মৃত ম্যানহল সাফাই কর্মীরা। —ফাইল চিত্র।
চার বছর আগে তরতাজা তিন ছেলের অকালমৃত্যু
এখনও প্রতিদিন ভারাক্রান্ত করে তোলে ওঁদের। ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি কুঁদঘাটের পাম্প হাউসের কাছে ম্যানহোলে নেমে
কাজ করতে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাসে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছিল মালদহের হরিশচন্দ্রপুরের চার যুবকের। যাঁদের মধ্যে তিন জন
একই পরিবারের। রবিবারও বানতলায় ম্যানহোলে ঢুকে কাজ করতে গিয়ে একই ভাবে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের।
রবিবার বানতলার ঘটনার কথা শুনে ও মৃতদের ছবি দেখে
নিজেদের তিন ছেলের কথাই মনে পড়ছিল মালদহের হরিশচন্দ্রপুরের তোরাব আলি ও রোজিনা বিবির। সোমবার এ বিষয়ে প্রশ্ন
করা হলে ফোনে তোরাব ও রোজিনা বলেন, ‘‘প্রশাসনের গাফিলতিতেই আমাদের তিনটি তরতাজা ছেলের প্রাণ চলে গিয়েছে। বানতলায় ফের একই ভাবে তিন জনের মৃত্যু হল। ছেলেদের মৃত্যুর পরে চার বছর পেরিয়ে গিয়েছে। আমরা পুরোপুরি নিঃস্ব। সামান্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া ছাড়া সরকার আর কী করেছে? যাঁদের দোষে অকালে আমাদের তিন ছেলের প্রাণ গিয়েছে, প্রশাসন তাঁদের বিরুদ্ধে কেন কোনও ব্যবস্থা নিতে পারল না?’’
কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, ২০২১-এর ২৫ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ কলকাতার কুঁদঘাটে
ম্যানহোলে নেমে কাজ করার সময়ে মিথেন গ্যাসের সংস্পর্শে আসায় মৃত্যু হয়েছিল হরিশচন্দ্রপুরের চার যুবকের। তাঁদের মধ্যে তিন জন, মহম্মদ আলমগির (২৮),
জাহাঙ্গির আলম (২৩) এবং সাবির আলম (১৭) সহোদর ভাই। পুরসভা সূত্রের খবর, সেই ঘটনার পরে তাদের তরফে তদন্ত কমিটি গড়া হলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করা ছাড়া কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। পুরসভার কোনও আধিকারিক বা
পুরপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, ম্যানহোলে কাউকে নামিয়ে কাজ করানো সম্পূর্ণ
বেআইনি। কিন্তু আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সেই কাজ যে চলছেই, বানতলায় রবিবারের ঘটনা ফের চোখে আঙুল দিয়ে তা দেখিয়ে দিল। রবিবার রাতে বাড়িতে বসে টিভিতে বানতলার খবর দেখে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন তোরাব ও রোজিনা। তিন ছেলেই চলে যাওয়ায় বয়স হলেও
দিনমজুরি করেই সংসার চলে তোরাবের। তাঁর কথায়, ‘‘আমার তিন ছেলেকে কোনও
রকম সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই ম্যানহোলের নীচে নামানো হয়েছিল। বিষাক্ত গ্যাসে দমবন্ধ হয়ে মারা যায় ওরা। আমার ছেলেদের মৃত্যুর পরে ক্ষতিপূরণ বাবদ কিছু টাকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এত বড় একটি ঘটনা, যা চারটি প্রাণ কেড়ে নিল, তার দায় কে নেবে? পুরসভা কোনও আধিকারিক বা পুরপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল না কেন?’’ রোজিনা বলছিলেন, ‘‘এক সঙ্গে তিন ছেলের অকালমৃত্যু আমাদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। কোনও রকম নিরাপত্তা ছাড়া কেন ওদের ম্যানহোলে নামানো হয়েছিল? এর দায় কেন নেবে না প্রশাসন?’’ তোরাবের প্রশ্ন, ‘‘ক্ষতিপূরণ দিয়েই দায়িত্ব শেষ?’’
পুরসভার এক শীর্ষ কর্তার অবশ্য দাবি, ‘‘ওই কাজ হচ্ছিল কেইআইআইপি-র অধীনে। যে সংস্থা কাজ করছিল, তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বলে জানি। এখানে পুরসভার কিছু করণীয় নেই। পুরসভার কোনও আধিকারিক এই কাজের তত্ত্বাবধানে ছিলেন না।’’
একটি মানবাধিকার সংগঠনের তরফে পুরসভার বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে হাই কোর্টে মামলা করা
হয়েছিল। ওই সংগঠনের তরফে আলতাব আহমেদের অভিযোগ, ‘‘কুঁদঘাটের ওই ঘটনায় পুরসভা নামেই তদন্ত কমিটি
গঠন করেছিল। তার বেশি কিছু করেনি। সেই কারণেই আমরা পুরসভার বিরুদ্ধে হাই কোর্টে মামলা করেছিলাম।
বিষয়টি এখনও বিচারাধীন অবস্থায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy