Advertisement
০৪ মে ২০২৪

প্রতিবন্ধী ছেলেকে খুন করে আত্মঘাতী বাবা

জন্ম ইস্তক তিনি প্রতিবন্ধী। দু’পায়ে দাঁড়াতেও পারেন না। খাট ছেড়ে ওঠার ক্ষমতা নেই তাঁর। বছর কুড়ির সেই যুবক তখন খাটে বসে মায়ের দেওয়া কাটা ফল খাচ্ছিলেন। সেই সময়েই মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি চালিয়ে তাঁকে খুন করলেন বাবা। এর পরে সেই বন্দুক থেকেই গুলি চালিয়ে তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে মেটিয়াবুরুজ থানা এলাকার কেশরাম সুতোকলের শ্রমিক আবাসনে।

আদেশ সিংহ (বাঁ দিকে) ও সোনু সিংহ

আদেশ সিংহ (বাঁ দিকে) ও সোনু সিংহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৪ ০২:২২
Share: Save:

জন্ম ইস্তক তিনি প্রতিবন্ধী। দু’পায়ে দাঁড়াতেও পারেন না। খাট ছেড়ে ওঠার ক্ষমতা নেই তাঁর। বছর কুড়ির সেই যুবক তখন খাটে বসে মায়ের দেওয়া কাটা ফল খাচ্ছিলেন। সেই সময়েই মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি চালিয়ে তাঁকে খুন করলেন বাবা। এর পরে সেই বন্দুক থেকেই গুলি চালিয়ে তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে মেটিয়াবুরুজ থানা এলাকার কেশরাম সুতোকলের শ্রমিক আবাসনে। পুলিশ জানায়, নিহত প্রতিবন্ধী যুবকের নাম সোনু সিংহ (২০)। তাঁর বাবা আদেশ সিংহ (৫৫) এক সময়ে ওই সুতোকলেরই শ্রমিক ছিলেন। বছর পনেরো যাবৎ ওই সুতোকল বন্ধ থাকায় তিনি বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করছিলেন। বেতন পেতেন মাসে আট হাজার টাকারও কম। পুলিশ জানায়, মূলত একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএম পাহারা দেওয়া ছিল আদেশের কাজ। তাই তাঁর বন্দুকের লাইসেন্স আছে বলে প্রাথমিক ভাবে জেনেছে পুলিশ। বড় ছেলে যেমন জন্ম-প্রতিবন্ধী, তেমন আদেশ নিজেও মৃগীরোগী ছিলেন বলে জানিয়েছেন তাঁর কিছু প্রতিবেশী। তদন্তকারীদের ধারণা, প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে মানসিক অবসাদ, নিজের অসুস্থতা ও অর্থাভাবের কারণেই এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন আদেশ সিংহ।

ঠিক কী হয়েছিল এ দিন?

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নাইট ডিউটি সেরে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ বাড়ি ফেরেন আদেশ। কিছুক্ষণ পরে তাঁকে খেতে দেন স্ত্রী পুষ্পা সিংহ। প্রতিদিন আদেশ ঘুমিয়ে পড়লে স্নান করতে যেতেন পুষ্পা। এ দিনও আদেশবাবু ঘুমোনোর পরেই পুষ্পাদেবী স্নান করতে গিয়েছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, ঠিক পৌনে দু’টো নাগাদ পরপর দু’টি গুলির শব্দ শুনতে পান পুষ্পা। তখন তিনি স্নান করছিলেন। প্রতিবেশীদের বক্তব্য, কোনও রকমে স্নান সেরে শৌচাগার থেকে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে পুষ্পাদেবী দেখেন, শোয়ার ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। বারবার ধাক্কা দিলেও কারও কোনও সাড়া মেলেনি। ওই মহিলা তখন দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে দেখেন, ঘরের মেঝেতে তাঁর স্বামী ও ছেলের দেহ পড়ে রয়েছে। সারা ঘর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। ভয় পেয়ে গিয়ে পুষ্পাদেবী চিৎকার করে পড়শি রঞ্জিত সিংহকে ডাকেন। তিনি এবং আরও কয়েক জন প্রতিবেশী বারবার ধাক্কা দিয়ে দরজা ভেঙে ফেলেন।

রঞ্জিত সিংহের কথায়, “ঢুকে দেখি, গোটা ঘর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। মেঝেতে পড়ে রয়েছে আদেশ ও সোনুর দেহ।” প্রতিবেশীরা জানান, সোনুর মাথার বাঁ দিকে গুলি লেগেছিল। আর বন্দুকের গুলি আদেশের থুতনি উড়িয়ে দিয়েছে। দু’টি দেহের পাশেই পড়েছিল আদেশ সিংহের দোনলা বন্দুকটি। পড়শিরা মেটিয়াবুরুজ থানায় ফোন করে খবর দেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছে দু’টি দেহ উদ্ধারের পাশাপাশি বন্দুকটিও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, আদেশ সিংহের তিন ছেলে-মেয়ে। বড় ছেলে সোনুর দু’টি পা জন্ম থেকেই অকেজো। তাঁর ছোট ছেলে পড়াশোনার জন্য নাসিকে আত্মীয়ের বাড়িতে। মেয়েও বিয়ের পর থেকে দিল্লিতে। মেটিয়াবুরুজের এই সুতোকলের আবাসনে আদেশ স্ত্রী এবং বড় ছেলেকে নিয়েই থাকতেন। হাঁটার ক্ষমতা না থাকায় সোনু বিছানাতেই সারা দিন বসে কিংবা শুয়ে থাকতেন। তাঁর জন্য আদেশ বহু চিকিৎসক দেখিয়েছিলেন। কিন্তু চিকিৎসেকরা জানান, জন্ম থেকেই পা দু’টি অকেজো, তাই সোনুর পক্ষে সুস্থ হওয়া মুশকিল।

ছেলের এই অসুস্থতার সঙ্গে যোগ হয়েছিল আদেশের নিজের অসুস্থতা। মৃগীরোগী আদেশেরও চিকিৎসা চলছিল। এক দিকে দু’জনের চিকিৎসার খরচ, অন্য দিকে আর্থিক অনটন সব মিলিয়ে আদেশ মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন বলে জানিয়েছেন পড়শি এবং পরিবারের লোকেরা।

কলকাতা পুলিশের ডিসি (বন্দর) ইমরান ওয়াহাব বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে মানসিক অবসাদ থেকেই এই ঘটনা। তবে আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

adesh singh sonu singh metiabruz murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE