Advertisement
E-Paper

পাটুলিতে চালু হল ভাসমান বাজার

গত দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে এই দিনটিরই অপেক্ষায় ছিলেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। শুধু কলকাতা বা রাজ্য নয়, সারা দেশের মধ্যে এটাই প্রথম ভাসমান বাজার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:০৬
—নিজস্ব চিত্র।

—নিজস্ব চিত্র।

নেতাজি ইন্ডোরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রিমোটের বোতাম টিপতেই উল্লাসে ফেটে পড়লেন পাটুলির তপতী হোড়, কাবেরী মিত্রেরা। এ ভাবেই তাঁদের সাধের ভাসমান বাজারের সূচনা হল বুধবার। গত দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে এই দিনটিরই অপেক্ষায় ছিলেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। শুধু কলকাতা বা রাজ্য নয়, সারা দেশের মধ্যে এটাই প্রথম ভাসমান বাজার। সেটিই হয়েছে তাঁদের দোরগোড়াতে। আজ, বৃহস্পতিবার থেকেই সেখানে চালু হচ্ছে বেচাকেনা।

পাটুলির সেই বাজার এলাকায় তখন উপস্থিত পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁর পরিকল্পনাতেই তৈরি হয়েছে এই বাজার। এ দিন রসিকতা করে এলাকার বাসিন্দাদের উদ্দেশে মন্ত্রী বললেন, ‘‘আপনাদেরও খরচ বাড়বে। রোজই আত্মীয়স্বজন আসবে এই ভাসমান বাজার দেখতে। চা-বিস্কুট খাওয়াতে হবে তো!’’

২০১৬ সালে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাসের ধারে প্রায় নোংরা জলের ডোবা হয়েই পড়েছিল জায়গাটা। বাইপাসের রাস্তা করতে গিয়ে ফুটপাথে থাকা হকারদের সরানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তখনই মন্ত্রী ফিরহাদ হকারদের বলেছিলেন, তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। দূরে সেতুর নীচে একটা জায়গাও দেখিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যবসা কম হবে বলে সেখানে যেতে নারাজ হন হকারেরা। এর পরেই ওই খাল-ডোবা নজরে পড়ে মন্ত্রীর। তিনি তার আগেই বেড়াতে গিয়েছিলেন সিঙ্গাপুর-পাটায়া। সেখানে দেখা ভাসমান বাজারের মতো একটি বাজার তৈরির পরিকল্পনা করে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর।


বাজারের প্রবেশ পথ।

নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠান থেকে সরাসরি বাইপাসের ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন মন্ত্রী ফিরহাদ এবং দফতরের সচিব ওঙ্কার সিংহ মীনা। তখন তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন এলাকার কয়েকশো বাসিন্দা এবং হকারেরা। জলের উপরে কাঠের শালবোল্লা, তার উপরে পাটা দিয়ে তৈরি হয়েছে পুরো পথ। ক্রেতা থাকবেন পাটাতনে আর মালপত্র-সহ বিক্রেতা নৌকোর উপরে।

নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, ২২৮জন হকারকে ওই ভাসমান বাজারের নৌকোয় জায়গা দেওয়া হচ্ছে। এক-একটি নৌকোয় দু’জন করে বিক্রেতা থাকবেন। শহরের অন্য সব বাজারের মতো সকাল থেকে রাত পর্যন্ত খোলা থাকবে।

কী মিলবে বাজারে? হকারদের পক্ষ থেকে কীর্তিমান ঘোষ জানান, আনাজ, ফল, মাছ, মাংস, ডিম-সহ মুদিখানার জিনিসও থাকবে বাজারে। তবে আগুনের প্রবেশ নিষেধ সেখানে। দমকলের ছাড়পত্র নেওয়া হলেও সেখানে আগুন জ্বেলে কিছু করা যাবে না। তবে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা যথেষ্টই থাকছে বলে জানান উদ্যোক্তারা। বসেছে সিসি টিভি-ও।

এরই সঙ্গে মন্ত্রী জানান, ওই জলাশয়ের জল সব সময়ে ৫ ফুটের নীচে রাখা হবে। বাড়লে পাম্প দিয়ে তুলে নেওয়া হবে। জল কমে গেলে গভীর নলকূপ দিয়ে তা ভরাও হবে। সে সব ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।


এখানেই চলবে বিকিকিনি।

তবে কাজটি এতটাও সহজ ছিল না বলে জানান স্থানীয় কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী। বছর দেড়েক আগে কাজ শুরু হলেও কিছুটা অসুবিধা হয় নৌকা পেতে। যাঁরা আসবাবপত্র বানান, প্রথমে তাঁদেরই নৌকো বানাতে দেওয়া হয়েছিল। ফলে সেই কাজে দেরি হয়। মন্ত্রী বললেন, ‘‘বন্যার সময়ে খানাকুলে গিয়েছিলাম। সেখানকার বাসিন্দাদের জন্য তখন গোটা চার নৌকোর খোঁজ করি। হুগলি পঞ্চায়েতের এক সদস্যা জানিয়েছিলেন, বলাগড়ে নৌকো তৈরি হয়। পরিস্থিতি সামলাতে সে দিনই চারটি নৌকো বলাগড় থেকে আনানো হয়।’’ তিনি জানান, তখন থেকেই মাথায় ছিল বলাগড়ে নৌকো তৈরির বিষয়টি। তাই ভাসমান বাজারের জন্য নৌকোর সমস্যা কানে আসতেই বলাগড়ে ১১৪টি নৌকো বানাতে দেওয়া হয়। সেখানেই জায়গা করা হয়েছে হকারদের জন্য।

তা ছাড়া ছিল স্থানীয়দের আশঙ্কাও। ওই এলাকার বাসিন্দা তপতীদেবী জানান, বাজার তৈরি যখন শুরু হচ্ছিল তখন এলাকার অনেকেই ভেবেছিলেন জলাশয় বুজিয়ে নির্মাণকাজ হবে। সেই আশঙ্কা বেশ কিছু দিন পিছু ছাড়েনি তাঁদের। তবে এ দিন মঞ্চে উঠে তিনিও বললেন, ‘‘আজ আমরা আপ্লুত।’’

Floating market Patuli পাটুলি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy