Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ফুটবলের মাঠে এককাট্টা যুযুধান পুজোকর্তারা

তখন দেখলে কে বলবে, মাসখানেক আগেই পুজোর হোর্ডিং ও গেটের এলাকা নিয়ে পাশাপাশি পাড়ায় ‘সূচ্যগ্র মেদিনী’ ছাড়তেও এই লোকগুলোই প্রায় লাঠালাঠি করে বসছিলেন।

প্রস্তুতি: তখন চলছে টিম-মিটিং। শনিবার, ময়দানে। নিজস্ব চিত্র

প্রস্তুতি: তখন চলছে টিম-মিটিং। শনিবার, ময়দানে। নিজস্ব চিত্র

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৫৭
Share: Save:

পুজোর ঠিক পরপরই কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল দুই বন্ধুর। থিম-পুজোর ‘প্রাইজ’ নিয়ে মন কষাকষি।

অভিমানে হোয়াটসঅ্যাপে বন্ধুর ‘শুভ বিজয়া’— সম্ভাষণ অবধি উপেক্ষা করেছিলেন এক জন। কিন্তু ফুটবলের মেঠো উত্তেজনায় সব কাটাছেঁড়ার দাগ মিলিয়ে গেল।

শনিবার বিকেলে ইস্টবেঙ্গল মাঠে লিগের শেষ ম্যাচটা জেতার মুহূর্তে বেহালার দুই জাঁদরেল পুজোকর্তা দু’জনকে জড়িয়ে ধরলেন।

তিন বছর ধরে শহরের এ এক চেনা চিত্রনাট্য। থিম যুদ্ধে পরস্পরকে এক ছটাক জমি ছাড়তে নারাজ বেহালার ২০-২২টি পুজো কমিটিই ফুটবলের টানে ইদানীং মহাজোটে সামিল। ক্লাবের নাম বেহালা সাংস্কৃতিক সম্মিলনী বা বিএসএস স্পোর্টিং ক্লাব। দল বেঁধে শীতকালীন ধ্রুপদী সঙ্গীতের আসর আয়োজন ছাড়াও, ময়দানের এক তুখোড় ফুটবল দল তাঁরা গড়ে তুলেছেন। পুজোর সময়কার ‘যুদ্ধং দেহি’ মেজাজ ফিকে, ময়দানি লিগ ফুটবলের খেলা শুরু হতেই।‘আজ দু’গোলে জিতেছি’ কিংবা ‘কাল টাফ ম্যাচ, মাঠে আসছিস তো’— ‘মেসেজ’-এর ডাকে বন্ধুরা ঝগড়া ভুলে অবধারিত হাতে হাত রাখবেন।

তখন দেখলে কে বলবে, মাসখানেক আগেই পুজোর হোর্ডিং ও গেটের এলাকা নিয়ে পাশাপাশি পাড়ায় ‘সূচ্যগ্র মেদিনী’ ছাড়তেও এই লোকগুলোই প্রায় লাঠালাঠি করে বসছিলেন। এমন ক্লাব কর্মকর্তাদের দেখে তাজ্জব সভাপতি পার্থ চট্টোপাধ্যায় বা মুখ্য উপদেষ্টা শোভন চট্টোপাধ্যায়ের মতো নেতা-মন্ত্রীরাও। তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘এই তো আপনারাই রাত-দিন ঝগড়া করেন, হঠাৎ কোন ম্যাজিকে সব শোধবোধও করে ফেলেন!’’

বাস্তবিক বেহালা ক্লাবের নির্মাল্য পাণ্ডা, বড়িশা ক্লাবের পার্থ গঙ্গোপাধ্যায়, বড়িশা যুবকবৃন্দের দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়, স্টেট ব্যাঙ্ক পার্ক সর্বজনীনের সঞ্জয় মজুমদার বা নূতন দলের সন্দীপন বন্দ্যোপাধ্যায়রা ফুটবলের নামে হরিহর-আত্মা। পুজো কমিটির ফুটবল দল হয়ে ওঠা দুর্লভ ঘটনা। কেউ ফি সকালে স্ট্যু পাঁউরুটির টিফিন নিয়ে ইউনিভার্সিটি মাঠে টিমের প্র্যাকটিসে ছুটছেন, কেউ ক্লাবের ভাঁড়ার সামলাচ্ছেন, কেউ বা শাঁসালো স্পনসর ধরে আনছেন— নিখুঁত টিমওয়ার্ক যাকে বলে। ক্লাব সম্পাদক সন্দীপনবাবু হাসছেন, ‘‘এখনও অবধি অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট হয়নি। বরং পুজোর প্রতিযোগিতার মতো ফুটবলেও বেহালা গোটা কলকাতাকে ঘোল খাওয়াচ্ছে।’’

কী রকম? ২০১৫-সালে তৃতীয় ডিভিশন লিগে খেলতে নামার পরে ঈর্ষণীয় রেকর্ড দলটার। শুরুর তিন বছরেই লিগ জয়ের হ্যাটট্রিক! তৃতীয় ও দ্বিতীয় ডিভিশন লিগ জেতার পরে এ দিন প্রথম ডিভিশনের শেষ ম্যাচে তালতলা দীপ্তি সংঘকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফের চ্যাম্পিয়ন বিএসএস। পরের বছর কলকাতা ফুটবল লিগের প্রিমিয়ার ডিভিশনে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে খেলবে দলটা। বেশ কয়েক বছর আগে ময়দানে বড় দলের সঙ্গে লড়ত বেহালা ইয়ুথ ক্লাব। তারা এখন তৃতীয় ডিভিশনে খেলে। বিএসএস-এর কর্তারা বলছেন, ‘‘থিম পুজোয় কলকাতার সেরা শিল্পীদের ধরে এনে বেহালার পুজোর ছবিটা পাল্টে দিয়েছি! ফুটবলেও পরিকল্পনামাফিক সেরা প্রতিভাদের ধরে এনেই সাফল্য।

গত দু’দশকে পুজোর সাজসজ্জার উৎকর্ষে গোটা কলকাতা মায় বাংলাকেই নিজেদের এলাকায় টেনে আনতে সফল বেহালা। সেরা পুজোগুলোর প্যাকেজ নিয়ে চালু হয়েছে বিজ্ঞাপনী বুলি, বেহালার পুজো, কলকাতার গর্ব। এ বার ফুটবল-গর্বে গদগদ পুজোকর্তারা ভাবছেন, বিজয়া ও লিগ জয়ের মিষ্টিমুখ দু’টোই একযোগে সেরে ফেলা যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Football match Durga Puja Organisers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE