কালো ধোঁয়ায় ঢেকেছে আকাশ। —নিজস্ব চিত্র।
এটাই রাজ্যের একমাত্র সরকারি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। অথচ সোমবার সকালে যে ভাবে এসএসকেএম হাসপাতালে আগুন লাগল, তাতে তাকে যতুগৃহ ছাড়া আর কি বা বলা যেতে পারে। আগুনের লেলিহান শিখা এবং কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী মনে পড়িয়েছে আমরির ভয়াবহ স্মৃতিকে। যদিও দমকলের ১৯টি ইঞ্জিনের চেষ্টায় ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এখনও পর্যন্ত বড়সড় কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন সকাল সওয়া ১১টা নাগাদ এসএসকেএম হাসপাতালের রোনাল্ড রস বিল্ডিং-এর ছ’তলায় ওই আগুন লাগে। খবর পেয়েই দমকল ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। অভিযোগ, দমকল প্রথমে কোনও ল্যাডার নিয়ে ঘটনাস্থলে যায়নি। এমনকী, ছ’তলার উপরে ওই জায়গায় জল দেওয়ার কোনও পরিকাঠামোও ছিল না। পরে অবশ্য লম্বা পাইপের সাহায্যে আগুন নেভানো হয়। দমকলের তরফে জানানো হয়েছে, হাসপাতাল লাগোয়া এজেসি বসু রোডের ফ্লাইওভারের উপর গাড়ি রেখে সেখান থেকে জল দেওয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয় ওই ফ্লাইওভারের এক দিকের রাস্তা। বন্ধ করে দেওয়া হয় ফ্লাইওভারের নীচের রাস্তাও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে যান দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়, পুরমন্ত্রী ববি হাকিম, কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার-সহ পুলিশ এবং দমকলের উচপদস্থ কর্তারা।
আগুন লাগার খবর পেয়েই বেলা ১২টা নাগাদ বাড়ি থেকে সোজা এসএসকেএম-এর পোস্ট অফিস গেট দিয়ে হাসপাতালে ঢোকেন মুখ্যমন্ত্রী। তার কিছুটা দূরেই রোনাল্ড রস বিল্ডিং। যেখানে তখন আগুন নেভানোর কাজ করছেন দমকল কর্মীরা। মুখ্যমন্ত্রী হাসপাতালে আসছেন শুনেই পোস্ট অফিস গেটে পৌঁছে যান কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (১) বিনীত গোয়েল এবং ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) মুরলীধর শর্মা। মুখ্যমন্ত্রী গাড়ি থেকেই নামতেই ওই পুলিশকর্তারা তাঁকে জানান, হাসপাতালের লাইব্রেরিতে আগুন লেগেছে। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসে গিয়েছে। কোনও রোগী ভিতরে আটকে নেই। মুখ্যমন্ত্রী ওই পুলিশ কর্তাদের ওই কথার মাঝেই বলেন,‘‘কেউ লাগিয়েছে ওই আগুন। আপনারা ঘটনাস্থলে যান।’’ পরে তিনি দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং পুলিশকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পর বলেন, ‘‘কেন আগুন লেগেছে, আদৌ লেগেছে না লাগানো হয়েছে, তা তদন্ত করে দেখা হবে। পুলিশ, দমকল, স্বাস্থ্য বিভাগ একসঙ্গে ওই তদন্ত করবে। আগুন লাগার জন্য দায়ী কে, কারা লাগিয়েছে সব দেখা হবে।’’
হাসাপাতালের উডর্বান ওয়ার্ডের সামনেটাও ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে তিনি পুলিশ কমিশনার এবং দমকলমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন, ওই জায়গাতে অস্থায়ী ভাবে দমকলের অফিস খুলতে। দু’টি করে ইঞ্জিন সেখানে সব সময় রাখার নির্দেশও দেন তিনি। মুখমন্ত্রী বলেন,‘‘জরুরী ভিত্তিতে এসএসকেএমে দু’টি দমকলের ইঞ্জিন থাকবে। দমকলের ল্যাডারও থাকবে। দমকল কর্মীদের সঙ্গে পুলিশও থাকবে।’’ পরে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এসএসকেএম-এ ওই দমকলের গাড়ি থাকলে তা শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল, বাঙুর নিওরোলজি হাসপাতালের কাজে লাগবে। এ ছাড়া এসএসকেএম-এর প্রতিটি বিল্ডিং-এ আগুন নির্বাপন ব্যবস্থা ঠিক আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
২০১০ সালে দক্ষিণ কলকাতার আমরি হাসপাতালে মাঝরাতে আগুন লেগে একশোর কাছাকাছি রোগী মারা গিয়েছিলেন। তার পরে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রাণঘাতী আগুন লেগেছে। কিছু দিন আগে খাস কলকাতারই শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। কিন্তু রাজ্যের একমাত্র সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালও যে কার্যত যতুগৃহে পরিণত হয়েছিল, এ দিন তার প্রমাণ মিলল।
আরও পড়ুন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy