টিফিনের সময় প্রায় শেষের পথে। পড়ুয়ারা একে একে ক্লাসে ঢুকতে শুরু করেছে। হঠাৎই স্কুলের চার তলার ছাদের এক পাশ থেকে ধোঁয়া দেখতে পান স্কুলের কর্মীরা। তা দেখে নিমেষে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পড়ুয়াদের মধ্যে। যে কয়েক জন দোতলায় বা তিন তলায় ছিল তাদেরও নীচে নামিয়ে নিয়ে আসা হয়। যদিও দমকল আসার আগেই সেই আগুন নিভিয়ে ফেলেন স্কুলের কর্মীরা। পুলিশ জানায়, বুধবার বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে পার্ক সার্কাসের ডন বস্কো স্কুলে। আগুন লাগার পরে রোজকার সময় মেনেই স্কুলে ছুটি হয়েছে বলে জানান কর্তৃপক্ষ।
কী হয়েছিল এ দিন? পুলিশ সূত্রের খবর, স্কুলে টিফিনের সময় ১১টা ৪০ থেকে ১২টা ১৫ পর্যন্ত। টিফিনের শেষে পড়ুয়ারা যখন সবে মাত্র ক্লাসে ঢুকতে শুরু করেছিল, তখনই চার তলার ছাদের এক পাশে ধোঁয়া দেখতে পাওয়া যায়। মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তখন ক্লাস না থাকার কারণে ছাত্ররা শ্রেণীকক্ষে ছিল না। বেশির ভাগ পড়ুয়াই নীচে ছিল। যে কারণে আতঙ্ক বেশি ছড়াতে পারেনি। তবে কিছুক্ষণের জন্য পড়ুয়াদের উপরে উঠতে বারণ করা হয়েছিল।
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, এর পরেই দমকল ও পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। তবে দমকলের জন্য অপেক্ষা না করে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরা ছাদে চলে যান। তাঁরা দেখেন, একটি গুদাম ঘরে রাখা কার্পেট এবং কাগজে আগুন লেগেছে। তাঁরাই আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে দেন। স্কুলের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা যথাযথ থাকায় দমকলের চারটি ইঞ্জিন এবং একটি মই পৌঁছনোর আগেই মিনিট পনেরোর মধ্যে আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়। এর পরেই অভিভাবকদের এসএমএস করে ঘটনার বিবরণ দেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। সমস্ত কিছুই যে নিয়ন্ত্রণে তা জানানো হয় এই এসএমএসে।
কিন্তু ততক্ষণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে অভিভাবকদের মধ্যে। তাঁদের একাংশ স্কুলে চলে আসেন। পুলিশকর্তারাও আসেন। সল্টলেক থেকে আসা এক অভিভাবক সোমা চন্দ্র বলেন, ‘‘অধ্যক্ষের এসএমএস পেয়েছি। কিন্তু কিছুতেই মন মানল না। তাই চলে এলাম।’’ অন্য আর এক অভিভাবক বলেন, ‘‘মায়ের ফোন পেয়ে চলে এসেছি। ভীষণ আতঙ্কে ছিলাম। কিন্তু এসে দেখলাম স্কুল সমস্ত ঠিকঠাক ভাবেই করেছে।’’ দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়া অদ্রিশ দত্ত বলে, ‘‘আমি দোতলার ক্লাসে চলে গিয়েছিলাম। তখন এক শিক্ষক বললেন, ছাদে আগুন লেগেছে। শুনে নীচে চলে আসি। একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।’’
কিন্তু কী ভাবে আগুন লাগল?
পুলিশ জানিয়েছে, ছাদে নির্মাণ কাজ চলছিল। সেখানেই ওই গুদাম ঘরের কাগজ ও কার্পেটে কোনও ভাবে আগুন লাগে। স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য মনে করছেন, নির্মাণকর্মীদের কেউ জ্বলন্ত বিড়ির অংশ ফেলে দিয়ে থাকতে পারেন। তা থেকেই লাগে আগুন। স্কুলের অধ্যক্ষ ফাদার বিকাশ মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের পড়ুয়া এবং শিক্ষকদের আগুন নেভানোর প্রশিক্ষণ রয়েছে। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও ভালো। সে কারণে কোনও অসুবিধা হয়নি। যাঁরা ছাদে নির্মাণের কাজ করছিলেন তাঁদের জ্বলন্ত বিড়ির অংশ থেকেই আগুন লাগার সম্ভাবনা। তবে পুলিশ সেটা তদন্ত করে দেখবে।’’
অন্য দিকে, আগুন লাগল একটি কাঠ চেরাই কারখানায়। দমকল সূত্রে খবর, মঙ্গলবার রাত দেড়টা নাগাদ মানিকতলার ক্যানাল ইস্ট রোডের ওই কারখানাটি থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। ঘটনাস্থলে যায় দমকলের ১২টি ইঞ্জিন। প্রায় আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এই ঘটনায় কেউ আহত না হলেও কারখানার শেড, যন্ত্রপাতি-সহ বহু সামগ্রীর ক্ষতি হয়েছে বলে জানায় দমকল। কারখানার ভিতরে শর্ট সার্কিটের ফলেই এই আগুন লাগে বলে জেনেছে পুলিশ।