Advertisement
E-Paper

হার্ট প্রতিস্থাপন নিয়ে সংশয়

এ বার হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনেরও অনুমতি পেয়েছে রাজ্যের এক হাসপাতাল। আগে রাজ্যে অধিকাংশ প্রতিস্থাপনে দেখা গিয়েছে, অস্ত্রোপচার সফল হলেও কখনও সংক্রমণের, কখনও প্রতিস্থাপিত অঙ্গ ঠিক মতো না কাজ না করায় ভুগতে হয়েছে রোগীকে।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:৩৫
Share
Save

এত দিন লিভার-কিডনি-চোখ এমনকী ত্বকও প্রতিস্থাপন হয়েছে এই শহরে। এ বার হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনেরও অনুমতি পেয়েছে রাজ্যের এক হাসপাতাল। আগে রাজ্যে অধিকাংশ প্রতিস্থাপনে দেখা গিয়েছে, অস্ত্রোপচার সফল হলেও কখনও সংক্রমণের, কখনও প্রতিস্থাপিত অঙ্গ ঠিক মতো না কাজ না করায় ভুগতে হয়েছে রোগীকে। ফলে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে রাজ্য আরও এক ধাপ এগোলেও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে তার সার্বিক ব্যবস্থা এবং সাফল্য নিয়ে।

হৃদ্‌রোগের চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এ দেশে বছরে প্রায় তিনশোটি হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপিত হয়। হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে বিশ্বের এক নম্বর শহর চেন্নাই। সাফল্যের হার ৮০ শতাংশ। অর্থাৎ, হৃৎপিণ্ডের অন্যান্য অস্ত্রোপচারে তুলনায় প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে সাফল্যের হার কম। কিন্তু হৃদযন্ত্রে বড় সমস্যা হলে তবেই প্রতিস্থাপন করা হয়।

প্রতিস্থাপনকে সফল করার জন্য শুধু অস্ত্রোপচার সফল হওয়া যথেষ্ট নয়। দরকার পর্যাপ্ত ওষুধ এবং পরিকাঠামো। কার্ডিওথোরাসিক সার্জন কুণাল সরকার বলেন, ‘‘অস্ত্রোপচারের পরে প্রতিস্থাপিত অঙ্গের সঙ্গে দেহের অন্যান্য অঙ্গ মানিয়ে নিতে পারে না। যার জেরে একাধিক সমস্যা তৈরির ঝুঁকি বেড়ে যায়। দরকার হয় ‘নট রিজেকশন মেডিসিন’। কিন্তু এই ওষুধের জন্য মাসিক দশ হাজার টাকা খরচ হয়। ধারাবাহিক ভাবে সেই ওষুধ খেলে অবশ্যই ঝুঁকি কমবে।’’ কিন্তু চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ধারাবাহিক ভাবে ব্যায়বহুল ওষুধের খরচ অধিকাংশ পরিবার চালাতে পারে না। যার জেরে সমস্যা তৈরি হয়। ওষুধের পাশাপাশি সংক্রমণের দিকেও গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। হাসপাতালে থাকাকালীন রোগীকে নিয়মিত অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া এবং রোগী যেখানে থাকছেন সেই জায়গার উপরে বিশেষ নজর দেওয়া জরুরি।

তবে জীবাণু সংক্রমণ এবং ওষুধের পাশাপাশি ঠিক সময়ে হার্ট পাওয়া এবং অঙ্গটিকে ঠিক ভাবে সংরক্ষণ করার দিকেও নজর দেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন হৃদ্‌রোগের চিকিৎসক শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতিস্থাপন একটা বড় কাঠামো। অস্ত্রোপচার তার একটা অংশ মাত্র। হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে ঠিক সময়ে অঙ্গ পাওয়া খুব জরুরি। না হলে ঝুঁকি আরও বাড়বে। তাই ব্রেন ডেথের পরে অঙ্গদানের বিষয়টি

আরও চালু হওয়া দরকার। অস্ত্রোপচারের পরিকাঠামোর পাশাপাশি সম্ভাব্য গ্রহীতাদের রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা থাকা জরুরি।’’

শহরের যে বেসরকারি হাসপাতাল প্রথম স্বাস্থ্য দফতর থেকে হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের অনুমোদন পেল, সেই হাসপাতালের রিজিওন্যাল ডিরেক্টর আর ভেঙ্কটেশ বলেন, ‘‘হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের জন্য বিশেষজ্ঞদের দল হাসপাতালে তৈরি হয়েছে। তাঁরাই রোগীদের সর্বক্ষণ পর্যবেক্ষণে রাখবেন। কারও ব্রেন ডেথের পরে ঠিক সময়ে যাতে হার্ট পাওয়া যায় প্রতিস্থাপনের জন্য, সে বিষয়েও খোঁজখবর রাখবেন তাঁরা।’’

চিকিৎসক মহলের একাংশ মনে করছেন, তামিলনাড়ু হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনে দেশকে দিশা দেখিয়েছে। অস্ত্রোপচারের পরিকাঠামোর উন্নতির পাশাপাশি রোগীদের অস্ত্রোপচার পরবর্তী ওষুধের খরচ চালাতেও সাহায্য করেছিল তামিলনা়ড়ু সরকার। এ রাজ্যও অঙ্গ প্রতিস্থাপনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু সার্বিক সাফল্য বাড়াতে কতটা এগিয়ে আসবে সরকার? স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘সবেমাত্র একটা প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। প্রথমে নানা সমস্যার কথা মনে হতে পারে। দেখা যাক কী হচ্ছে। সেই মতো পরবর্তীকালের পরিকল্পনা করা হবে।’’

heart transplant Kolkata Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy