Advertisement
E-Paper

পার্কিংই কি ভবিষ্যৎ, প্রশ্নে গীতাঞ্জলি

স্টেডিয়ামের পাশের শপিং মলে গাড়ি রাখতে হলে ঘণ্টায় ৩০ টাকা করে দিতে হয়। কিন্তু স্টেডিয়ামের ভিতরে গাড়ির পার্কিংয়ের খরচ ঘণ্টায় মাত্র দশ টাকা। ওই এলাকায় সস্তায় পার্কিংয়ের জন্য ‘গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম’-এর মৌখিক ভাবে নাম হয়ে গিয়েছে ‘গীতাঞ্জলি পার্কিং’।

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৭ ০১:১৯
এ ভাবেই পড়ে স্টেডিয়াম। নিজস্ব চিত্র

এ ভাবেই পড়ে স্টেডিয়াম। নিজস্ব চিত্র

কলকাতা শহরে খেলার মাঠের অভাব ঘোচাতে বছর সাতেক আগে প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হয়েছিল ‘বিশ্বমানের’ স্টেডিয়াম। কিন্তু সেই মাঠের ভাগ্যে সরকারি স্তরের প্রায় কোনও খেলাই জোটেনি। ক্লাব স্তরে ফুটবল-ক্রিকেটই বা শেষ কবে খেলা হয়েছে, তা-ও মনে করতে পারছেন না কর্মীরা। বর্তমানে সুলভে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা হিসেবেই ‘খ্যাতি’ অর্জন করেছে কসবার গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম।

স্টেডিয়ামের পাশের শপিং মলে গাড়ি রাখতে হলে ঘণ্টায় ৩০ টাকা করে দিতে হয়। কিন্তু স্টেডিয়ামের ভিতরে গাড়ির পার্কিংয়ের খরচ ঘণ্টায় মাত্র দশ টাকা। ওই এলাকায় সস্তায় পার্কিংয়ের জন্য ‘গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম’-এর মৌখিক ভাবে নাম হয়ে গিয়েছে ‘গীতাঞ্জলি পার্কিং’। যার ফলে এই মাঠের ভবিষ্যৎ নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে বিভিন্ন মহলে।

২০০৯ সাল থেকে বাইপাসের কাছে কসবার রাজডাঙ্গায় পিপিপি মডেলে এই স্টেডিয়াম তৈরি শুরু হয়। ২০১১ সালে রাজ্যে সদ্য পালাবদলের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্টেডিয়ামটির উদ্বোধন করেন। কিন্তু সেখানেই শেষ। তার পর থেকে ওই মাঠে সরকারি তরফে কোনও খেলাই হয়নি বলে জানাচ্ছেন সেখানকার কর্মীরা। ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

স্টেডিয়ামটির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ)। কেএমডিএ সূত্রের খবর, এই মাঠের আকৃতি তুলনায় ছোট হওয়ায় সরকারি স্তরে কোনও খেলা হয় না। সেটা কি আগে ভাবা হয়নি? কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। প্রতি বছর অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন স্কুলের স্পোর্টস, বেসরকারি সংস্থার খেলার জন্য স্টেডিয়ামটি ভাড়া নেওয়া হয়। কিন্তু বাকি সময়ে কার্যত ফাঁকাই পড়ে থাকে মাঠ। সংস্থার এক কর্মী বলেন, ‘‘ইন্ডোরে খেলার জন্যও ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু সে ভাবে প্রচারই হল না। শুধু পড়ে থেকেই স্টেডিয়াম তার গরিমা হারাচ্ছে।’’

স্টেডিয়ামে ঢুকতেই দেখা গেল, কয়েক শো গাড়ি পার্ক করা রয়েছে। খেলার জন্য মাঠ কী ভাবে বুক করা যায় জানতে চাইলে কিছুটা চমকেই গেলেন কর্মীরা। বলা হল, মাঠের শেষ প্রান্তে অফিসে এক কর্মীর কাছে ভাড়ার জন্য আবেদন করতে হয়। সেখানে গিয়ে শোনা গেল, সাম্প্রতিক কালে কোনও ক্লাবের তরফে খেলার জন্য এই মাঠ ভাড়া নেননি কেউই। সেই সঙ্গে সাফ জানিয়ে দেওয়া হল, ২১ জুলাইয়ের আগে এই মাঠটি বুক করা যাবে না।

কেন? ওই কর্মীর বক্তব্য, ‘‘২১ জুলাই তৃণমূলের সমাবেশে দূরের জেলা থেকে যাঁরা আসবেন, তাঁরা এখানেই থাকবেন। দু’-তিন দিন আগে থেকেই লোকেরা চলে আসেন। তাঁবু খাটিয়ে এই মাঠেই থেকে যান।’’ কর্মীরা জানান, সারা বছর খেলা ছাড়া নানা প্রদর্শনীতে ভাড়া দেওয়া হয় এই মাঠ। আর এ ভাবেই ধীরে ধীরে স্টেডিয়ামের চরিত্রটা বদলে যাচ্ছে বলে আক্ষেপ তাঁদের।

তবে কেএমডিএ এই তত্ত্ব মানতে নারাজ। এক কর্তা বলেন, ‘‘ ফুটবল বা ক্রিকেট খেলা হলে তবেই স্টেডিয়াম সার্থক, না হলে নয়— এটা বলা ঠিক নয়। বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ ওই মাঠে স্পোর্টস করে খুব খুশি। কারণ এখানে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা খুব ভাল।’’

কিন্তু এত পার্কিংয়ের ফলে স্টেডিয়ামের নিরাপত্তা নিয়েও তো বড়সড় প্রশ্ন উঠছে। এখানে যে গাড়ির পরীক্ষার কোনও ব্যবস্থাই নেই! কেএমডিএ-র ওই কর্তার সটান উত্তর, ‘‘নিরাপত্তা বাড়াতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

২০০৯ সালে এই স্টেডিয়াম তৈরির পরিকল্পনা করেন রাজ্যের তৎকালীন পুরমন্ত্রী সিপিএমের অশোক ভট্টাচার্য। বর্তমানে স্টেডিয়ামের এই হালে তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি খুবই দুর্ভাগ্যের। স্টে়ডিয়ামের চরিত্রটাই বদলে যাচ্ছে।’’

Gitanjali Stadium Parking lot গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy