Advertisement
E-Paper

হেলে পড়া বাড়ির আতঙ্ক নিয়েই মাধ্যমিকে মেয়ে

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি শুরু হতে চলা মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য এ ভাবেই তৈরি হচ্ছে তিলজলায় হেলে পড়া বাড়ির বাসিন্দা জেবা খাতুন। পরীক্ষায় ভাল ফল করা নিয়ে সে আশাবাদী।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:১৮
লড়াকু: হেলে পড়া বাড়িতে চলছে ভাঙার কাজ। জেবা খাতুন (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র

লড়াকু: হেলে পড়া বাড়িতে চলছে ভাঙার কাজ। জেবা খাতুন (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র

ভোর ভোর উঠে পড়া শুরু করতে হয়। বেলা বাড়লে ছেনি-হাতুড়ির ঠোকাঠুকির আওয়াজে আর পড়ার উপায় থাকে না। পাশের বাড়ির সিমেন্টের গাঁথনি ভাঙার কাজ চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। তার পরে বাবা-মা, চার বোন আর দুই ভাইয়ের সংসারে রান্না-খাওয়ার পর্ব মিটতে রাত হয়ে যায়। সকলের খাওয়া শেষে মাত্র কয়েক ঘণ্টা সময় পাওয়া যায় বই নিয়ে বসার!

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি শুরু হতে চলা মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য এ ভাবেই তৈরি হচ্ছে তিলজলায় হেলে পড়া বাড়ির বাসিন্দা জেবা খাতুন। পরীক্ষায় ভাল ফল করা নিয়ে সে আশাবাদী। বলছে, ‘‘পাশের বাড়িটা যে দিন আমাদের বাড়ির উপরে হেলে পড়ল, ভেবেছিলাম পরীক্ষায় বসতেই পারব না। তিন মাস বাড়ির বাইরে থাকতে হয়েছে। শেষ কয়েক দিন তো পাড়ার ক্লাবেও কাটিয়েছি। এখন বাড়িতে ফেরার পরে অন্তত একটু পড়তে বসতে পারছি।’’ জেবার মা শাহনাওয়াজ বেগমের অবশ্য চিন্তা যাচ্ছে না। তিনি বলছেন, ‘‘সকাল ন’টা-দশটা বাজতেই প্রোমোটারের লোক বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু করে দিচ্ছে। ওই আওয়াজে পড়া যায়? রাতেও ঘরের কাজ করতে হয় ওকেই। আমি সে ভাবে পারি না। মেয়ে কখন, কী ভাবে পড়ছে জানি না।’’

গত অক্টোবরে হঠাৎ খবর রটে যায়, তিলজলার শিবতলা লেনে একটি পাঁচতলা বাড়ি পাশের বাড়ির উপরে হেলে পড়েছে! ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যেরা দেখেন, ১২/১১ নম্বর বাড়িটি হেলে পড়েছে পাশের ১২/১২ নম্বর বাড়ির গায়ে। দ্রুত দু’টি বাড়িই ফাঁকা করে দেয় পুলিশ। ঘরছাড়া হয় জেবার পরিবার। শুরু হয় পুরসভা এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের টানাপড়েন। স্থানীয়েরা এক প্রোমোটারের নেতৃত্বে বাড়িটি নিজেরা ভাঙতে চাইলেও পুরসভা তা খারিজ করে দেয়। পরে পুরসভা ওই হেলে পড়া বাড়ির বিপজ্জনক অংশ ভেঙে বাকি অংশ ভাঙার কাজ প্রোমোটারের উপরেই ছেড়ে দেয়।

এক দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, বাড়িটি সম্পূর্ণ ভাঙা শেষ হয়নি। ফলে শুরু করা যায়নি পুনর্নির্মাণের কাজও। প্রোমোটার জানালেন, সকাল ১০টার পর থেকেই জোরকদমে বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু করছেন তাঁর লোকজন। তবে এই জোরকদমে কাজের আওয়াজেই আপাতত জেবার পড়াশোনা কার্যত মাথায় উঠেছে। তবু সে বলছে, ‘‘পরীক্ষার আগে ঘর ছেড়ে বাইরে পড়ে থাকার থেকে এটা অনেক ভাল।’’

জেবার এখন মনে পড়ছে, মাস চারেক আগে তাদের অনিশ্চিত জীবনের কথা। জেবার বাবা মহম্মদ আজম বাড়ি বাড়ি গরুর দুধ বিক্রি করেন। মা শাহনাওয়াজ গৃহবধূ। পাঁচ মেয়ে, দুই ছেলে এবং স্ত্রীকে নিয়ে শিবতলা লেনে ১৫ বাই ২০ ফুটের একটি ঘর ভাড়া করে থাকছিলেন আজম। বাড়ি হেলে পড়ার ঘটনায় হঠাৎ করেই গৃহহীন হয়ে পড়েন তাঁরা। স্থানীয়েরা তাঁদের থাকতে দিয়েছিলেন পাড়ার একটি ঘরে। সেখানকার বাসিন্দারা গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরে আসায় গত নভেম্বরে ওই আস্তানাও ছেড়ে দিতে হয় জেবাদের। পড়তে বসার জায়গা তো দূর, রাতে জেবাদের থাকার ব্যবস্থা হয় পাড়ার একটি ক্লাবে। অবশেষে মাসখানেক আগে নিজেদের ঘরে ফিরতে পেরেছেন জেবারা।

তিলজলার একটি উর্দু মাধ্যম স্কুলের পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে আজমের এখন একটাই আশা, ‘‘মেয়ে পরীক্ষাটা ভাল করে দিক। অনেক কষ্ট করে পড়াচ্ছি।’’ আর জেবা বলছে, পড়াশোনা করে সে কলেজে পড়াতে চায়। পরিবারকে ভাল বাড়িতে রাখতে চায়।

কোনওদিন যেন আর গৃহহীন না হতে হয়!

Madhyamik Inclined Building Demolotion Girl Panic
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy