Advertisement
E-Paper

‘শ্লীলতাহানি’র চেষ্টা, ঝাঁপ দিয়ে বাঁচলেন তরুণী

ভারী কিছু পড়ার শব্দে চমকে উঠেছিলেন আশপাশের বাড়ির বাসিন্দারা। বাইরে বেরিয়ে এসে দেখেছিলেন, দোতলা বাড়ির নীচে মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছেন হালকা নীল জিন্‌স, হলুদ টপ পরা বছর বাইশের এক তরুণী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৬ ০০:২৮
ধৃত তিন যুবক। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র

ধৃত তিন যুবক। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র

ভারী কিছু পড়ার শব্দে চমকে উঠেছিলেন আশপাশের বাড়ির বাসিন্দারা। বাইরে বেরিয়ে এসে দেখেছিলেন, দোতলা বাড়ির নীচে মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছেন হালকা নীল জিন্‌স, হলুদ টপ পরা বছর বাইশের এক তরুণী। আর তিন যুবক ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে মোটরবাইকে চেপে পালাতে চেষ্টা করছেন। সন্দেহ হওয়ায় এলাকার বাসিন্দারাই তাঁদের আটক করে আহত তরুণীকে হাসপাতালে নিয়ে যান। খবর দেওয়া হয় পুলিশকেও। পুলিশের দাবি, কিছুটা সুস্থ হওয়ার পরে ওই তরুণী জানান, ওই তিন যুবক মিলে তাঁর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করলে নিজেকে বাঁচাতে দোতলার বারান্দা থেকে ঝাঁপ দেন তিনি। এর পরেই ওই তিন যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ।

রবিবার রাতে লিলুয়ার কোনা পেয়ারাবাগানে ধৃতদের নাম সমীর নায়েক ওরফে ভোলা, সমরেশ বসু ওরফে নন্টাই ও ছোটন দাস। ওই তরুণী কোনও অভিযোগ দায়ের না করলেও পুলিশ ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ ধারা (শ্লীলতাহানি), ৩৫৪ ক-এর ২ নং ধারায় (অবাঞ্ছিত যৌন ইশারা) মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ জানায়, এদের মধ্যে ভোলার বাড়ি লিলুয়ার কোনা পেয়ারাবাগানে। বাকি দু’জন এবং ওই তরুণীর বাড়ি হুগলির রিষড়ায়।

ঠিক কী ঘটেছিল ওই দিন?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কিছু দিন ধরে রিষড়া স্টেশন-নতুনগ্রাম রুটের অটোচালক নন্টাইয়ের সঙ্গে পেশায় পরিচারিকা ওই তরুণীর ঘনিষ্ঠতা ছিল। নন্টাই ভাড়া থাকেন রিষড়ার নতুনগ্রাম এলাকায়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, রবিবার নন্টাই ফোন করে মেয়েটিকে জানান, তাঁকে হাওড়ায় এক বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যাবেন। সেই মতো দুপুরে ওই তরুণীকে মোটরবাইকে চাপিয়ে লিলুয়ায় ভোলার বাড়িতে যান তিনি। মাঝপথে আরও এক যুবককে বাইকে তুলে নেন। লিলুয়ায় ওই বাড়িটি আদতে ভোলার দিদির বাড়ি। একতলায় পাঁচ ঘর ভাড়াটের বাস। স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ভোলা দোতলায় একাই থাকেন। দিদি থাকেন অন্যত্র। তিনি শুধু মাসের শেষে ভাড়া তুলতে আসেন।

পুলিশের দাবি জিজ্ঞাসাবাদে ওই তরুণী জানিয়েছেন, সন্ধ্যা পর্যন্ত দোতলার একটি ঘরে তাঁর সামনেই তিন যুবকের মদের আসর চলে। তাঁকে মদ্যপানের জন্য জোরাজুরি করলেও তিনি রাজি হননি। তবে বিকেলে প্রচণ্ড তেষ্টা পাওয়ায় জল চাইলে তাঁকে একটি ঘটিতে জল দেন ভোলা। সেই জল খাওয়ার পরেই ভোলা তাঁকে কুপ্রস্তাব দেন। তাতে রাজি না হওয়ায় ছুরি বার করে ভয়ও দেখান।

পুলিশের দাবি, ওই তরুণী আরও জানান, এই ঘটনা দেখে নন্টাই প্রতিবাদ করলে দু’জনের মধ্যে হাতাহাতি বেধে যায়। বিপদ আঁচ করে তিনি দোতলার বারান্দায় গিয়ে প্রথমে নীচের রাস্তায় দাঁড়ানো দুই মহিলাকে ইশারায় ডেকে সাহায্য চান। ওই মহিলা পাড়ার লোকজন ডাকতে যান। যদিও ওই তরুণীর দাবি, ওই মহিলা লোকজন নিয়ে ফেরার আগেই আতঙ্কে দোতলা থেকে নীচে ঝাঁপ দেন তিনি।

পুলিশ জানায়, নীচে মাটির ঢিপি থাকায় প্রাণে বেঁচে যান ওই তরুণী। তবে মাটিতে পড়ার আগে পাশের পাঁচিলে ধাক্কা খাওয়ায় তাঁর মাথা ফেটে যায়। উপর থেকে ওই তরুণীর পড়ার আওয়াজেই ছুটে আসেন ওই বাড়ির ভাড়াটে এবং পড়শিরা। তাঁরাই রক্তাক্ত ও তরুণীকে উদ্ধার করে স্থানীয় কোনা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাঁর মাথায় চারটি সেলাই হয়।

সোমবার ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে এলাকার বাসিন্দা মালতী সামন্ত বলেন, ‘‘তখন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা হবে। দেখি, ভোলার বাড়ির বারান্দা থেকে একটা মেয়ে আমাকে ডাকছে। আমি এগিয়ে গেলে সে বলে, ‘আমাকে বাঁচান। ওরা আমাকে রেপ করে দেবে।’ এ কথা শুনে আমি পাড়ার লোকেদের ডাকতে যাই। তার মধ্যেই এই ঘটনা।’’

এলাকাবাসীর অভিযোগ, হোসিয়ারি সামগ্রীর ব্যবসায়ী ভোলার বাড়িতে অচেনা যুবকদের আসা-যাওয়া, খানাপিনা নিত্যদিনের ব্যাপার। মাঝেমধ্যেই রাত পর্যন্ত গানবাজনা চলে। স্থানীয় বাসিন্দা সৈকত নন্দী বলেন, ‘‘এই এলাকায় ঘরে ঘরে মদের বেআইনি ব্যবসা। তাই কোনও বাড়িতে কেউ কোনও অন্যায় করলে কারও বলার সাহস নেই। সেই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়েছে ভোলাও।’’

অন্য দিকে, ওই তরুণীর প্রাথমিক চিকিৎসার পরে রবিবার পুলিশই তাঁকে রিষড়ার বাড়িতে পৌঁছে দেয়। ঘটনার কথা জানাজানি হতেই নতুনগ্রাম এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। সোমবার সকালেই স্থানীয় বাসিন্দারা নন্টায়ের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান। ভাঙচুরের উপক্রমও হয়। দুপুরে শ্রীরামপুরের মহিলা থানার ওসি মনিরা বসু ওই তরুণীর বাড়ি গিয়ে কথা বলেন। ওই তরুণী বলেন, ‘‘ও যে আমার সঙ্গে এমন আচরণ করবে স্বপ্নেও ভাবিনি।’’

হাওড়ার পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন ওই তরুণীর উপরে যৌন হয়রানির কোনও প্রমাণ মেলেনি। তরুণীও কোনও অভিযোগ করতে চাননি। তবে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে শ্লীলতাহানির মামলা করে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে।’’ তবে ওই তরুণীকে দেওয়া জলে কোনও মাদক মেশানো হয়েছিল কি না, সোমবার রাত পর্যন্ত সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।

mostation girl crime crime against women
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy