Advertisement
E-Paper

‘আক্রান্ত’ ফরজানার মৃত্যু, দাবি তদন্তের

প্রয়াত হলেন কলকাতা পুরসভার সদ্য প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র তথা তৃণমূল নেত্রী ফরজানা আলম (৪৬)। সোমবার রাতে পিকনিক গার্ডেনের বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই রাত ১০টা ৩৪ নাগাদ ফরজানার মৃত্যু হয় বলে চিকিৎসকেরা জানান।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৫ ০৩:৩৩
মার খাওয়ার পরে হাসপাতালে ফরজানা আলম। গত ৩০ এপ্রিল। — ফাইল চিত্র।

মার খাওয়ার পরে হাসপাতালে ফরজানা আলম। গত ৩০ এপ্রিল। — ফাইল চিত্র।

প্রয়াত হলেন কলকাতা পুরসভার সদ্য প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র তথা তৃণমূল নেত্রী ফরজানা আলম (৪৬)। সোমবার রাতে পিকনিক গার্ডেনের বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই রাত ১০টা ৩৪ নাগাদ ফরজানার মৃত্যু হয় বলে চিকিৎসকেরা জানান।

ফরজানার পরিবার বা তৃণমূলে তাঁর ঘনিষ্ঠরা অবশ্য হৃদরোগে মৃত্যুর বিষয়টি মানতে নারাজ। এ দিন খবর ছড়িয়ে পড়তেই হাসপাতালে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁর অনুগামীরা। তাঁরা অভিযোগ করেন, গত ৩০ এপ্রিল বন্‌ধের দিন তৃণমূলের কিছু কর্মীর মারে গুরুতর জখম হন ফরজানা। এ নিয়ে দল এবং পুলিশে অভিযোগ করলেও মূল অভিযুক্ত মাখনলাল দাস-সহ কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি। দলেরই হাতে এ ভাবে নির্যাতিত হয়ে ফরজানা পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। সেটাই অকাল মৃত্যু ডেকে আনল বলে অনুগামীদের অভিযোগ।

ফরজানার পরিবার ও ঘনিষ্ঠদেরও অভিযোগ, চিকিৎসকেরা আগেই জানিয়েছিলেন ফরজানার মাথা ও বুকের আঘাত গুরুতর। সরকারি হাসপাতালেও তাঁর শারীরিক পরীক্ষা হয়। পরিবার সূত্রের খবর, ফরজানা চার দিন আগে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছিলেন। কিন্তু মানসিক ও শারীরিক ভাবে বিধ্বস্ত ছিলেন। তাঁকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হবে বলে ঠিক হয়েছিল। তার আগেই এ দিন তিনি ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন। ৩০ তারিখের ঘটনার অভিঘাতেই এ দিন তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন বলে পরিবারের একাংশের অভিযোগ। ময়না তদন্তের দাবি জানান তাঁরা। ফরজানার ভাই আমন আহম্মেদ বলেন, ‘‘সন্ধ্যায় দিদির শরীরটা খারাপ হতেই হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলাম। মারধরের ঘটনার পর থেকেই দিদি খুব ভেঙে পড়েছিলেন। শারীরিক ভাবেও অসুস্থ ছিলেন। যত দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন কোনও নেতা এক দিনও দেখতে আসেননি।’’ বছর দুয়েক আগে একটি পথ দুর্ঘটনায় ফরজানার স্বামীর মৃত্যু হয়। ফরজানার একটি ১১ বছরের ছেলে রয়েছে বলে তাঁর পরিবার সূত্রের খবর।


হাসপাতালের বাইরে তৃণমূল সমর্থকদের বিক্ষোভ। — নিজস্ব চিত্র।

ফরজানার ময়না তদন্তের দাবি জানিয়েছেন সিপিএম নেতা রবীন দেব-ও। তাঁর অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের হাতেই উনি কিছু দিন আগে আক্রান্ত হয়ে ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী গোটা ঘটনার তদন্ত করান। মেয়রকেও এই মৃত্যুর নৈতিক দায় নিতে হবে।’’ বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য দাবি করেন, ‘‘মৃত্যুটা অস্বাভাবিক। দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে কাউকে হারাতেই হবে বলে পণ করলে তার পরিণতি কী হয়, এই ঘটনা তা প্রমাণ করে দিল। তদন্ত করে দেখা হোক।’’

তৃণমূলের তরফে অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দলের প্রবীণ নেতা তথা মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই মৃত্যুর সঙ্গে ওই দিনের ঘটনার কোনও সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে হয় না। ফরজানার পরিবারের থেকে যতটা জানা গিয়েছে, আগে থেকেই ওঁর হৃদরোগ ছিল।’’ হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে এ দিন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও বলেন, ‘‘ওঁর হৃদযন্ত্রে গোলযোগ ছিল। চিকিৎসকেরা ওঁকে সতর্কও করেছিলেন।’’ যদিও ফরজানার ভাই দিদির হৃদযন্ত্রে গোলযোগ ছিল বলে মানতে চাননি। আজ, ফরজানার আত্মীয়স্বজনরা বিহার থেকে এসে পৌঁছলে এখানেই তাঁর সৎকার হবে।

ফরজানাকে মারধরের ঘটনায় যে তৃণমূল নেতার দিকে আঙুল উঠেছিল, সেই মাখনলাল দাস অবশ্য এ দিনও ঘটনার পিছনে নিজের দায় স্বীকার করেননি। তিনি বরং পাল্টা বলেন, ‘‘ফরজানার উপর আমরা কোনও আক্রমণ করিনি। উনিই মিছিল করে এসে আমাদের পার্টি অফিস থেকে বের করে তালা লাগিয়ে দেন। এখন উনি প্রয়াত। তাই ওই বিষয় নিয়ে কোনও কথা বলব না।’’

২০১০ সালে ২৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হয়ে পুরসভার ডেপুটি মেয়র হয়েছিলেন ফরজানা। এ বার তিনি ৬৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ভোটে লড়েও বাম প্রার্থীর কাছে হেরে যান। তাঁর অভিযোগ ছিল, দলেরই একাংশের অন্তর্ঘাতের ফলে হেরেছেন। এ দিন প্রাক্তন ডেপুটি মেয়রের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে পৌঁছে যান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘সন্ধ্যায় ওঁর বাড়ির পাশেই একটা ওয়ার্ডে ছিলাম। সেখান থেকে অন্য ওয়ার্ডে যেতেই খবর পেলাম বুকে ব্যথা হওয়ায় ফরজানাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। খুবই দুঃখজনক ঘটনা।’’ শোভনবাবু বলেন, ‘‘ভোটে পরাজয়ের পর অনেকেরই একটা মানসিক অবসাদ থাকে। কিন্তু আচমকা ওঁর মৃত্যুতে আমরা শোকস্তব্ধ।’’

farzana alam expired farzana alam heart attack farzana alam death investigation farzana tmc group rivalry abpnewsletters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy