ফাইল চিত্র।
বাড়িতে পড়ে পা ভেঙেছিলেন সোদপুরের বাসিন্দা বছর পঁয়তাল্লিশের মৈনাক সরকার। প্লাস্টার খোলার পরেও কিছু সমস্যা হওয়ায় চিকিৎসক তাঁকে ফিজিয়োথেরাপি করার পরামর্শ দেন। এলাকায় পরিচিত এক থেরাপিস্টের কাছে যান তিনি। মৈনাকবাবুর অভিযোগ, প্রতিদিন দুশো টাকা করে এক মাস থেরাপি নিয়েও সমস্যা মেটেনি। উপরন্তু নতুন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। যেহেতু থেরাপিস্টকে টাকা দিয়ে কোনও রসিদ পাননি, তাই ক্রেতা সুরক্ষা আদালতেও অভিযোগ জানাতে পারছেন না তিনি।
এ ধরনের সমস্যার কথা মানছেন ফিজ়িক্যাল মেডিসিনের চিকিৎসক পুষ্পকেতু কোনার। তিনি বলেন, “ফিজিয়োথেরাপি নিয়ে মানুষের ভ্রান্ত ধারণার বড় কারণ যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা সেন্টার। যাদের বেশির ভাগেরই ডিগ্রিধারী ফিজিয়োথেরাপিস্ট নেই। অথচ মানুষ জানেনই না যে রীতিমতো জয়েন্ট দিয়ে ইন্টার্ন-সহ সাড়ে চার বছরের পাঠক্রমে ঢুকতে পারেন এক জন শিক্ষার্থী। পাশ করার পরে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব ফিজিয়োথেরাপি’ (আইএপি) থেকে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে পরিষেবা দেওয়ার অনুমতি মেলে।”
মৃত্যু-মুখ থেকে ফিরে আসা রোগীকে মেডিক্যাল রিহ্যাবিলিটেশন দিয়ে সুস্থ করা হয়। ফিজিয়োথেরাপি তারই একটি অংশ। তবে রোগীর সুস্থ হতে সঠিক থেরাপির জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি। —মানছেন ফিজ়িক্যাল মেডিসিনের চিকিৎসক মৌলিমাধব ঘটক। পুষ্পকেতুবাবুর মত অবশ্য অন্য। তাঁর মতে, কয়েক বছর আগে ইংল্যান্ডের ফিজিয়োথেরাপিস্টরা একটা পর্যায় পর্যন্ত নিজেরা প্রেসক্রিপশন করার অধিকার পেয়েছেন। এখানেও তেমন হওয়া জরুরি। কারণ, মফস্সলে ফিজ়িক্যাল মেডিসিনের চিকিৎসক দূর স্থান, প্রশিক্ষিত ফিজিয়োথেরাপিস্টই থাকেন না।
এ ছাড়া যাঁরা এই পেশায় আছেন তাঁদের অনেকেই হাতুড়ে। এমনকি ভুয়োও। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই রোগী বিভ্রান্ত হচ্ছেন— জানাচ্ছেন দুই চিকিৎসকই। ভুয়ো বা কোনও অভিযুক্ত ডাক্তারের বিরুদ্ধে চিকিৎসকদের সংগঠন ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু ফিজিয়োথেরাপিস্টদের কোনও কাউন্সিল না থাকায় সেই শুদ্ধিকরণ হয় না বলে দাবি ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র ফিজিয়োথেরাপিস্ট রিনা জানার। তাঁর মতে, ‘‘বহু বছর ধরে সরকারের কাছে কাউন্সিল তৈরির আবেদন জানিয়েও কেন্দ্র বা রাজ্য কোনও তরফেই কাজ হয়নি।’’ সূত্রের খবর, মুম্বই, দিল্লি, কেরল-সহ এ দেশেরই কয়েকটি রাজ্যে ফিজিয়োথেরাপিস্টদের পৃথক কাউন্সিল রয়েছে।
ফিজিয়োথেরাপি নিয়ে নতুন আশার কথা শোনাচ্ছেন কলেজ অব ফিজিয়োথেরাপি ভিআইএমএস, রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানের অ্যাসিস্ট্যান্ট কোর্স কো-অর্ডিনেটর জয়ন্ত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘প্রসূতিদের মধ্যে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তা নিরসনে প্রি-নেটাল ও পোস্ট-নেটাল ফিজিয়োথেরাপি করা হচ্ছে। এ জন্য মহিলা ফিজিয়োথেরাপিস্টের নিয়োগও বাড়ছে। মেদ কমাতে, সদ্যোজাতকে সুস্থ রাখতে এবং প্রসবের পরে পেট যাতে না ঝুলে যায় এবং পায়ের ব্যথা কমাতেই এই প্রচেষ্টা।’’
১৯৩৯ সালে শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সৈনিকদের চিকিৎসা করানোর জন্যই আধুনিক ফিজিয়োথেরাপির জন্ম বলে মানেন চিকিৎসকেরা। গত ষাট বছরে এ দেশেও ফিজিয়োথেরাপির প্রসার হয়েছে। যদিও তা শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে হয়নি বলেই দাবি। সেই শৃঙ্খলা আনার লক্ষ্যেই আজ, ৮ সেপ্টেম্বর সারা বিশ্বের সঙ্গে এ শহরেও রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠান, তাদের দয়ানন্দ হলে পালন করবে ‘বিশ্ব ফিজিয়োথেরাপি দিবস’। সেরিব্রাল পলসি আক্রান্ত শিশুদের জন্য ফিজিয়োথেরাপি এবং চেস্ট ফিজিয়োথেরাপি নিয়ে এক দিনের কর্মশালাও থাকছে সেখানে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy