Advertisement
E-Paper

উবেরে ফের তরুণীর ‘শ্লীলতাহানি’

রাত সাড়ে ১০টা। বিধাননগরের এ ই ব্লকের ধারে একটি বাসস্টপের কাছে এসে গতি কমিয়ে দিল একটি লাক্সারি ট্যাক্সি। গাড়ির জানলা বন্ধ করে তখন এক তরুণীর হাত ধরে টানছেন চালক।

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৬ ০১:১৮

রাত সাড়ে ১০টা। বিধাননগরের এ ই ব্লকের ধারে একটি বাসস্টপের কাছে এসে গতি কমিয়ে দিল একটি লাক্সারি ট্যাক্সি। গাড়ির জানলা বন্ধ করে তখন এক তরুণীর হাত ধরে টানছেন চালক। কোনও মতে হাত ছাড়িয়ে গাড়ির দরজা খুলে লাফিয়ে বেরিয়ে আসেন তরুণী। ছুটতে থাকেন পিছন দিকে। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গিয়ে তাঁকে ধরে ফেলে ফের জোর করে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করতে থাকে চালক। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। এর মধ্যেই তরুণীর চিৎকার শুরু করলে চালক তাঁকে ছেড়ে দিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ে। ততক্ষণে রাস্তা থেকে উঠে দাঁড়িয়েছেন তরুণী। এ দিকে, পালানোর সময়ে গাড়ি দ্রুত গতিতে পিছিয়ে নিয়ে তাঁকে ধাক্কা মারার চেষ্টাও করে ওই চালক। কোনও মতে সরে গিয়ে পাশে একটি গ্রিন ভার্জে ঢুকে পড়েন তরুণী। আর দ্রুত গতিতে গাড়ি নিয়ে পালায় চালক।

ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরে, মঙ্গলবার এমনই অভিযোগ জমা পড়েছে বিধাননগর উত্তর থানায়। তখনই এই কথা জানতে পারে পুলিশ। কারণ অভিযোগ, ঘটনাস্থলের আশপাশে নজরে পড়েনি পুলিশের কোনও টহলদারি ভ্যান। এই ঘটনায় বিধাননগরের আইনশৃঙ্খলা ও নজরদারি নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা। যদিও পুলিশের দাবি, রাতে টহলদারিতে ছিল পুলিশ। ঘটনাচক্রে এই এলাকা খোদ বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্তের ওয়ার্ডের মধ্যেই পড়ে।

মঙ্গলবার রাতে অবশ্য ওই উবের চালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম সন্তু প্রামাণিক (২৮)। বালিগঞ্জের বাসিন্দা সন্তুকে বুধবার বিধাননগর আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়। উবেরের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই চালক এবং ওই তরুণীর যাত্রা সম্পর্কিত সব তথ্য পুলিশকে দিয়ে দিয়েছি। তদন্তে সব রকম সাহায্য করতে আমরা প্রস্তুত। তবে ওই চালকের সম্পর্কে খোঁজখবরে অতীতে অপরাধের তথ্যের হদিস পাইনি আমরা।’’

নিরাপত্তা ও নজরদারি জোরদার করা হয়েছে, বিধাননগর কমিশনারেট তৈরির পরে এমন দাবি অনেক বারই শোনা গিয়েছে। এমনকী বিধাননগরে রাতে যে ভাবে নজরদারি চলে, তাতে আগে একাধিক অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই রুখেছে পুলিশ। তা হলে এ দিনের ঘটনায় অপরাধ আটকানো তো দূর অস্ত্, খবরই পেল না কেন পুলিশ?

বিধাননগরের বিভিন্ন প্রবেশপথে তল্লাশি, গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পুলিশ মোতায়েন, টহলদারি ভ্যান, মোটরবাইক এবং সাইকেলে করে বড় রাস্তা থেকে ব্লকের অলিগলিতে নজরদারি চালানো হয়। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই প্রক্রিয়া নিয়মিত দেখা যায় না। তারই প্রমাণ মিলেছে সোমবার রাতে তরুণীর শ্লীলতাহানির ঘটনায়।

তরুণীর অভিযোগ, চালকের গতিবিধি শুরু থেকেই ছিল সন্দেহজনক। তিনি জানান, এক বন্ধুকে বেলেঘাটা মোড়ে নামিয়ে দেওয়ার পর থেকেই চালক খুব জোরে গাড়ি চালিয়ে বার বার বিভিন্ন গলিতে ঢোকার চেষ্টা করছিল। সেন মহাশয় বাসস্টপের কাছাকাছি গিয়ে তরুণী গাড়িচালককে এ ই ব্লকে গাড়ি ঘোরাতে বললেও চালক গাড়ি সোজা চালাতে থাকে। প্রতিবাদ করলে চালক তাঁকে ধর্ষণের হুমকি দেয় বলেও অভিযোগ। তার পরেই ওই ঘটনা।

প্রশ্ন উঠেছে, অনেকেই ঘটনাটি দেখেছেন। কিন্তু পুলিশের কাছে খবর পৌঁছয়নি। অথচ ঘটনাস্থল থেকে বিধাননগর উত্তর থানা খুব বেশি দূরে নয়। রাতে বেশ কয়েকটি গাড়ি থানা এলাকায় টহলদারিও চালায়। কিন্তু খবর পৌঁছয়নি। সেখানে শুধু পুলিশের নজরদারি নয়, তথ্যসংগ্রহ নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।

বাসিন্দাদের একটি সংগঠনের কর্মকর্তা কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, ‘‘নজরদারি যদি থাকে, তবে পুলিশ নিজে কেন ঘটনা জানতে পারল না? তবে আমরা বাসিন্দারাও সচেতন নই, তা আরও বড় বিপদ ডেকে আনছে।’’

বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘‘নজরদারির বিষয়টি নিশ্চিত ভাবেই দেখবে পুলিশ। তবে আমাদেরও একে অন্যের পাশে দাঁড়াতে হবে।’’

কিন্তু যাদের হাতে নিরাপত্তার দায়িত্ব, সেই পুলিশ থাকে কোথায়? সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত বিধাননগরের গোয়েন্দা প্রধান সন্তোষ পাণ্ডে বলেন, ‘‘রাতে টহলদারি ছিল। তবে নজরদারি আরও জোরদার করার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি, আরও বেশি করে সিসি টিভির নজরদারি বাড়ানোর চিন্তাভাবনাও চলছে।’’

যদিও পুলিশের একাংশের দাবি, ওই তরুণী খবর জানাতে দেরি করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, অভিযোগ না জানালে কি কোনও অপরাধের কথা জানতে পারবে না পুলিশ?

এ প্রশ্নের অবশ্য সদুত্তর মেলেনি।

Uber driver Molestation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy