ফাইল চিত্র।
দুর্গাপুজোর বাকি আর মাত্র ১২ দিন। করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ে এমনিতেই আশঙ্কার শেষ নেই। কিন্তু পুজোর মুখে কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের চিন্তা বাড়িয়েছে ঘন ঘন নিম্নচাপ আর ঘূর্ণাবর্ত। এমন চললে সময়ে কাজ শেষ হবে কী ভাবে, সেটাই উদ্বেগে রেখেছে তাঁদের। তবে এরই মধ্যে আশার আলো দেখাচ্ছে বিদেশ থেকে বরাত পাওয়া প্রতিমার সংখ্যা। শিল্পীরা জানাচ্ছেন, বিদেশ থেকে বরাত পাওয়া প্রতিমার নিরিখে গত বছরের তুলনায় এ বছর তাঁদের আয় দ্বিগুণ বেড়েছে। আর শেষ মুহূর্তে স্থানীয় বায়নাও এসেছে বেশি।
প্রায় চারশো মৃৎশিল্পী কুমোরটুলিতে। এখানে কাজও করেন তিন হাজারের মতো কারিগর। কিন্তু হাতেগোনা কয়েক জন শিল্পীর প্রতিমাই বিদেশে যায়। ওই শিল্পীদের মতে, এ বছর বিদেশ থেকে প্রতিমার বায়না অনেক বেড়েছে। ২০১৯ সালে শুধু কুমোরটুলি থেকেই বিদেশে প্রতিমা গিয়েছিল ৬৮টি। গত বছর সেই সংখ্যা কমে হয় ১৮। চলতি বছরে ৪০টি প্রতিমার বরাত এসেছে।
পেশায় তথ্যপ্রযুক্তি ইঞ্জিনিয়ার অভিজিৎ সাহা বার্লিন থেকে বললেন, ‘‘গত বছর করোনার জন্য সে ভাবে পুজো হয়নি। ঠাকুরও নিয়ে যাইনি। এ বার মিন্টু পালের তৈরি
প্রতিমা মাস দুয়েক আগে জাহাজে কলকাতা বন্দর থেকে রওনা
দিয়েছিল। সম্প্রতি এসে পৌঁছেছে।’’ বিদেশ থেকে কুমোরটুলির শিল্পীদের কাছে প্রতিমার বায়না আসা শুরু হয় জানুয়ারি নাগাদ। সেখান থেকে প্রাপ্ত মোটা অঙ্কের অর্থমূল্যই তাঁদের বছরভর আয়ের উৎস, জানাচ্ছেন শিল্পীরা। ‘কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সংস্কৃতি সমিতি’র সম্পাদক বাবু পাল বলেন, ‘‘বিদেশ থেকে আসা প্রতিমার বায়না এ বছর বাড়ায় আর্থিক ক্ষতি কিছুটা সামলেছি। সংক্রমণের আশঙ্কায় এ বারেও তো বায়না আসছিল না।’’
তবে সংক্রমণ কমতে থাকায় রথের পরপরই কুমোরটুলিতে প্রতিমা তৈরির বরাত আসতে শুরু করেছিল। তার মধ্যেই নিয়ম মেনে পুজো করার কথা নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই দুইয়ে মিলে গত কয়েক সপ্তাহে ‘তৈরি প্রতিমা’র বায়না অনেক বেড়ে গিয়েছে। রথের পর থেকে একচালার সাবেক প্রতিমার চাহিদাও গত বছরের তুলনায় যথেষ্ট বেশি। স্বভাবতই কিছুটা হলেও তৃপ্ত মৃৎশিল্পীরা। তবে এরই মধ্যে ঘন ঘন বৃষ্টিতে নাজেহাল তাঁরা। এখন এক-এক জনের কাছে দিনে গড়ে আটটি বায়না আসছে। কলকাতা, শহরতলি থেকে তো ফোনেও বরাত দিচ্ছেন অনেকে। ‘‘প্রতিমা তৈরি তো জামাকাপড় সেলাই করা নয়, যে রাতারাতি বানিয়ে ফেলব!’’ কাজের ফাঁকেই বলে উঠলেন এক শিল্পী। একটা প্রতিমা গড়তে অন্তত এক মাস সময় লাগে। হাতে সেই সময় না থাকায় অনেকেই বড় ঠাকুর গড়ার বরাত ফিরিয়ে দিচ্ছেন।
কুমোরটুলি থেকে বিদেশে সবচেয়ে বেশি যায় কৌশিক ঘোষের গড়া প্রতিমা। ২০১৯ সালে তাঁর গড়া প্রতিমা গিয়েছিল ৩৬টি। গত বছর ৯টি। এ বার যাচ্ছে ১৮টি। বিদেশ থেকে সুবল পাল, মিন্টু পালের তৈরি প্রতিমার বরাতও গত বছরের তুলনায় বেড়েছে বলে জানিয়েছেন দুই শিল্পী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy