Advertisement
E-Paper

‘আমার চেয়ে বড় মস্তান কেউ নেই’, শাসানি ইউনিট হেডের

পুলিশ জানায়, দিন দুয়েক আগে ঐত্রী সর্দি-জ্বর নিয়ে আমরি হাসপাতালের শিশুরোগ চিকিৎসক জয়তী সেনগুপ্তের অধীনে ভর্তি হয়েছিল। ধীরে ধীরে সুস্থও হয়ে উঠেছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৪৩
হাহাকার: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন শম্পাদেবী। ঐত্রী দে (ইনসেটে)।

হাহাকার: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন শম্পাদেবী। ঐত্রী দে (ইনসেটে)।

হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে গিয়ে মায়ের কাছে ডিম খাবে বলেছিল একরত্তি মেয়েটি। বুধবার হাসপাতাল থেকে ছুটি মিলল তার। তবে বাড়ির বিছানা নয়, হাসপাতাল থেকে সে সোজা গেল মর্গে! এ দিন বিকেলে মুকুন্দপুরের আমরি হাসপাতাল থেকে আড়াই বছরের ঐত্রী দে-র দেহ যখন মর্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য পুলিশের গাড়িতে তোলা হচ্ছে, তখন হাসপাতালের করিডরে আছা়ড়িপিছা়ড়ি খেয়ে কাঁদতে কাঁদতে মেয়ের শেষ আব্দারের কথাই বলছিলেন তার মা শম্পা দে।

পুলিশ জানায়, দিন দুয়েক আগে ঐত্রী সর্দি-জ্বর নিয়ে আমরি হাসপাতালের শিশুরোগ চিকিৎসক জয়তী সেনগুপ্তের অধীনে ভর্তি হয়েছিল। ধীরে ধীরে সুস্থও হয়ে উঠেছিল। এ দিন সকালে আচমকাই মৃত্যু হয় তার। ঐত্রীর পরিবারের অভিযোগ, এ দিন সকালে দু’টি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় তাকে। তার পরেই সে মারা যায়। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা।

আচমকা মারা যাওয়া একরত্তি শিশুটির মা এবং পরিবারের অন্যদের সঙ্গে এ দিন চরম দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। শিশুটি কেন মারা গেল, তা নিয়ে যখন হাসপাতালে তার পরিবারের লোকজন সরব হন, তখনই ইউনিট হেড জয়ন্তী চট্টোপাধ্যায় রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন বলে অভিযোগ। শিশুটির পরিবারের অভিযোগ, জয়ন্তী প্রথমেই তাঁদের উপরে চড়াও হয়ে বলেন, ‘‘আগে গাফিলতি প্রমাণ হোক। তার পরে কথা বলবেন। শিশুর মা ডাক্তার নন।’’ আরও অভিযোগ, শিশুটির পরিজনেরা তাঁর কথার প্রতিবাদ করলে জয়ন্তী আরও গলা চড়িয়ে বলেন, ‘‘এখানে মস্তানি করবেন না। আমার চেয়ে বড় মস্তান এখানে কেউ নেই।’’ এতেই আরও খেপে যান শিশুর আত্মীয়েরা। কয়েক ঘণ্টা পরে অবশ্য জয়ন্তী এসে কান ধরে দায়সারা গোছের ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। দাবি করেন, তাঁর হাত ধরে মুচড়ে দেওয়া হয়েছিল। তার কোনও প্রমাণ তিনি অবশ্য দেখাতে পারেননি।

আরও পড়ুন: সাতটাতেও ‘স্বাভাবিক’, দশটায় এল মৃত্যুসংবাদ

চিকিৎসক জয়তী সেনগুপ্ত এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। তবে আমরি হাসপাতালের বক্তব্য, আচমকাই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছিল শিশুটির। প্রাণদায়ী ওষুধেও কাজ হয়নি। আমরি-র সিইও রূপক বড়ুয়া বলেন, ‘‘চিকিৎসায় গাফিলতি ছিল না।’’ হাসপাতালের তরফে শিশুরোগ চিকিৎসক বিচিত্রভানু সরকারের বক্তব্য, ‘‘কী কারণে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হল, তা বুঝতে ময়না-তদন্ত জরুরি।’’

শিশুটির হার্টের কোনও অসুখ ছিল কি না বা কোনও শারীরিক সমস্যা তৈরি হয়েছিল কি না, তা এত ব়ড় হাসপাতালের বিশিষ্ট চিকিৎসকেরাও বুঝতে পারলেন না কেন? এ ব্যাপারে হাসপাতালের তরফে কোনও সদুত্তর মেলেনি। শম্পাদেবী বলেন, ‘‘আমার মেয়ের কোনও হার্টের রোগ ছিল না। শহরের এক বিশিষ্ট চিকিৎসক ওর যাবতীয় পরীক্ষা করেছিলেন।’’

আমরি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা ও ব্যবহার নিয়েও এ দিন ক্ষোভে ফেটে পড়েন ঐত্রীর আত্মীয়েরা। শম্পাদেবী বলেন, ‘‘হয় আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দিন, তা না হলে আমার মেয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী সবাই যেন চরম শাস্তি পায়।’’ এ দিন বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন শম্পাদেবী। হুঁশ ফিরলেই ‘নায়েরা, নায়েরা’ (ঐত্রীর ডাকনাম) বলে কেঁদে উঠছিলেন। তা দেখে হাসপাতালে মোতায়েন এক পুলিশকর্মীর মন্তব্য, ‘‘শিশুটি মারা যাওয়ার পরে হাসপাতালের ইউনিট হেড যে ব্যবহার করলেন, তা ভাবা যায় না। ওই ব্যবহার দেখেই শিশুটির পরিবার উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল।’’ এ দিন পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠলে পূর্ব যাদবপুর এবং গরফা থানার বাহিনীকে হাসপাতালে মোতায়েন করা হয়।

পুলিশ জানায়, মৃত শিশুর বাবা জয়ন্ত দে-র অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করা হয়েছে। ময়না-তদন্তের জন্য এনআরএস হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে দেহটি।

তার পরিজনেদের সঙ্গে বচসায় জড়ালেন জয়ন্তীদেবী। বুধবার, মুকুন্দপুরের আমরি হাসপাতালে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী ও নিজস্ব চিত্র

আমরি-র তরফে জানানো হয়েছে, ১৫ জানুয়ারি জ্বর ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে শিশুটি হাসপাতালে দেখাতে এসেছিল। অবস্থা গুরুতর বোঝায় তাকে শিশু বিভাগে ভর্তি করে নেওয়া হয়। কিন্তু বুধবার সকালে অবস্থার আরও অবনতি ঘটলে পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিকু) নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা চেষ্টা চালালেও তার হৃৎযন্ত্র, স্নায়ু এবং শ্বাসের সমস্যা কমেনি। যার জেরে সে মারা যায়।

ওই হাসপাতালের আরও দাবি, ইউনিট প্রধান জয়ন্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে গেলে শিশুটির পরিবারের লোকজন তাঁর উপরে চড়াও হন। তাঁকে হেনস্থা করা হয়। আত্মরক্ষার জন্য তিনি প্রতিবাদ করেন। জয়ন্তী পরে ক্ষমা চাইলেও রোগীর পরিজনেরা তাঁকে হেনস্থা করতে থাকেন। এর পরে হাসপাতালের তরফে স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। এ দিন রাতে হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে ওই শিশুর মৃত্যু নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। দুর্ব্যবহারের অভিযোগও খতিয়ে দেখবে তারা। তদন্ত চলা অবধি জয়ন্তীদেবীকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।

Medical negligence AMRI hospital Death চিকিৎসা গাফিলতি আমরি কলকাতা Kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy