Advertisement
E-Paper

পরিকাঠামো আছে কি? মেলে না জবাব, মেট্রো-বিপর্যয়ে ভগবানই ভরসা

২৭ কিলোমিটার পথের কোথাও কোনও বিপদ ঘটলে ওই পাঁচ জন কী করবেন, কী ভাবে মোকাবিলা করবেন, তা জানেন না খোদ মেট্রো রেলের কর্তারাই। তবে তাঁরা বলছেন, ‘ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স’ (এনডিআরএফ) এবং ন্যাশনাল সিকিয়োরিটি গার্ডস (এনএসজি)-এর সঙ্গে নিয়মিত মহড়া হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:১৯
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

সুড়ঙ্গ ও উড়ালপথ মিলিয়ে ২৭ কিলোমিটারেরও বেশি যাত্রাপথ। প্রতিদিন গড়ে সাত লক্ষ যাত্রীর যাতায়াত। তাঁদের যাত্রা নিরাপদ করতে মেট্রোর বিপর্যয় মোকাবিলা দলও আছে। যদিও সেই দলের সদস্যসংখ্যা সাকুল্যে পাঁচ! তাতে ট্র্যাফিক, সিকিয়োরিটি, ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল ও মেডিক্যাল বিভাগের নিচু তলার অফিসারেরা রয়েছেন।

২৭ কিলোমিটার পথের কোথাও কোনও বিপদ ঘটলে ওই পাঁচ জন কী করবেন, কী ভাবে মোকাবিলা করবেন, তা জানেন না খোদ মেট্রো রেলের কর্তারাই। তবে তাঁরা বলছেন, ‘ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স’ (এনডিআরএফ) এবং ন্যাশনাল সিকিয়োরিটি গার্ডস (এনএসজি)-এর সঙ্গে নিয়মিত মহড়া হয়। তাতে ওই পাঁচ জন ছাড়াও মেট্রোর অন্য কর্মীরা থাকেন। তাতে লাভ হয় কি? সেটা অবশ্য স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না মেট্রোর মুখপাত্র ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর জবাব, কয়েক মাস অন্তর ওই পাঁচ জন বৈঠক করেন। তাঁরা নানা সুপারিশও করেন। তার পর? ইন্দ্রাণীদেবীর মুখে কুলুপ। বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুলিশ ও সেনা আধিকারিকেরা বলছেন, পাঁচ জনের কমিটি তো মাথায় থাকবে। কিন্তু এই ধরনের পরিষেবার ক্ষেত্রে নিচু তলার কর্মীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার। অপ্রশিক্ষিত ও অদক্ষ কর্মী উদ্ধারে নামলে বিপদের আশঙ্কা বরং আরও বা়ড়ে।

মেট্রোয় কি নিচুতলার কর্মীদের সেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়? ইন্দ্রাণীদেবীর দাবি, প্রতি স্টেশনেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী রয়েছেন। তবে তাঁদের সংখ্যা জানাতে পারেননি তিনি।

মেট্রোর একটি সূত্রের দাবি, বিপর্যয় মোকাবিলায় অগ্নিরোধক জ্যাকেট, গ্যাস মুখোশ, অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। কিন্তু সেগুলি কি সব স্টেশনে থাকে? স্টেশনে মোতায়েন কর্মীরা কি সেগুলি ব্যবহার করতে পারেন? এই প্রশ্নেও মেট্রো কর্তাদের মুখে কুলুপ!

মেট্রোর সুড়ঙ্গ ও স্টেশনে আগুন নেভানোর যন্ত্রপাতি নিয়মিত পরীক্ষা করা হয় কি না, তারও উত্তর মেলেনি। মেট্রোর অবশ্য দাবি, সব পরিকাঠামো রয়েছে। বৃহস্পতিবার কর্মীরাই আগুন নিভিয়েছেন। কিন্তু আগুন যদি আরও ছড়াত? মেট্রো কর্তারা বলছেন, দমকল তো কিছু ক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে গিয়েছিল। একান্তে মেট্রোর এক প্রবীণ কর্তা অবশ্য মেনেই নিলেন, ‘‘এমন ঘটনা ঘটলে পুলিশ, দমকলই ভরসা।’’

আরও পড়ুন: রাজ্য-রেল বোর্ডের সাঁড়াশি চাপে মেট্রো

মেট্রোরই একাধিক সূত্র বলছে, আগুন নয়, বৃহস্পতিবার মারাত্মক হয়েছিল ধোঁয়াই। সেই ধোঁয়ায় চালকও চারপাশে কিছু দেখতে পাননি। যে কারণে প্রাথমিক কর্তব্য স্থির করতে গিয়ে তাঁকে ধন্দে পড়তে হয়। প্রশ্ন উঠেছে, এমন ঘটনা ঘটলে সুড়ঙ্গের ভেন্টিলেশন যন্ত্রের জোর বাড়িয়ে কি দ্রুত ধোঁয়া বার করার স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা রয়েছে? মেট্রো কর্তারা চুপ। তবে সূত্রের দাবি, ‘‘না, সেই ব্যবস্থা নেই।’’

মেট্রোর হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করেও যাত্রীরা কেন উপযুক্ত আশ্বাস পাননি, সেই প্রশ্ন উঠছে। মেট্রো কর্তৃপক্ষের দাবি, হেল্পলাইন নম্বর থেকে যাত্রীদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে। হেল্পলাইন নম্বর থেকে পাওয়া তথ্য কি কন্ট্রোলরুমের সঙ্গে আদান-প্রদান করা হয়? উঠছে সেই প্রশ্নও।

নিরাপত্তার দিক থেকে বিচার করলে কলকাতা মেট্রো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি নাশকতার ঘটনা ঘটে? শুধু তো জঙ্গিহানা নয়, তেজস্ক্রিয় ও রাসায়নিক অস্ত্রের বিপদও রয়েছে। তেমন কিছু হলে? মেট্রো কর্তাদের বক্তব্য, ‘‘তার জন্য এনএসজি, সেনা বাহিনী আছে। রেল সুরক্ষা বাহিনী তো সেই সব ক্ষেত্রে লড়তে পারবে না। তবে তারা মহড়ায় থাকে।’’

প্রশ্ন উঠেছে, সুরক্ষার এমন বেহাল দশা নিয়ে মেট্রো চলছে কী ভাবে? যে কোনও দিন তো আরও বড় বিপদ ঘটতে পারে! শুনে মেট্রোর এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘হরি যদি রাখে, মারবে কে?’’

Kolkata Metro Infrastructure NDRF NSG
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy