পাহারা দিতে লোক-লস্কর, পাইক-বরকন্দাজ কম নেই। হাতে অস্ত্রশস্ত্রও যথেষ্ট। কিছু ঘটলে প্রাথমিক ভাবে সামাল দেওয়ার জন্য। তবে পশ্চিমবঙ্গের সচিবালয় নবান্নের সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও সুসংহত করার প্রস্তাব বছর খানেক আগে দিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। যাতে কেউ হামলা করার আগে পাঁচ বার ভাবে। শেষমেশ হামলা হলেও যাতে ধাক্কাটা অল্পের উপর দিয়ে যায়। কিন্তু লালবাজার সূত্রেই জানা গিয়েছে, ওই ডজন খানেক প্রস্তাবের মধ্যে দু’-একটি ছাড়া আর কিছু কার্যকর করা হয়নি।
পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা দেশে জঙ্গি হামলার ব্যাপারে সম্প্রতি একাধিক সতর্ক বার্তা জারি করেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। এই প্রেক্ষাপটে নবান্নের সুরক্ষা নিয়ে কলকাতা পুলিশের বিশেষ বাহিনী বা স্পেশ্যাল ফোর্স উদ্বিগ্ন।
তাঁদের বক্তব্য, নবান্নের সদর দরজা বা ভিতরে মোতায়েন পুলিশের হাতে পর্যাপ্ত অস্ত্র থাকলেও নর্থ গেটের বাইরে, বিদ্যাসাগর সেতুর নীচে থাকা কলকাতা পুলিশ ও হাওড়া পুলিশের শুধু ঢাল-লাঠি। বিশেষ বাহিনীর প্রস্তাব, ওই পুলিশদের আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত করা হোক, না হলে বন্দুকধারী হামলাকারীরা অনায়াসে নর্থ গেট পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।
তা ছাড়া, বিদ্যাসাগর সেতুর একটি বাহুর যে অংশ থেকে নবান্নের সদর দরজা সরাসরি দেখা যেত, সেখানে দৃষ্টিপথ আটকাতে একটি আবরণ দেওয়া হয়েছে ঠিকই। তবে সেই আস্তরণের গা ঘেঁষে কোনও ট্রাক বা মিনি ট্রাক দাঁড় করিয়ে তার উপর থেকে অনায়াসে দেখা যাবে সদর দরজা। অস্ত্র তাক করাও অসম্ভব কিছু নয়। তাই মুখ্যমন্ত্রী বা কোনও ভিআইপি যখন ঢুকবেন-বেরোবেন, সেতুর ওই বেড়ার ধার ঘেঁষে সশস্ত্র পুলিশের গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
নবান্ন হাওড়ায় অবস্থিত হলেও সুরক্ষার মূল দায়িত্ব কলকাতা পুলিশের। রাজ্য সরকারের সদর দফতর মহাকরণ থেকে এখানে সরে আসা ইস্তক। তিন বা চার শিফ্টে কলকাতা পুলিশের প্রায় তিনশো অফিসার ও কর্মী নবান্নে মোতায়েন। ওই পুলিশদের প্রায় ৮৫ শতাংশই আগ্নেয়াস্ত্র বহন করেন।
এঁদের মধ্যে জঙ্গি হামলা মোকাবিলায় পারদর্শী ও বিশেষ প্রশিক্ষণ নেওয়া চার জন কমান্ডো একে ফর্টি সেভেন ও অটোম্যাটিক পিস্তল নিয়ে অষ্টপ্রহর পাহারায়। সেই সঙ্গে প্রতিটি শিফ্টে কমব্যাট ব্যাটালিয়নের অন্তত ১০ জন পুলিশ ইনস্যাস রাইফেল নিয়ে মোতায়েন রয়েছেন নবান্নের বিভিন্ন জায়গায়। এর বাইরেও এসএলআর, পিস্তল কিংবা রিভলভার নিয়ে নবান্নের নিরাপত্তায় বহাল আরও শতাধিক অফিসার ও পুলিশকর্মী।
লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘লোকবল বা অস্ত্রবল, কিছুরই কমতি নেই নবান্নের সুরক্ষায়। কিন্তু আর একটু বাঁধুনি দরকার। আমাদের কাছে সেই মর্মেই প্রস্তাব চাওয়া হয়েছিল।’’ নবান্ন সূত্রের খবর, বছর খানেক আগে পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা নবান্নের সুরক্ষা নিয়ে বিশেষ বৈঠক করেন। তার পরেই প্রস্তাব দিতে বলা হয় বিশেষ বাহিনীকে। ওই পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘বিশেষ বাহিনীর অফিসারেরা একটি গোটা দিন নবান্নের আনাচ-কানাচে ঘুরে এক ডজন প্রস্তাব তৈরি করেন। কিন্তু বিদ্যাসাগর সেতুর বাহুতে ওই আবরণ ছাড়া আর কোনও প্রস্তাব কার্যকর করা হয়নি।’’
কলকাতা পুলিশ বলেছিল, সেতুর উপরে পথ নির্দেশের চিহ্ন দেওয়া একটি স্তম্ভ বেয়ে নেমে নবান্নের সদর দরজার কাছে পৌঁছনো যায়। তাই, ওই পিলার পেঁচানো হোক কাঁটাতার দিয়ে। ভিআইপি-র গাড়ি সদর দরজার যেখানে থামে, সেখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসি ক্যামেরাও বসাতে বলা হয়। নিরাপত্তায় থাকা পুলিশদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ নিবিড় করার লক্ষ্যে আরও বেশি সংখ্যক ওয়্যারলেস সেট দেওয়ার বিষয়টিও ছিল ওই প্রস্তাবগুচ্ছে।
বেশ কয়েক জন মন্ত্রী ও বিধায়কের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রধারী রক্ষী থাকেন। ওই রক্ষীরা যাতে অস্ত্র নিয়ে নবান্নের ভিতরে না ঢোকেন, তা প্রস্তাবের অন্যতম ছিল। গাড়ি পার্ক করার জায়গার কাছে একটি ঘর তৈরি করে সেখানে ওই রক্ষীদের রাখার কথা বলা হয়েছিল। যুক্তি ছিল, দূরের জেলা থেকে আসা মন্ত্রী-বিধায়কের রক্ষীদের সঙ্গে মিশে কোনও হামলাকারী ঢুকে পড়তে পারে অটোম্যাটিক অস্ত্র নিয়ে।
কিন্তু প্রস্তাবগুলি কার্যকর করা হল না কেন? স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘কোনও বিশেষ কারণ নেই, স্রেফ গড়িমসি। এই ভাবে চলে যাচ্ছে, সমস্যা তো হচ্ছে না, তাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy