Advertisement
২৭ জুলাই ২০২৪
Tiljala Rampage

তিলজলায় তাণ্ডবের নেপথ্যে কি রাজনীতি? ভাঙচুর, অশান্তিতে বিরক্ত মৃত শিশুর পরিজন-পড়শিরা

স্থানীয়েরাই প্রথমে বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন। এলাকায় যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, তার জন্যই নৃশংস ওই কাণ্ডের প্রতিবাদে নামেন তাঁরা। কিন্তু সেই আন্দোলন কিছু ক্ষণ পরে ‘বেহাত’ হয়ে যায়।

Tiljala

তিলজলায় তাণ্ডবের পিছনে কাদের হাত ছিল? ফাইল চিত্র।

চন্দন বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৩ ০৬:৪১
Share: Save:

প্রতিবাদের নামে দিনভর চলা তাণ্ডব কি স্বতঃস্ফূর্ত? না কি, তার পিছনে কাজ করেছে কোনও রাজনৈতিক অভিসন্ধি? তিলজলায় এক নাবালিকাকে খুনের ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার ঘটে যাওয়া তাণ্ডবের পরে আপাতত এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন এলাকার বাসিন্দারা। একই প্রশ্ন মৃতার পরিবারেরও। প্রতিবাদের নামে চলা এমন বিক্ষোভে তাঁদের বিন্দুমাত্র সায় ছিল না বলে স্পষ্ট জানাচ্ছেন ওই শিশুটির পরিজনেরা। আর এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে বিক্ষোভের নামে দিনভর পুলিশের গাড়িতে আগুন, রেল অবরোধ-সহ এমন তাণ্ডব চলল কেন? কাদের প্ররোচনায়?

এই ‘কেন’র উত্তর খুঁজতে এলাকায় গিয়ে কান পাততেই জানা গেল একের পর এক তথ্য। যা সে দিনের বিক্ষোভকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাচ্ছে। বাসিন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, মহিলাদের সঙ্গে নিয়ে স্থানীয়েরাই প্রথমে বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন। এলাকায় যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, তার জন্যই নৃশংস ওই কাণ্ডের প্রতিবাদে নামেন তাঁরা। কিন্তু সেই আন্দোলন কিছু ক্ষণ পরে ‘বেহাত’ হয়ে যায়। শেষের দিকে প্রতিবাদের নামে যাঁরা রাস্তায় নেমে তাণ্ডব শুরু করেছিলেন, তাঁদের অনেককে তাঁরা চেনেন না বলেও দাবি করছেন স্থানীয়েরা। এমনকি, তাঁদের দাবি, অন্যান্য এলাকা থেকে বহিরাগত অনেকে এসে ওই তাণ্ডবে যোগ দিয়েছিলেন। যার পিছনে রাজনৈতিক মদত রয়েছে বলেই সন্দেহ স্থানীয়দের একাংশের। শুধু তা-ই নয়, কসবার এক কুখ্যাত দুষ্কৃতীর সঙ্গীদেরও সোমবার ঘটনাস্থলে দেখা গিয়েছে বলে খবর।

স্থানীয় এক দোকানির কথায়, ‘‘দুপুরের পর থেকে ভিড় বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে উত্তেজনার পারদও চড়তে থাকে। আচমকাই পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি থেকে ভাঙচুর, আগুন লাগানো শুরু হয়। পিছনে রাজনৈতিক মদত না থাকলে এটা করা সম্ভব নয়।’’ একই বিবরণ উঠে আসছে স্থানীয় বাসিন্দা সুভাষ মল্লিকের কথাতেও। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ রেল অবরোধের সময়ে একটি রাজনৈতিক দলের ধর্মীয় স্লোগান বারকয়েক শুনেছিলেন বলেও দাবি করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় যুবক বললেন, ‘‘আমরা বিচার চেয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছিলাম। এর মধ্যে ট্রেনের সামনে উঠে কয়েক জন হঠাৎ করে অন্য স্লোগান দিতে শুরু করলেন। আমরাই তখন এই ঘটনার সঙ্গে এ সব জড়াতে বারণ করি।’’

রাজনৈতিক যোগের ইঙ্গিত উঠে এসেছে শিশুটির দাদুর কথাতেও। তিনি বলেন, ‘‘আমরা তো চাইনি যে, প্রতিবাদের নামে তাণ্ডব হোক। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, গাড়িতে আগুন— এ সব আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না। মানুষের ভোগান্তি বাড়িয়ে তো নাতনিকে আর ফিরে পাব না। কেন, কারা এমনটা করল, জানি না। এ সবের জেরে আমাদের মেয়েটা শেষ বারের জন্য বাড়িতেও ফিরতে পারল না।’’

যদিও প্রতিবাদের নামে রাস্তায় নেমে ঘটানো তাণ্ডবের সঙ্গে রাজনীতির নাম জড়িয়ে যাওয়া এটাই প্রথম নয়। শহরের একাধিক ঘটনায় আগেও বহু বার শাসক থেকে বিরোধী, সব পক্ষের নাম জড়িয়েছে। তিলজলার তাণ্ডবের পিছনেও তাই রাজনীতির কারবারিদের ভূমিকা দেখে পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয়েরাও অবাক হচ্ছেন না। ওই ডিভিশনের এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘শিশু-মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিবাদ, বিক্ষোভ স্বাভাবিক। কিন্তু যেখানে অভিযুক্তকে সঙ্গে সঙ্গেই ধরা হয়েছে, সেখানে প্রতিবাদের নামে কী ভাবে এক দিন পরেও এমন তাণ্ডব চলতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন তো থাকবেই। যেখানে প্রায় সব কিছুতেই রাজনীতি জুড়ে যায়, সেখানে এমন তাণ্ডবে রাজনৈতিক মদত যে থাকবে, সেটাও অস্বাভাবিক নয়। তদন্ত এগোলেই সব বেরিয়ে আসবে। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tiljala rampage tiljala Crime Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE