নেতিয়ে পড়া মেয়েকে কড়া ডোজের অ্যানাস্থেশিয়া ও তার পরে ফের ঘুমের ওষুধ দেওয়ার জেরেই কি আর জ্ঞান ফিরল না তার? এই প্রশ্নই কুরে কুরে খাচ্ছে চার মাসের গুঞ্জা চক্রবর্তীর বাবা-মাকে। আর এই প্রশ্ন নিয়েই বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য দফতর ও নবগঠিত স্বাস্থ্য কমিশনের দ্বারস্থ হন তাঁরা। তাঁদের প্রশ্ন, এত জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকা সত্ত্বেও কেন তাঁদের মেয়ের এমন পরিণতি হল? কোন গাফিলতির কারণে? এর শেষ দেখে ছাড়বেন বলেও জানান তাঁরা।
এ দিন প্রথমে স্বাস্থ্য ভবনে যান গুঞ্জার বাবা অভিজিৎ চক্রবর্তী। স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর কাছে লিখিত অভিযোগ নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। বিশ্বরঞ্জনবাবু স্বাস্থ্য ভবনে ছিলেন না। স্বাস্থ্য দফতরের অন্য কর্তাদের কাছে অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান অভিজিৎবাবু। জানিয়ে দেন, সদ্য গড়ে ওঠা স্বাস্থ্য কমিশনেও অভিযোগ দায়ের করবেন তাঁরা।
এ দিন অ্যাপোলো-র সিইও রানা দাশগুপ্তকে স্বাস্থ্য ভবনে ডাকা হয়। ঠিক কী হয়েছিল গুঞ্জার, কোলোনোস্কোপি করার সময়ে কোনও জটিলতা হয়েছিল কি না, কী কী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন তাঁরা, সবটাই বিশদে জানতে চাওয়া হয়। অ্যাপোলোর পরিষেবায় যে বদলগুলি আনতে বলা হয়েছিল, সেগুলি আনা হয়েছে কি না, সে ব্যাপারেও জানতে চাওয়া হয়। এই ঘটনায় নথি চেয়েছে ফুলবাগান থানা। সেই নথি দেখে চিকিৎসায় যাঁরা যুক্ত ছিলেন, তাঁদের ডাকা হবে।
গুঞ্জার পরিবার অ্যাপোলোর বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য কমিশনেও অভিযোগ দায়ের করে। অভিজিৎবাবু জানান, প্রয়োজনে তাঁরা আদালতেও যাবেন।
শনিবার বিকেলে অ্যাপোলোয় ভর্তি হয় গুঞ্জা। পরিবারের অভিযোগ, শনি-রবি দু’দিন ছুটি বলে চিকিৎসাই হয়নি। সোমবার কোলোনোস্কোপির কথা বলেন চিকিৎসকেরা। সে জন্য দিনভর খালি পেটে রাখা হয় শিশুটিকে। বিকেলে জানানো হয়, কোলোনোস্কোপি হবে না। পরদিন মঙ্গলবার ফের সাত ঘণ্টা খালি পেটে রাখা হয় তাকে। বিকেলে যখন কোলোনোস্কোপি-র জন্য নিয়ে যাওয়া হয়, তখন সে নেতিয়ে পড়েছিল।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ দিন দাবি করেন, শিশুটিকে আশঙ্কাজনক অবস্থাতেই আনা হয়। মঙ্গলবার কোলোনোস্কোপির পরে সে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়। তখন ভেন্টিলেশন দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গেলেও বুধবার সকালে দ্বিতীয় অ্যাটাক সামলানো যায়নি।
তবে শুধু অ্যাপোলো নয়, কেন ইএসআই হাসপাতালে রেফার করেছিল তাঁর মেয়েকে, সেই নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অভিজিৎবাবু। তাঁর প্রশ্ন, কতটা জরুরি ছিল কোলোনোস্কোপি? একটু স্থিতিশীল করে তার পরেও সেটা হতে পারত। বিষয়টির তদন্ত শুরু হয়েছে। মেডিক্যাল ভিজিল্যান্স অফিসারকে ওই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে ইএসআই কর্পোরেশন। অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ওই রিপোর্ট তৈরি করতে বলা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy