চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশনের সামনে থেকে প্রিন্স আনোয়ার শাহ মোড় যাওয়ার জন্য ট্যাক্সিতে উঠেছিলেন চারু মার্কেটের বাসিন্দা রমেশ দাস। আট কিলোমিটার দূরত্বের ওই রাস্তায় ট্যাক্সির মিটারে ভাড়া ওঠার কথা ১০০ টাকার কিছু কম-বেশি। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছে রমেশবাবু দেখলেন, ভাড়া হয়েছে ১২০ টাকা। তিনি তো তাজ্জব! রাস্তায় তেমন কোনও যানজটেও আটকে থাকেননি। তা হলে, এত মিটার উঠল কী করে? তবে কি মিটারের মধ্যেই ভূত! চালককে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি অভিযোগ ফুৎকারে উড়িয়ে দিলেন। বাধ্য হয়েই মোড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে থাকা এক পুলিশকর্মীর শরণ নিলেন রমেশবাবু। কিন্তু সেই পুলিশকর্মীর সাফ জবাব, মিটার কারচুপিতে তাঁদের নাকি কিছুই করার নেই। অভিযোগ জানাতে হবে পরিবহণ দফতরে।
রমেশবাবুর মতো এমন হয়রানি নতুন নয়। নতুন নয়, মিটারে কারচুপির ঘটনাও। অথচ এমন একটা অভিযোগ নিয়ে পুলিশের কার্যত কিছুই করার নেই। বড়জোর যাত্রীরা পুলিশের কাছে রাখা একটি ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে পারেন। তা চলে যাবে পরিবহণ দফতরে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে বছর ঘোরার পরে সেই ট্যাক্সির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিলেও নিতে পারে পরিবহণ দফতর। আর এই সুযোগেই দেদার মিটার কারচুপি করে পার পেয়ে যাচ্ছেন কলকাতার সিংহভাগ ট্যাক্সিচালক। সব কিছু জেনেও কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেন না পুলিশ এবং পরিবহণ দফতরের কর্তারা।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, শহরের ট্যাক্সি নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। কখনও যাত্রী প্রত্যাখ্যান, কখনও মিটারে কারচুপি। একের পর এক ঘটনায় জেরবার যাত্রীরা। যাত্রী প্রত্যাখ্যান নিয়ে দফতর নড়েচড়ে বসলেও এখনও তা পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। আর মিটারের কারচুপি? তা নিয়ে দফতরের কোনও নড়াচড়াই নেই। এক পরিবহণ কর্তার কথায়, ‘‘যাত্রী প্রত্যাখ্যানের ক্ষেত্রে কলকাতা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন যাত্রীরা। সার্জেন্টই হোক বা কনস্টেবল, সে ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করতে পারেন। যাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে চালকের ‘স্পট ফাইন’-ও হতে পারে। এমনকী, যাত্রী প্রত্যাখ্যান রুখতে কিয়স্কে পৃথক ভাবে পুলিশকর্মীদের ডিউটিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মিটারে কারচুপির ক্ষেত্রে পুলিশের কোনও ভূমিকাই নেই।’’