মেজাজ হারিয়ে সাংবাদিককে ধমক অনীক দত্তের। নিজস্ব চিত্র।
কথা ছিল, নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার আহ্বান জানাবেন বিশিষ্টজনেরা। আদতে তা হয়ে উঠল সাংবাদিক বনাম চিত্র পরিচালক অনীক দত্তের মধ্যে বিতণ্ডার আখড়া। বাম আমলের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন শুনে মেজাজ হারিয়ে সাংবাদিকদের কুরুচিকর ভাষায় আক্রমণ করলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত অনীকের হয়ে সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হল সিপিএম সাংসদ তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে। যদিও এই ঘটনার পর শনিবার প্রেস ক্লাবের ওই সাংবাদিক বৈঠকই ভেস্তে যায়।
রাজ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে নাগরিক সমাজকে জোরদার আন্দোলনে নামার আহ্বান জানিয়ে শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে হাজির হয়েছিলেন বাম মনোভাবাপন্ন বিশিষ্টজনেরা। সেখানে পবিত্র সরকার, মালিনী ভট্টাচার্যদের মতো শিক্ষাবিদেরা যেমন ছিলেন, তেমনই ছিলেন অনীক দত্ত, বাদশা মৈত্র, সব্যসাচী চক্রবর্তী, রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়দের মতো চিত্রজগতের তারকারাও। ওই সাংবাদিক বৈঠক চলাকালীন তৃণমূলের মুখপত্রের এক সাংবাদিক বাম আমলের শিক্ষাব্যবস্থায় ‘অনিলায়ন’ (শিক্ষার ক্ষেত্রে সর্ব স্তরে সিপিএম নেতা অনিল বিশ্বাসের হস্তক্ষেপকে ওই বিশেষণ দেওয়া হয়েছিল) নিয়ে প্রশ্ন করেন। সেই প্রশ্নেই মেজাজ হারান ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-এর পরিচালক অনীক। মাইক হাতে ওই সাংবাদিককে শাসাতে থাকেন তিনি। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘চোপ! একদম চুপ করে থাকুন।’’ পরিস্থিতি বুঝে তাঁর হাত থেকে মাইক সরিয়ে নিতে উদ্যোগী হন বাম-ঘনিষ্ঠ বিশিষ্টদের কেউ কেউ। কিন্তু তাঁরা ব্যর্থ হন। গোটা ঘটনায় হতচকিত হয়ে বসে থাকতে দেখা যায় পবিত্র, রাহুলদের। শেষ পর্যন্ত অনীকের হাত থেকে মাইক কেড়ে নেওয়া হয়। সেই মাইকেই সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন বিকাশ। যদিও এর পরই ভণ্ডুল হয়ে যায় সাংবাদিক বৈঠক। সিপিএমের মুখপত্রের সাংবাদিক ছাড়া বাকি প্রায় সকলেই বেরিয়ে যান।
টালিগঞ্জ ফিল্ম দুনিয়ার অন্দরে কান পাতলে অবশ্য অনীকের মেজাজ হারানোর নজির আরও রয়েছে বলে শোনা যায়। এমনকি, তাঁর উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারার স্বভাবের কারণে তাঁকে আড়ালে রসিকতা করে অনেকে ‘প্যানিক’ দত্ত বলেও ডাকেন। তবে সাংবাদিক বৈঠকে বসে এ ভাবে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মেজাজ হারিয়ে কটুবাক্য প্রয়োগ— সিপিএমের কট্টর সমর্থক অনীককে এই চেহারায় দেখেননি তাঁর পরিচিতরাও। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, কী এমন হয়েছিল যে সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাব দেওয়ার পরিবর্তে সাংবাদিকদেরই শাসানি নিয়ে চুপ করাতে উদ্যত হলেন ওই চিত্র পরিচালক?
সিপিএমের সরব সমর্থক অনীকের সাম্প্রতিক ছবি সরকারি প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে রাজনীতি করার অভিযোগ করেছিলেন তিনি। এ বার নির্দিষ্ট এক সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকের প্রশ্ন শুনে মেজাজ হারিয়ে তাঁকে কুরুচিকর আক্রমণে মাতলেন অনীক। স্বভাবতই, সরকারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির ডাক দিতে সাংবাদিক বৈঠকে বসে অনীকের সাংবাদিককেই ঝাঁঝালো আক্রমণ বিশিষ্টদের ঘোষিত কর্মসূচিরই পরিপন্থী হয়ে উঠল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy