ত্রয়ী: গোপাল পুজোয় সেই তিন মূর্তি। কুমোরটুলিতে। নিজস্ব চিত্র
ছিল নিছক গোপাল পুজো। কিন্তু ইমরান, মোদী আর অভিনন্দন— এই ত্রয়ীর দৌলতে সেই পুজোই চড়চড় করে পারদ বাড়াল ভোট মরসুমে। যার জন্য এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলরের প্রশ্নের মুখেও পড়তে হল পুজো উদ্যোক্তাদের। ভোটের মুখে ‘প্রতীকী’ এমন থিম নির্বাচনকে অনেকেই উত্তর কলকাতার রাজনীতির ক্ষেত্রে অর্থবহ বলে মনে করছেন।
কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সমিতির মূল কার্যালয়ের সামনে দোল পূর্ণিমায় গোপাল পুজো দীর্ঘদিনের পরম্পরা। চলতি বছরে সেখানেই থিম করা হয়েছে ‘পুলওয়ামা কাণ্ড’! ছোট মণ্ডপের দেওয়ালে টাঙানো হয়েছে ওয়াঘা বর্ডারের ছবি-সহ ফ্লেক্স। ফ্লেক্সের সামনে বসানো হয়েছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের আদলে ছ’ফুট উচ্চতার মূর্তি। পাশেই রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আদলে তৈরি পাঁচ ফুট ১০ ইঞ্চির আর একটি মূর্তি। দুই রাষ্ট্রনেতার
মাঝখানে বসেছে পাকিস্তানের হাতে আটক হয়ে পরে মুক্ত ভারতীয় বায়ুসেনা অফিসার অভিনন্দন বর্তমানের পাঁচ ফুট ১০ ইঞ্চির আর একটি মূর্তি। ইমরানের মূর্তির উপরে ফ্লেক্সের গায়ে লাল কালিতে লেখা হয়েছে, ‘মোদীজি
আপনাদের অভিনন্দন ফেরত পাঠালাম’। মোদীর মূর্তির উপরে লেখা, ‘ইমরান তুমি আমাদের বীর জওয়ানদের মেরে ভাল করলে না’! তার সামনেই ভারতীয় জাতীয় পতাকা হাতে ছুটছে সাড়ে তিন ফুটের গোপাল!
পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা দীপক দে দাবি করলেন, ‘‘এ বার মোদীজির কাজই হিট। তিনি যে ভাবে পাকিস্তানকে যোগ্য জবাব
দিয়েছেন, তা মনে রাখার মতো। থিমে সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আমরা।’’ সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘বহু দিন ধরেই আমরা থিমের পুজো করার চেষ্টা করি। এ বারও করেছি। এতে রাজনীতি নেই।’’ পুজো যেখানে হয়েছে, সেই জায়গাটি কলকাতা পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। সেখানকার তৃণমূল কাউন্সিলর মিতালি সাহা বললেন, ‘‘কেন এমন থিম হয়েছে, আমি নিজে ফোন করে তা জানতে চেয়েছি। তাঁরা বললেন, এমনিই এই থিম করা হয়েছে।’’ সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, তৃণমূল বিরোধিতা বা অন্য কোনও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করার জন্য তাঁরা এমনটা করেননি। মিতালিদেবীর কথায়, ‘‘আমাদের কাজ নিয়ে ওঁদের কোনও অভাব-অভিযোগ নেই।’’
শ্যামপুকুর কেন্দ্রের বিধায়ক শশী পাঁজা বলছেন, ‘‘সেনাকে নিয়ে রাজনীতি বন্ধ করার কথা আমরা বারবার বলছি। নির্বাচন কমিশনও এ নিয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছে। ওই পুজোয় কেন এমন থিম করা হয়েছে, খোঁজ নেব। তবে এই থিম নিয়ে যাঁরা রাজনীতি করতে চাইছেন, তাঁরা অন্যায় করছেন।’’
উত্তর কলকাতার বিজেপি নেতা দীনেশ পাণ্ডে অবশ্য এতে একেবারেই অন্যায় কিছু দেখছেন না। তাঁর দাবি, ‘‘মোদীজিকে দেশের রক্ষক হিসেবে মেনে নিয়েছে মানুষ। গোপাল পুজোর থিমেও সেই মেনে নেওয়াই ফুটে উঠেছে। কেউ অকারণ প্রশ্ন তুলে বিশেষ সুবিধা করতে পারবেন না।’’
পুলওয়ামা হামলার পরে তা নিয়ে নানা আলোচনা ছড়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই সময়েই পাকিস্তানে আটক ভারতীয় বায়ুসেনা অফিসারের দাড়ির ছাঁট ‘ফ্যাশন ট্রেন্ডি’ হয়ে ওঠে। গত কয়েক মাসের খবর, বিক্রি বেড়েছে জংলা পোশাকেরও। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ওই পুলওয়ামা-কাণ্ডের কিস্সা তুলে ধরে যে প্রচার চলবে, তা-ও আন্দাজ করেছিলেন অনেকে। এলাকার এক বৃদ্ধ যদিও বললেন, ‘‘পুজোর থিমে কী যায়-আসে? যে বেশি কাজ করেছে, সে-ই জিতবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy