সন্ধান: কিছু কি অবশিষ্ট আছে, পোড়া দোকানে তারই খোঁজ। মঙ্গলবার, গোরাবাজারে। ছবি: শৌভিক দে।
বিমার রক্ষাকবচ থাকলে, তবু কিছু ব্যবসায়ী বেঁচে যেতেন। কিন্তু রবিবারের আগুনে গোরাবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ৯৫ শতাংশেরই কোনও বিমা নেই। ফলে একটি টাকাও ক্ষতিপূরণ পাবেন না তাঁরা। এই চিত্র অবশ্য শুধু গোরাবাজারেই সীমাবদ্ধ নয়। শহর ও শহরতলির অধিকাংশ বাজারেই দোকানিরা বিমা করান না বা করাতে পারেন না।
গোরাবাজারের অধিকাংশ দোকানিরই বক্তব্য, তাঁরা ছোট বা মাঝারি ব্যবসায়ী। বিমার বিষয়টি মাথাতেও আসেনি। তা ছাড়া, বিমা করাতে গেলে যে সমস্ত আবশ্যিক নথিপত্র থাকতে হয়, তা-ও অনেকের নেই। ফলে বিমা করানোর সুযোগ থেকেও তাঁরা বঞ্চিত।
বিভিন্ন সূত্রে খবর, আগুনে গোরাবাজারের যে সমস্ত দোকান পুড়ে গিয়েছে, তার মধ্যে বড় ও মাঝারি কয়েকটি মাত্র দোকানেরই বিমা করানো ছিল। বাকি অনেকের পাকা দোকান থাকলেও তাঁদের বিমা নেই। আর যে সমস্ত ব্যবসায়ী বাজারের মধ্যেই কাঠের বা দরমার অস্থায়ী দোকান বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছিলেন, আইনত তাঁদের বিমা করার সুযোগও বিশেষ নেই। গোরাবাজারে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ৯০ শতাংশই এই গোত্রের। ডিম, মাছ, আলু, আনাজ বা চালের বিক্রেতা। সেই অর্থে পাকা দেওয়ালের দোকানও নেই। বাজারের পুরনো টিনের বড় শেডের মধ্যেই ছোট ছোট ভাগ করা জায়গায় ব্যবসা করেন তাঁরা। কেউ খোলা চাতালে বসেই বছরের পর বছর ধরে ব্যবসা করছেন। কেউ আবার দোকানের সামগ্রী রাখার জন্য কাঠ আর টিনের অস্থায়ী ঘর বানিয়ে নিয়েছেন। দোকানের মালিকানা সংক্রান্ত পাকা নথিপত্রও নেই অনেকের। নেই পাকা ঠিকানাও। ফলে বিমা করানোর সুযোগও গোরাবাজারের ব্যবসায়ীদের নেই বললেই চলে।
ওই বাজারেই দোকান কানু রায়ের। তিনি এবং তাঁর মতো আরও কয়েক জন দোকানি জানালেন, বিমা তাঁদের কোনও কালেই ছিল না। ২০০৬ সালে যখন আগুন লেগেছিল, তখন এক বার বিমা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। তার পরে আবার সব থিতিয়ে যায়।
এক বেসরকারি বিমা সংস্থার আঞ্চলিক ম্যানেজার দেবজিৎ রায় জানান, বিমা করানোর প্রধান কয়েকটি শর্তের অন্যতম হল, তিন দিকে পাকা দেওয়াল-সহ দরজা থাকলে তবেই সেটি দোকান বলে ধরা হয়। ছাদ পাকা না হয়ে অ্যাসবেস্টস বা টিনের হলেও ক্ষতি নেই। দোকানটি ব্যবসায়ীর নিজের মালিকানাধীন, না ভাড়ায় নেওয়া, সেই নথি যেমন লাগে, তেমনই ট্রেড লাইসেন্স-সহ ব্যক্তিগত তথ্যও (আধার কার্ড, ভোটার কার্ড প্রভৃতি) প্রয়োজন হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থার আধিকারিকেরাও একই কথা জানাচ্ছেন। এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘খোলা চাতালে কেউ ব্যবসা করলে বিমা সংস্থার নিয়মে সেটিকে দোকান বলে ধরা হয় না। তবে কাঠের বা লোহার বিমের দোকান হলে অনেক সময়ে বিমা সংস্থার বিবেচনার উপরে নির্ভর করে, সেই দোকানের বিমা করানো যাবে কি না! তবে দমকলের লাইসেন্স সব সময়ে জরুরি হয় না বলেই জানালেন তাঁরা।
দমদম পুরসভা কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের এই সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন। দোকানের মালিকানা ও পাকা ঠিকানা-সহ বাজারের ফায়ার লাইসেন্স নিয়ে যে জটিলতা রয়েছে, তা সবাই একবাক্যে স্বীকার করেছেন। রবিবারের ঘটনার পরে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও পুরসভার তরফে সমাধানসূত্র খোঁজা শুরু হয়েছে বলেই খবর। নির্বাচনী বিধির কারণে দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান হরীন্দ্র সিংহ অবশ্য এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি।
এ দিন সকালে দমদম পুরসভা, পুলিশ এবং গোরাবাজারের দু’টি ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক হয়। সেখানে ব্যবসায়ীরা বাজারের পুনর্গঠন ও ক্ষতিপূরণের দাবি তোলেন। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ঢেলে সাজার দাবিও জানান তাঁরা। নির্বাচনী বিধির কারণে পুরসভা কোনও ঘোষণা না করলেও পুরকর্তারা জানান, ব্যবসায়ীদের দাবিদাওয়া বিবেচনা করা হচ্ছে। তাঁদের পাশেই আছে প্রশাসন। বাজার সমিতির কর্তারা জানান, এর পরে এ নিয়ে পর্যায়ক্রমে আরও বৈঠক হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy