Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

শেষ মুহূর্তে কী হল, খোঁজ রেকর্ডারের

রবিবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ হুগলির গুড়াপ থেকে কলকাতার দিকে আসার সময়ে ডোমজুড়ে ওই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে।

পরীক্ষা: ঘটনাস্থলে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। সোমবার ডোমজুড়ের পাকুড়িয়া সেতুতে। নিজস্ব চিত্র

পরীক্ষা: ঘটনাস্থলে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। সোমবার ডোমজুড়ের পাকুড়িয়া সেতুতে। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস দাশ
শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৮ ০২:৩৬
Share: Save:

দুরন্ত গতিতে ছুটে চলা ফেরারির সামনে কি কোনও বাধা পড়েছিল? গাড়িটির গতি ছিল তখন ঘণ্টায় প্রায় ১৬০ কিলোমিটার। আর সেই কারণেই তিন লেনের সেতুর মাঝের লেন থেকে প্রায় ২১০ ফুট পিছলে গিয়ে গাড়িটি সজোরে ধাক্কা মেরেছিল ডোমজুড়ের পাকুড়িয়া সেতুর ডান দিকের গার্ডওয়ালে। রবিবার সকালের ওই দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে এসে এমনই ধারণা ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের। সোমবার ওই দলের নেতৃত্বে থাকা সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ওয়াসিম রাজা বলেন, ‘‘গাড়িটির সামনে কোনও বাধা এসে পড়েছিল। কী ধরনের বাধা, তা তদন্তসাপেক্ষ। কিন্তু এই বাধার জন্যই চালক ব্রেক কষেছিলেন। আর ওই গতিতে ব্রেক কষাতেই গাড়িটির চাকা ২১০ ফুট পিছলে গিয়ে সজোরে সেতুর দেওয়ালে ধাক্কা মারে।’’

রবিবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ হুগলির গুড়াপ থেকে কলকাতার দিকে আসার সময়ে ডোমজুড়ে ওই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত হন ফেরারির চালক শিবাজী রায় ও তাঁর পাশের সিটে বসা আসনা সুরানা। আসনা তাঁর এক বন্ধুর কন্যা। শিবাজীবাবুকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আসনা এখনও কলকাতারই এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি, প্রায় চার কোটি টাকা দামের ওই গাড়িটিতে এত স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে এই প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। প্রথমে মনে করা হয়েছিল, উল্টো দিক থেকে কোনও যানবাহন এসে পড়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। পরে হাওড়া গ্রামীণ পুলিশের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, পাকুড়িয়া সেতুর ওই রাস্তা একমুখী। সেখান দিয়ে উল্টো দিকে গাড়ি আসার কোনও সম্ভাবনা নেই। তা হলে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটল কী করে?

এই প্রশ্নের উত্তর পেতেই ঘটনার পরে গাড়িটির ফরেন্সিক পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ। সোমবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ওয়াসিম রাজার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি ফরেন্সিক দল হাওড়ার ডোমজুড় থানায় আসেন। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে তাঁরা গাড়িটিকে পরীক্ষা করেন। পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হয় গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। এর পরে তাঁরা পাকুড়িয়া সেতুতে যান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে।

কিন্তু প্রশ্ন হল, ‘ক্যালিফর্নিয়া টি মডেল’-এর ফেরারিতে যে ‘ইভেন্ট ডেটা রেকর্ডার’ বা ইডিআর থাকে, সেটি কি পরীক্ষার জন্য উদ্ধার করা হয়েছে? বিমানের ব্ল্যাক বক্সের মতো ওই গাড়িতে দুর্ঘটনার আগে ঠিক কী ঘটেছিল বা কী কথাবার্তা হয়েছে, তার ভিডিয়ো এবং অডিয়ো পাওয়া যেতে পারে ওই ইডিআর থেকে।

ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ ওয়াসিম রাজা বলেন, ‘‘দুর্ঘটনায় গাড়িটির প্রচুর যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কিছু সংগ্রহ করা হয়েছে। তার মধ্যে ইডিআর রয়েছে কি না, তা পরিষ্কার হয়নি। তবে ইডিআর খুঁজে পেলেও সেখান থেকে তথ্য বার করা কঠিন। কারণ, ওই যন্ত্রটি পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করা থাকে। যে পাসওয়ার্ড জানেন একমাত্র গাড়ির মালিক আর ফেরারি সংস্থা। কিন্তু গাড়ির মালিক মারা যাওয়ায় তা কতটা সম্ভব, জানি না।’’

ফরেন্সিক সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনার পরে ওই গাড়ির তিনটি এয়ারব্যাগ খুললেও একটি খোলেনি। গাড়িটির যে স্পিডোমিটার পাওয়া গিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, দুর্ঘটনার সময়ে গতি ছিল ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার। কারণ, দুর্ঘটনার পরে কাঁটা ওই জায়গাতেই থেমে গিয়েছে। অর্থাৎ, গাড়ির গতি দুর্ঘটনার আগে যে আরও বেশি ছিল, তা পরিষ্কার। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, গাড়িটি দুর্ঘটনার আগে কমপক্ষে ১৬০ কিলোমিটার গতিতে ছুটছিল। তাঁদের তদন্তে এটাই উঠে এসেছে। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা এ দিন ডোমজুড় থানা থেকে সোজা পাকুড়িয়া সেতুতে চলে যান। সেখানে ঘটনাস্থল থেকে গাড়িটির সামনের অংশের ভাঙা যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করেন তাঁরা। যেখান থেকে গাড়িটি ব্রেক কষেছিল, তা ফিতে নিয়ে মাপজোক করা হয়।

এ দিন এক ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘‘উদ্ধার হওয়া যন্ত্রাংশের মধ্যে ইডিআর আছে কি না, জানি না। সেটি পাওয়া গেলে ইডিআর-সহ আরও কয়েকটি ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশের থেকে তথ্য পেতে ফেরারির সঙ্গে যোগাযোগ করব। তা না হলে দুর্ঘটনার কারণ পরিষ্কার হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE