Advertisement
১১ মে ২০২৪
LGBTQ

দলে ‘রেনবো শাখা’ হোক, আশা উৎসাহীদের 

এই মুখগুলির সৌজন্যেই একটি বিরল দৃশ্য দেখা  গিয়েছে রবিবার বাম-কংগ্রেসের ব্রিগেড সমাবেশে।

রবিবারের ব্রিগেড সমাবেশেও তৃতীয় লিঙ্গের উপস্থিতি।

রবিবারের ব্রিগেড সমাবেশেও তৃতীয় লিঙ্গের উপস্থিতি। নিজস্ব চিত্র

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২১ ০৬:২৭
Share: Save:

ভিড় ঠেলে মঞ্চ ঘেঁষা ব্যারিকেডের কাছে পৌঁছতে পারেননি সবাই। কিন্তু রীতিমতো উৎসাহে ফুটছিলেন তাঁরা। আর সিপিএমের পলিটবুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম তাঁর বক্তৃতায় মাঠে তৃতীয় লিঙ্গের উপস্থিতির কথা বলার মুহূর্তটা যেন বুকের গভীরে ধাক্কা দিয়ে গেল। বাপন, লিজ়া, অন্বেষা, অভিষেকের মতো রূপান্তরকামীদের চোখের কোণ তখন খানিক চিকচিক করে উঠেছে।


এই মুখগুলির সৌজন্যেই একটি বিরল দৃশ্য দেখা গিয়েছে রবিবার বাম-কংগ্রেসের ব্রিগেড সমাবেশে। মঞ্চের পিছনে কাস্তে হাতুড়ি আঁকা লাল পতাকার পাশেই সমকামী-রূপান্তরকামীদের গর্বের প্রতীক সাতরঙা ‘রেনবো ফ্ল্যাগও’ পতপত করে উড়েছে। মূলস্রোতের কোনও রাজনৈতিক দলের সমাবেশে এই সগর্ব উপস্থিতি বাংলার সাতরঙা মুখটাও তুলে ধরেছে। ইদানীং বিজেপি-র মতো দলও সমকামী, রূপান্তরকামী তথা তৃতীয় লিঙ্গভুক্তদের কাছে টানার চেষ্টা করছে। সুপ্রিম কোর্টে ২০১৪ সালে নালসা রায়ে তৃতীয় লিঙ্গদের নাগরিক অধিকারের স্বীকৃতি মিলেছে। ২০১৮-এ ৩৭৭ ধারাকে অপরাধের তকমামুক্ত করার রায়ের পরে ক্রমশ কোনও দলই এই মানুষগুলির দাবিদাওয়া অগ্রাহ্য করতে পারছে না। কিন্তু এখনও খাদ্য, শিক্ষা, চাকরির মতো মৌলিক দাবি বা তৃতীয় লিঙ্গ পরিচয়ে সহজে শংসাপত্র পেতেও অনেককেই টালবাহানা পোয়াতে হয়। দিল্লি হাইকোর্টে কেন্দ্রীয় সরকারের সাম্প্রতিক সমলিঙ্গে বিবাহ বিরোধী অবস্থানকেও
অনেকেই ভাল চোখে দেখছেন না। মাঠে দাঁড়িয়ে রূপান্তরকামী নারী অন্বেষা এ দিন বলছিলেন, ‘‘এটুকু বুঝেছি, বিজেপি-র আদর্শ ‘হিন্দু রাষ্ট্রে’ পিতৃতন্ত্রের ছায়ায় আমাদের মতো মানুষেরা শান্তিতে বাঁচতে পারবে না। শেষ পর্যন্ত বামেরাই ভরসা।’’


পড়াশোনা, কাজের সুযোগে বৈষম্যের জন্য দেওয়ালে পিঠ ঠেকা দশাও ব্রিগেডে টেনে এনেছে তাঁদের। উত্তরবঙ্গে রায়গঞ্জ-বালুরঘাটের সমকামী জুটি দুই তরুণ বা ট্রান্সনারী তিয়াষা ও তাঁর সঙ্গী শাশ্বতও ছিলেন এই ভিড়ে। কুচবিহারের সঞ্জীব পৌঁছলেও ভিড়ে তাঁকে খুঁজে পেলেন না ওঁরা। জাঙ্গিপাড়ার শিউলি বা নদিয়ার দেবজিৎও এসেছেন।


সাতরঙা পতাকা হাতে রাজনীতির মাঠে আসতে পারাটা সবার জন্যই স্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে থাকল।
এসএফআই-এর রাজ্য কমিটির সদস্য, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ অপ্রতিম রায় নিজেও রূপান্তরকামী নারী। কালো চুড়িদার, জিন্‌সে মাঠে স্বেচ্ছাসেবীর ভূমিকায় দম ফেলার ফুরসত নেই তাঁর।


তিনি বলছিলেন, ‘‘দলের ভিতরে লিঙ্গ সাম্য নিয়ে একটা সংবেদনশীল পরিবেশ পেয়েছি বলেই নিজের পরিচয়ে সামনে আসতে
দ্বিধা হয় না। সব লিঙ্গের প্রতি সংবেদনশীল পরিবেশ তৈরিতে দায়বদ্ধতার দিকটা অবশ্যই পার্টিও বোঝে।’’ এসএফআই-এর মধ্যে নারীবাদী ও যৌন সংখ্যালঘুদের অধিকার বিষয়ে সচেতন একটি গোষ্ঠীর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। সেই গ্রুপের হিসেবেই প্রায় হাজারখানেক সমকামী-রূপান্তরকামী বা তৃতীয় লিঙ্গভুক্ত মানুষজন মাঠে এসেছেন।


সবার সঙ্গে সবার দেখা হয়নি। কিন্তু গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্যনেত্রী কনীনিকা ঘোষ বসুর সঙ্গে কয়েক জনের দেখা হতেই উচ্ছ্বাসে ডগোমগো আবহ। অপ্রতিমের আশা, পার্টি সংগঠনেও শীঘ্রই মহিলাদের মতো তৃতীয় লিঙ্গভুক্তদেরও একটা শাখা গড়ে উঠবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Brigade Rally of Kolkata LGBTQ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE