Advertisement
E-Paper

আদৌ কিছু পাল্টাবে কি, প্রশ্ন প্রান্তিকদের

তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিদের বক্তব্য, গত কয়েক বছর ধরে কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নয়ন-সহ একাধিক অধিকার রক্ষায় ‘ট্রান্সজেন্ডার বিল’ নিয়ে লড়াই চলছে। এক দিকে তাঁদের প্রস্তাবিত বিল, অন্য দিকে কেন্দ্রীয় সরকারের বিল।

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ০২:০৩
অধিকার রক্ষার লড়াই কঠিন হবে বলে আশঙ্কায় রয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা। ফাইল চিত্র

অধিকার রক্ষার লড়াই কঠিন হবে বলে আশঙ্কায় রয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা। ফাইল চিত্র

ভোটের এই ফলাফল নিয়ে কি আপনারা চিন্তিত?

‘‘একেবারেই না। কারণ, যে দলই জিতে ক্ষমতায় আসুক, আমাদের জন্য তারা কিছু করবে না। তাই ও নিয়ে আর মাথা ঘামাই না আমরা।’’ বৃহস্পতিবার দুপুরে যখন ভোট গণনা চলছে, তখনই এই কথাগুলো বললেন সোনাগাছির যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মেন্টর ভারতী দে। সোনাগাছি এলাকায় ওই সংগঠনের অধীনে রয়েছেন সাত-আট হাজার যৌনকর্মী, যাঁরা বিগত এক দশক ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকের মর্যাদা পাওয়ার জন্য। কিন্তু সেই মর্যাদা মেলেনি। রাজনৈতিক দলগুলিও কোনও দিন এ ব্যাপারে পাশে দাঁড়ায়নি তাঁদের। এমনকি, ওঁদের স্বাস্থ্য, বাসস্থান কিংবা মর্যাদা দেওয়া নিয়েও কোনও সরকার বা রাজনৈতিক দল কখনও পরিকল্পনা করেনি। যার জন্য এ বার ভোটে ওই এলাকার যৌনকর্মীদের বেশির ভাগেরই ভোট পড়েছিল ‘নোটা’য়। ফল প্রকাশের পরেও তাই তাঁদের মধ্যে কোনও উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি। এক যৌনকর্মীর কথায়, ‘‘সমাজ তো আমাদের বরাবরই অন্য চোখে দেখে। রাজনৈতিক নেতারাও ঠেলে রেখেছেন এক কোণে। আমরা কেন ওঁদের ভোট দেব? কেনই বা ভোট নিয়ে মাথা ঘামাব?’’

সোনাগাছি ভোটের ফলাফল থেকে মুখ ঘুরিয়ে থাকলেও রাজ্যের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা অবশ্য রাজনীতির বিষয়ে অনেক বেশি সচেতন। আর তাই তাঁদের অনেকেই এই ভোট নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিদের বক্তব্য, গত কয়েক বছর ধরে কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নয়ন-সহ একাধিক অধিকার রক্ষায় ‘ট্রান্সজেন্ডার বিল’ নিয়ে লড়াই চলছে। এক দিকে তাঁদের প্রস্তাবিত বিল, অন্য দিকে কেন্দ্রীয় সরকারের বিল। কিন্তু এই ভোটে যে হারে বিজেপি-র প্রভাব বাড়ল, তাতে সেই লড়াই আরও কঠিন হয়ে পড়বে বলেই আশঙ্কা করছেন তাঁদের অনেকে।

অনেকে আবার মনে করছেন, কেন্দ্রে যে-ই থাক, এ রাজ্যে ধর্মনিরপেক্ষ কোনও দলের থাকা জরুরি ছিল। এমনই এক জন অপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘আমি মনে করি, এ রাজ্যের পক্ষে এই ফল ভাল লক্ষণ নয়। এই রাজ্যে কোনও দিনই জাতপাত বা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি হয়নি। এ বার সেই বিভাজনের নীতি এখানেও প্রয়োগ করা হবে। আর তা থেকে তৃতীয় লিঙ্গ বা প্রান্তিক মানুষ হিসেবে আমরাও কিন্তু বাদ পড়ব না।’’

তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার নিয়ে লড়াই করা আর এক জন রঞ্জিতা সিংহ। তাঁর বক্তব্য আবার অন্য। রঞ্জিতা বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গই প্রথম রাজ্য, যেখানে ‘ট্রান্সজেন্ডার ওয়েলফেয়ার বোর্ড’ তৈরি করা হয়েছিল। অথচ, এ রাজ্যে কোনও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ এখনও পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাননি।’’ শুধু কি তা-ই? এখনও পর্যন্ত তাঁদের কর্মসংস্থান, শিক্ষা কিংবা স্বাস্থ্যের জন্যও আলাদা কোনও ব্যবস্থা চালু হয়নি।

কর্মসংস্থান না থাকায় তৃতীয় লিঙ্গের অনেকেই রাস্তায় নেমে ভিক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ কেউ আবার চলে যাচ্ছেন যৌন পেশায়। তাই দেশের শীর্ষ আদালত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও কাজের জায়গা হোক কিংবা পড়াশোনা, স্বাস্থ্য—সব দিক থেকেই তাঁরা এখনও বঞ্চিত। রঞ্জিতার কথায়, ‘‘তামিলনাড়ু, ছত্তীসগঢ় বা ওড়িশার মতো রাজ্যে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ যে ভাবে সব দিকে এগিয়ে আসছেন, সেটা এ রাজ্যে এখনও নেই। এই রাজ্য প্রথম ওয়েলফেয়ার বোর্ড তৈরি করলেও তৃতীয় লিঙ্গের কাউকে ভোটের প্রার্থী করতে পারল না। এটা দুর্ভাগ্যজনক।’’ তিনি মনে করেন, ‘‘মহিলারা যেমন সংসদে গিয়ে নিজেদের কথা তুলে ধরতে পারেন, তেমনই এক জন তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি সেখানে গেলে তিনি নিজেদের অধিকারগুলি নিয়ে সরব হতে পারতেন। কিন্তু এ রাজ্যের কোনও রাজনৈতিক দলই তা ভাবেনি। ফলে দিল্লি বা বাংলা— যেখানে যে সরকারই আসুক, আমরা নিজেদের জন্য কাজ চাই।’’

শুধু তৃতীয় লিঙ্গ নয়, এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় মানসিক ভাবে অসুস্থদের পরিজনদেরও। মনোরোগ যে অন্য শারীরিক রোগের মতোই একটি ব্যাধি এবং চিকিৎসা করালে তা ভাল হয়, এই ধারণাই নেই অনেকের। আর সেই ধারণার অভাব থেকে রাজনৈতিক দলগুলিও মনে করে, মনোরোগের শিকার এক ব্যক্তি সরকার গঠনে কী ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে! কলকাতার পাভলভ হাসপাতালে সুস্থ হয়ে ওঠা অনেক রোগীই এ বার প্রথম ভোটাধিকার পেয়েছেন। কিন্তু তাঁদের জন্য আদৌ রাজনৈতিক দলগুলি কতটা ভাবনাচিন্তা করে, তা এখনও অজানা। মনোরোগীদের নিয়ে কাজ করা রত্নাবলী রায়ের বক্তব্য, ‘‘আমি সেই সরকারকে স্বাগত জানাব, যারা মানুষের মৌলিক অধিকারগুলির দিকে নজর দেবে এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি স্বয়ংসম্পূর্ণ করে শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের হাল ফেরাবে।’’

Election Results 2019 Lok Sabha Election 2019 লোকসভা ভোট ২০১৯ Marginalised Sector
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy