Advertisement
E-Paper

বদলায়নি বন্ধুত্বের রেওয়াজটা

একটা জনবসতি, তার মধ্যেই রয়েছে সকলকে এক সঙ্গে ধরে রাখার এক আশ্চর্য মায়াবী শক্তি। এরই নাম পাড়া। আমার বাসস্থান কিংবা মাথাগোঁজার ঠাঁই যাই বলি না কেন! ভাবতে অবাক লাগে আমি তো কখনও পাড়াটাকে আপন করে নিইনি। বরং কখন জানি না, সেই আমাকে আপন করে নিয়েছে।

বিকাশ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৭ ০১:১৮
আলাপচারিতা: সকালের অবসরে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

আলাপচারিতা: সকালের অবসরে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

একটা জনবসতি, তার মধ্যেই রয়েছে সকলকে এক সঙ্গে ধরে রাখার এক আশ্চর্য মায়াবী শক্তি। এরই নাম পাড়া। আমার বাসস্থান কিংবা মাথাগোঁজার ঠাঁই যাই বলি না কেন! ভাবতে অবাক লাগে আমি তো কখনও পাড়াটাকে আপন করে নিইনি। বরং কখন জানি না, সেই আমাকে আপন করে নিয়েছে।

পাড়ার নাম চেতলা রোড। টালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে মহাবীরতলা শুরু হয়ে চেতলা রোড সোজা গিয়ে খাল পেরিয়ে পাকদণ্ডীর মতো ঘুরে মিশেছে চেতলা হাট রোডে। বিশাল এই রাস্তার একাংশই আমার পাড়া। ও দিকে চারু অ্যাভিনিউ দিয়ে এসে, টালিগঞ্জ রোড আর টালিনালা পেরিয়ে পাড়ার রাস্তাটা টালি নালার ধার বরাবার সোজা এগিয়ে গিয়েছে। আগে থাকতাম কাছেই হরিদাস দাঁ রোডে। গত তেরো বছর ধরে রয়েছি এখানে।

এক কালের আটপৌরে মধ্যবিত্ত পাড়াটা আজ অনেকটাই বদলেছে। এক কালে এখানে সব ক’টাই ছিল একতলা কিংবা দোতলা বাড়ি। একে একে বাড়ির জায়গায় মাথা তুলেছে বহুতল। ফলে আসছেন কত নতুন মানুষ। কেউ কেউ পুরনো বাসিন্দাদের সঙ্গে দিব্য মিলেমিশে গিয়েছেন। ভাল লাগে যখন নতুনরাও মাঝেমাঝে এগিয়ে এসে আলাপ করেন। এ ভাবেই গড়ে ওঠে নতুন বন্ধুত্ব।

তবে পরিবর্তনের হাওয়া এ পাড়াতেও লেগেছে। বৃহত্তর পাড়ায় ক্রমেই গ্রাস করছে আত্মকেন্দ্রিকতা। সকলেই কম-বেশি গোষ্ঠীবদ্ধ ভাবে থাকতে ভালবাসেন। কমে আসছে মানুষে মানুষে যোগাযোগও। সত্যি বলতে কী, কমেছে মানুষের মেলামেশার সুযোগও। তবে ভাগ্য ভাল পাড়ার যে অংশে আমারা রয়েছি, সেখানে আজও রয়েছে প্রতিবেশীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক। কিন্তু এখানেও এখন সকাল সকাল চোখে পড়ে গাড়ি ধোয়ার দৃশ্য। কিছু মানুষ নিয়মিত বেরোন প্রাতর্ভ্রমণে। তাঁদের কেউ কেউ পাড়ার চায়ের দোকানে ধোঁয়া ওঠা ভাঁড়ে চুমুক দেন।

অন্যান্য পাড়ার মতোই এখানেও মিলছে প্রয়োজনীয় নাগরিক পরিষেবা। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের উদ্যোগে এলাকার উন্নয়ন হয়েছে। দু’বার করে রাস্তা পরিষ্কার আর জঞ্জাল সাফাইয়ের জন্য পাড়াটা এখন আগের চেয়ে পরিচ্ছন্ন থাকছে। এখন পাড়াটা রাতেও ঝলমলে থাকায় আগের চেয়ে সকলে নিরাপদ বোধ করেন। এখানে নেই মশার উপদ্রব কিংবা জল জমার সমস্যা। রাতের দিকে রাস্তায় প্রচুর গাড়ির পার্কিং থাকলেও যাতায়াতে কোনও অসুবিধা হয় না। আমাদের পাড়াটা এক কথায় শান্তিপূর্ণ। তবে অন্য কিছু সমস্যা আছেই। যেমন বেপরোওয়া বাইক চলাচল। টালিনালার উপরের কংক্রিটের ব্রিজ দিয়ে যে ভাবে তীব্র গতিতে ছুটে আসে বাইক, তাতে যে কোনও সময়ে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

নানা পরিবর্তনের মাঝেও এখানে অপরিবর্তিত পাড়ার আড্ডাটা। রকে নয়, আড্ডা বসে একটি গ্যারাজে। তাতে জড়ো হন নানা বয়সের মানুষ। চলে তাসের লড়াইও। এই আড্ডাটা আছে বলেই একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগটাও আছে। দেখতে দেখতে কমেছে এ পাড়ায় খেলাধুলোর চলটাও। এখন ছুটির দিনে ছোটদের ক্রিকেট, ফুটবল খেলতে দেখা গেলেও নিয়মিত সে সবের চল নেই। খেলা নিয়ে অতীতের সেই উদ্দীপনা আজ আর নেই। মাঝেমাঝে রাসবাড়ির মাঠে কিছু ক্লাবের উদ্যোগে হয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা।

তবে বৃহত্তর এই পাড়ায় আমাদের আবাসনটিও ছোটখাটো একটি বললে খুব একটা ভুল হবে না। উৎসব-অনুষ্ঠানে এখানকার সকলে মিলে আনন্দে মেতে ওঠেন। আবাসনের লোকোদের সঙ্গে তাতে যোগ দেন আশপাশের মানুষও।

মনে পড়ে অতীতে এই টালিনালা দিয়ে যাতায়াত করত পণ্যবাহী নৌকা। এখন মজে যাওয়া সেই নালার হাল দেখে কষ্ট হয়। তবে জোয়ারের সময়ে এখনও ছোট ছোট নৌকা
যাতায়াত করে।

হারিয়ে গিয়েছে সকাল-দুপুরে পরিচিত সেই ফেরিওয়ালার ডাকও। এখন রেকর্ড করা ফেরিওয়ালার ডাক চলমান পণ্য গাড়ির মাইকে ধ্বনিত হয় পাড়ার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। স্মৃতির খাতায় নাম লিখিয়েছে পাড়ার রবীন্দ্র জয়ন্তী, বিজয়া সম্মিলনীও।

তবে এ পাড়ার একটা মজা এখনও আছে। এখানে রয়েছে প্রাচীন দু’টি মন্দির। পঞ্চাননতলার মন্দির এবং নবরত্ন মন্দির দেখতে ক্যামেরা হাতে করে ভিড় করেন বহু মানুষ। রোজই তাই এই এলাকায় দেখা মেলে নানা রকম লোকজনের।

লেখক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক

Friendship
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy