Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in Koplkata

কোভিড শঙ্কায় ছুঁল না কেউ, ফ্রিজারে রইল বৃদ্ধের দেহ

পরিবারের দাবি, স্বাস্থ্য ভবনের তরফে দেওয়া দুই আধিকারিকের নম্বরে ফোন করা হয়। কিন্তু, কেউ ফোন ধরেনি বলে অভিযোগ।

রাজা রামমোহন রায় সরণির সেই আবাসন।

রাজা রামমোহন রায় সরণির সেই আবাসন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২০ ১৭:১০
Share: Save:

শরীরে কোভিডের উপসর্গ ছিল। তার জেরে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা ধরে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা গেল না ৭১ বছরের এক বৃদ্ধের। পচন রুখতে ফ্রিজারে দেহ রাখতে হল পরিবারকে। দু’দিন বাদে বুধবার দুপুরে ওই বৃদ্ধের দেহ নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে কলকাতা পুরসভা। তত ক্ষণে যদিও কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে মোহন মল্লিক নামে ওই বৃদ্ধের।

আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা এলাকার ৯৬-এ রাজা রামমোহন রায় সরণির একটি আবাসনে পাঁচতলার বাসিন্দা ছিলেন মোহন মল্লিক। কয়েকদিন আগে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর ভাইপো অক্ষয় মল্লিক এ দিন বলেন, ‘‘আমরা অসুস্থ কাকাকে প্রথমে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাই। তিনি কোভিড পরীক্ষার পরামর্শ দেন।” এর পর সোমবার সকালে একটি বেসরকারি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করান মোহনবাবু। কিন্তু বাড়ি ফিরে আসার পর তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। পরিবারের দাবি, ওই দিন বেলা ৩টে নাগাদ তিনি মারা যান বাড়িতেই। এর পর ডেথ সার্টিফিকেটের জন্য প্রথমে মোহনবাবু যে চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন, তাঁকে খবর দেয় পরিবার। সেই চিকিৎসক পিপিই কিট পরে এসে মোহনবাবুর দেহ পরীক্ষা করে দেখেন। কিন্তু মৃত্যুর শংসাপত্র দিতে রাজি হননি। মোহনবাবুর পরিবারকে তিনি জানান, রোগীর দেহে কোভিডের উপসর্গ ছিল। তাই যত ক্ষণ না রিপোর্ট আসছে, তত ক্ষণ শংসাপত্র দেওয়া সম্ভব নয়।

ওই একই আবাসনের বাসিন্দা পুরঞ্জিৎ শীল। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘ওই চিকিৎসকের পরামর্শে স্থানীয় থানাতে যোগাযোগ করে পরিবার। কিন্তু থানা পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে।” পরিবারের অভিযোগ, পুরসভা জানায়, তাঁরা কিছু করতে পারবে না। যা করার স্বাস্থ্য দফতর করবে। পরিবার স্বাস্থ্য দফতরের হেল্প লাইনে ফোন করেন। কিন্তু অভিযোগ, সেই ফোন কেউ ধরেননি। পুলিশের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে। তারা দফতরের দুই আধিকারিকের নম্বর দিয়ে জানায়, মৃতের রিপোর্ট পজিটিভ এলে তাঁদের যোগাযোগ করতে।

আরও পড়ুন: ‘এলএসি পেরিয়ে বেজিং যাবার ইচ্ছে? গাড়ি ঘোরান!’

ইতিমধ্যে প্রচণ্ড গরমে মোহনবাবুর দেহে পচন শুরু হয়ে যায়। দুর্গন্ধ বেরোতে শুরু করে। অক্ষয়ের কথায়, ‘‘আমরা একটা ফ্রিজারের ব্যবস্থা করে দেহ ঢুকিয়ে রাখি। পিস হাভেন বা শহরের অন্য যে সব জায়গায় দেহ রাখা হয় সামিয়ক ভাবে, তারা কাকার দেহ রাখতে রাজি হয়নি। ওদের যুক্তি, কাকা কোভিড পজিটিভ কি না তা স্পষ্ট নয়। তাই রাখা যাবে না।’’ সে কারণে ফ্রিজার ভাড়া করে নিজেদের ফ্ল্যাটেই মোহনবাবুর দেহ রাখতে বাধ্য হয় মল্লিক পরিবার।

আরও পড়ুন: গুগল ক্রোম এক্সটেনশন নিয়ে সতর্ক করল কেন্দ্রীয় সংস্থা

পুলিশ সূত্রে খবর, যে ল্যাবে মোহনবাবুর করোনা পরীক্ষা হয়েছিল, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। জরুরি ভিত্তিতে রিপোর্ট দিতে অনুরোধও করা হয় পুলিশের তরফে। সারা দিন কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত ওই ল্যাব থেকে মঙ্গলবার রাত ১১টার সময়ে জানানো হয়, মোহনবাবুর রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। পরিবারের দাবি, এর পরেই তারা স্বাস্থ্য ভবনের তরফে দেওয়া দুই আধিকারিককে ফোন করতে থাকেন। কিন্তু, মোবাইল বেজে যায়। কেউ ফোন তোলেননি বলে অভিযোগ। ফ্রিজারে দেহ রেখেই ফ্ল্যাটেই অপেক্ষা করতে থাকেন মোহনবাবুর পরিবার।

অক্ষয় জানান, শেষ পর্যন্ত বুধবার সকালে ফোন ধরেন ওই আধিকারিকদের এক জন। তিনি সব শুনে মোহনবাবুর পরিবারকে জানান, স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে পুরসভাকে জানানো হচ্ছে। এক ঘণ্টার মধ্যে পুরসভার গাড়ি দেহ নিয়ে যাবে। যদিও, ওই আবাসনের বাসিন্দাদের দাবি, পুরসভার গাড়ি এসে পৌঁছয় এ দিন বেলা দেড়টা নাগাদ। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরের কোনও কর্তা কোনও মন্তব্য করেননি। পুরসভা সূত্রে খবর, রিপোর্ট পাওয়ার পরই আইসিএমআর-এর নিয়ম মেনে ওই বৃদ্ধের শেষকৃত্যের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in Koplkata Covid 19 Amherst Street
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE